আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে পুলিশের ভূমিকার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) পাঁচটি লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন।
তিনি বলেছেন পুলিশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতিতে কাজ করে যাবে। এছাড়াও পুলিশকে মাদক দমনে কঠোর হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, নিষ্ঠুরতা বন্ধ করে আইনি সক্ষমতাকে কাজে লগাতে হবে।
শনিবার আইজিপি ড. বেনজীর আহম্মেদ বিপিএম (বার) রাজারবাগ বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে বিশেষ অপরাধ ও আইন শৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য এসব কথা বলেন।
তিনি এ সময় পুলিশ অফিসার ও ফোর্সের সার্বিক কল্যান নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পূনর্ব্যক্ত করেন।
ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন।
আইজিপি বলেন, জনগণের পুলিশ হতে হলে পুলিশকে মাদকমুক্ত করতে হবে। কোন পুলিশ সদস্য মাদক খাবে না, মাদকের ব্যবসা করবে না, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। বাংলাদেশকে একটি মাদকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে যুথবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে এটা অনস্বীকার্য যে মাদক নির্মূল পুলিশকেই করতে হবে।
তিনি বলেন, মানুষের সাথে কোন ধরণের খারাপ আচরণ করা যাবে না, তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা যাবে না। মানুষের সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে শারীরিক শক্তি নয়, আইনী সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে।
পুলিশের ওয়েলফেয়ার নিশ্চিত করতে আইজিপি ড. বেনজীর আহম্মেদ বিপিএম (বার) বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশের সন্তানদের জন্য ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন করা হবে, চিকিৎসার জন্য পুলিশ হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ের পুলিশ হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়ন করা হবে। পুলিশের বদলি হয়ে নিয়মতান্ত্রিক।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান দেশটি মাদকের অভিশাপ থেকে মুক্ত হোক। আর এই কাজটি আমাদেরকে করতে হবে।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ করোনায় নিহত ৪৫ পুলিশ সদস্যের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শহীদ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, তাঁরা এই দেশের জন্য, সমাজের জন্য ও রাষ্ট্রের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। তাঁদের পরিবার আমাদের পরিবারের অংশ। তাঁদের সুখে দুঃখে আমরা পাশে থাকবো। পেনডেমিক ল ইনফোর্সমেন্ট সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা ছিল না। এই সময়টায় পুলিশের যা দায়িত্ব না সেই কাজটিও পুলিশ করেছে। কোন রকম সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়ায় এই মহামারীতে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ এগিয়ে এসেছে। আমাদের কোন সুরক্ষা সামগ্রী না থাকলেও দায়িত্ব থেকে আমরা পিছপা হইনি। পরবর্তী সময়ে আমরা সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দুই লাখ পুলিশকে তা সরবরাহ করেছি। যতদিন করোনা থাকবে আমাদের দুই লাখ সদস্যদের সুরক্ষায় সবকিছুই করবো।
তিনি বলেন, করোনার এই সময়টা আমরা অতি দ্রুত কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে কেভিড-১৯ হাসপাতালে পরিনত করছি। করোনা টেস্ট করানোর জন্য স্বল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পিসিআর মেশিন বসানো হয়েছে। এর ফলে দ্রুত করোনা টেস্টের রেজাল্ট জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ৩৩৯টি আইসিইউ বেড রয়েছে। তার মধ্যে পুলিশ হাসপাতালে ২৭টি আইসিইউ বেড ও ২৭টি এইচডিইউ বেড রয়েছে। এখন ৫৪টি ক্রিটিকাল পেশেন্টকে একসাথে ট্রিটমেন্ট করতে পারছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আমরা আমাদের কোন সহকর্মীকে হারাতে চাই না। সেই সাথে চাইনা আমাদের দেশের ও বিশ্বের মানুষ এই মহামারীতে মারা যাক।
ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) বলেন, আন্তরিকভাবে মানুষকে সেবা দেওয়ার পর কেন আমরা কাঙ্খিত যায়গায় পৌঁছাতে পারছিনা সেটা আমাদের সবাইকে দেখতে হবে। আমরা নিজে থেকে পরিবর্তন হতে চাচ্ছি কিনা এটা দেখতে হবে
তিনি বলেন, আইজিপি স্যার যে পাঁচটি নীতি ঘোষণা করেছেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমি নিজেই পরিবর্তন হতে চাই এই বোধটি নিজের মধ্যে আনতে হবে। আমি রাজা ও জনগণ প্রজা এমন মানসিকতা বহন করা যাবে না। এই পরিবর্তনের সাথে যারা থাকতে পারবেন না তারা দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। আমরা ভেতর থেকে পরিবর্তন হয়ে জনবান্ধব পুলিশ হতে চাই।
ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, এই করোনাকালে আমরা দেখিয়েছি মানুষের কাছে কিভাবে যেতে হয়, তাদের কাছ থেকে কিভাবে সম্মান নিতে হয়। শুধু মাদক ব্যবসায়ীকে ধরলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে মাদকসেবীদের সাজা ও চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। আইজিপি স্যারের নির্দেশনা আমাদের এবাদতের অংশ হিসেবে নিতে হবে।
ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) আরো বলেন, প্রতিটি থানার ওসির কাছ থেকে বুঝে নিব আপনার থানায় মাদক নির্মূলে কতটা সফল হয়েছেন। মাদক ব্যবসায়ী ব্যবসা করলে আপনি থানায় থাকতে পারবেন না। মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন ঠিক থাকবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার, জোনাল এডিসি-এসি ও থানার অফিসার ইনচার্জ বিশেষ অপরাধ ও আইন শৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত ছিলেন।