‘রাজনীতির মহাকবি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির হাজার বছরের শোষণ, বঞ্চনার ইতিহাস। তিনি তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে সমগ্র বাঙালি জাতিকে ধারণ করেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি পতাকা, একটি স্বাধীন ভূখণ্ড। বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুর চর্চা বাড়াতে হবে। আমাদেরকে ৭ মার্চ উদযাপন করতে হবে হাজার বছর ধরে।’
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এবং বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তিতে দেশব্যাপী থানাসহ সকল পুলিশ ইউনিটে আনন্দ উদযাপনের অংশ হিসেবে ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
কেন্দ্রীয়ভাবে আজ রোববার বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার, কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর কনক কান্তি বড়ুয়া, অতিরিক্ত আইজি (এএন্ডও) ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, সিআইডির অতিরিক্ত আইজি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঞা, চলচ্চিত্র অভিনেতা আলমগীর এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনো নিজেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করনেনি। বরং যখন পাকিস্তানিরা আমাদের নিরীহ জনগণের ওপর হামলা করে আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করে নির্বিচারে, তখনই তিনি দৃঢ়চিত্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। রাজনীতির সত্য উপলব্ধি করার জন্য আইজিপি জ্ঞানচর্চার আহবান জানান।
তিনি বলেন, এক সময় দারিদ্র্য, অসুখ, অশিক্ষা ছিল আমাদের নিত্য সহচর। মানুষ ম্যালেরিয়া, কলেরা, টাইফয়েডে ভুগতো। অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। আজ দেশ কোথায় এসেছে ? এ যাত্রা সহজ ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এ উন্নয়নের পেছনে আমাদের শ্রম, ঘাম রয়েছে, প্রতিজ্ঞা, প্রত্যয় রয়েছে। দেশের মানুষ অহর্নিশ পরিশ্রম করেছে। এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলে আমাদের এ বিজয় অর্জিত হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমরা অনেক দূর এসেছি, আমাদের যেতে হবে বহুদূর। আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। ২০৪১ সালে ধনী দেশে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে ‘সোনার বাংলার’ গর্বিত বন্দরে উপনীত হতে হবে।
বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান আইজিপি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটা দারিদ্র্যের শিকল ভাঙ্গার, আত্মমর্যাদার উৎসব। বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়। কোন নির্দিষ্ট দিনে নয়, প্রতিদিন এ উৎসব উদযাপন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাক্তার কনক কান্তি বড়ুয়া তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি করোনাকালে পুলিশের প্রশংসা করে বলেন, বর্তমান করোনায় পুলিশ ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করেছে।
অতিরিক্ত আইজি ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা এ দেশ পেতাম না। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনসাধারণের সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ সাবলীলভাবে একটি অনন্যসাধারণ ভাষণ দিয়েছেন। ৭ মার্চের ভাষণের ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।
চিত্রনায়ক আলমগীর বলেন, সাতই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না’। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণসহ অপরাধ দমনে ডিএমপি কাজ করে যাবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।