গত বৃহস্পতিবার ১০ই ডিসেম্বর পদ্মা বহুমুখী সেতুর সর্বশেষ ৪১ তম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে এখন পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো সম্পূর্ণভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। তাছাড়া এর পাশাপাশি পুরো পদ্মাসেতু প্রকল্পের ৮১% কাজ এবং মুল সেতুর ৯১% কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু তৈরির মাধ্যমে পূরণ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশেরে ১৬ কোটি মানুষের এক সোনালী স্বপ্ন। বিশ্বের অন্যতম জটিল নদী পদ্মার ওপর সেতু তৈরির টেকনোলজি ও ইঞ্জিনিয়ারিং দিক থেকেও এক বিশাল অর্জন। বাংলাদেশের পদ্মাসেতু ইতিমধ্যেই নতুন তিনটি বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। যে সফলতার পেছনে একমাত্র আয়রন লেডী শেখ হাসিনার জেদকেই প্রাধান্য দেয়া চলে।
প্রথমত, পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে। এসব পাইল তিন মিটার ব্যাসের। বিশ্বে কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে পাইলিং করা প্রয়োজন হয়নি। এটি পদ্মা সেতুর একটি বিশ্ব রেকর্ড।
দ্বিতীয়ত, পদ্মা সেতুর ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। আবার রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার প্রবল ভূমিকম্পেও এটিকে সাবলীল্ভাবে টিকে থাকার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে। এটিও কিন্তু পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় বিশ্ব রেকর্ড।
তৃতীয়ত, পদ্মা সেতুর নির্মাণে নদী শাসন কাজে চীনের ঠিকাদার সিনোহাইড্রো করপোরেশনের সঙ্গে ১১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর আগে নদী শাসনে জন্য সারা বিশ্বের কোথাও এককভাবে এত বড় ধরণের দরপত্র আর হয়নি। সেদিক থেকে এটি সেতু নির্মান ইতিহাসে তৃতীয় বিশ্ব রেকর্ড।
নানান চাপের মুখেও সেতুর পাজে পিছু হটেন নি প্রধানমন্ত্রী। বরং দেশের মানুষদের সাথে নিয়ে স্বপ্ন পূরণে পা বাড়িয়েছিলেন। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জটিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর পদ্মাসেতুটি ৪২টি খুঁটি ও ৪১টি স্প্যানের উপর মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটার লম্বা। তাছাড়া শধু নদীর মূল অংশে পদ্মাসেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং দুই পাড়ের সঙ্গে সংযোগ মিলিয়ে সেতুটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৯ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌছে গেছে। রোড ভায়াডাক্ট ৩.৮ কিলোমিটার এবং রেল ভায়াডাক্ট ০.৫৩২ কিলোমিটার। অর্থাৎ সেতুর মোট দৈঘ্য হচ্ছে ১.৪৮২ কিলোমটার। নদীর গতি প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং সেতুর সুরক্ষায় পদ্মা নদী শাসন করা হচ্ছে ১৪ কিলোমিটার। যা সংযোগ সড়কের উভয়দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে দেশের অবহেলিত দক্ষিণ অঞ্চলের ২১টি জেলার প্রায় ৩ কোটি মানুষের ঢাকায় যাতায়াত পন্য পরিবহণ অধিকরতর সহজ হয়ে যাবে। তার পাশাপাশি পদ্মা সেতুর ইতিবাচক ও পরোক্ষ প্রভাবে ২০৩০ সালের মধ্যেই দেশের জাতীয় জিডিপিতে অবদান রাখবে আনুমানিক ১.২%। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের সাথে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে দেশি এবং বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল এবং কলকারখানা স্থাপনের ফলে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আকারের টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পথ সবার জন্য উম্মুক্ত হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।