প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদিন সিঙ্গাপুরে মারা গেছেন (ইন্নানিলালাহি অ ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদিন(বীর বিক্রম)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, বিবি, ও এসপি, পিএসসি বীর বিক্রম আজ ১৭ডিসেম্বর মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫-১৩ মিনিটে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিউন) ১৯৬০ সালের ১জানুয়ারি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামে জন্ম তাঁর। পিতা মরহুম ইছহাক মিয়া ও মাতা মরহুমা মেহেরুন্নিছা। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদরাসায় উনার পড়ালেখার হাতে-খড়ি- পরবর্তীতে ফৌজদারহাট ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। ওখান থেকে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ১৯৭৫ সালে এস.এস.সি ও ১৯৭৭ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। দুই বছর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন।
বিশৃঙ্খল,বিপদ সংকুল ও গোলযোগপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৯৫-৯৬ সালে দায়িত্ব পালনকালে তার সাহসী নেতৃত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার কারণে অনেক জটিল ও কঠিন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হয়েছিল। দেশের প্রতি নির্ভয় আত্নত্যাগ, পাহাড়সম মানসিক দৃঢ়তা ও দেশ সেবার মহান ব্রত সবকিছু বিবেচনায় তাকে মর্যাদাপূর্ণ ‘বীর বিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। একজন নির্লোভ,সৎ ও মেধাবী সেনা কর্মকর্তা হিসেবে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মিয়া মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিনের নাম। একজন চৌকস সেনা অফিসার হিসেবে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও কর্মদক্ষতার কারণে তাকে শান্তিরক্ষী মিশন থেকে ফিরে আসার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। একজন দেশ প্রেমিক ও নিবেদিতপ্রাণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত আস্থাভাজনে পরিণত হন।
২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে তাকে এস.এস.এফ এর মহাপরিচালক পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। সফলতার জন্য পরিশ্রমের সিঁড়ি বেয়ে উঠা এই মহান ব্যক্তিকে ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় তিনি প্রিয় গ্রাম চুনতি ও লোহাগাড়া উপজেলার উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দেন।
লোহাগাড়া উপজেলার যে সকল দুর্গম রাস্তায় মানুষের চলাচলে অসুবিধা হত সেখানে তিনি ব্রীজ ও পাকা রাস্তা নির্মাণ করেন। চুনতি ও লোহাগাড়া উপজেলায় তিনি যে অভূত পূর্ব উন্নয়ন করেছেন তা ছিল কল্পনাহীন।
ভালবাসেন প্রিয় দেশকে, ভালবাসা আছে প্রিয় গ্রামের আপামর জনসাধারণের প্রতি সীমাহীন ব্যস্ততা ও কর্তব্যের পরিধির ব্যাপকতার কারণে হয়ত সবসময় সময় হয়ে উঠেনা প্রিয় গ্রামে আসার। কিন্তু যখনই একটু অবসর পান ছুটে আসেন প্রিয় গ্রামে মিশে যান প্রিয় মাটি ও মানুষের সাথে। জনদরদী এই মানুষটি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। ক্ষুধা,দুর্নীতি ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোদ্ধা হিসেবে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
প্রচারবিমুখ,আমানতদার ও সদালাপী এই মানুষটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত স্নেহভাজন ও আস্থাভাজন।
এই জীবন্ত কিংবদন্তি চুনতিবাসীর অহংকার ও গর্বের ধন মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন আলোকিত চুনতির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরো বেগবান করতে সৎ,দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরীর জন্য নিজ গ্রামে প্রিয় মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন মেহেরুন্নিছা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত প্রিয় চুনতির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মরহুম বাবার নামে ইছহাক মিয়া সড়ক নির্মাণ করেন। যা চুনতির সাথে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী চুনতি মহিলা ডিগ্রী কলেজের জাতীয়করণে তার ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা চুনতিবাসী সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। প্রিয় গ্রামের মাটি ও মানুষের প্রতি তার ভালবাসার স্বীকৃতি স্বরুপ তার নামেই পানত্রিশায় বীর বিক্রম জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। মৃত্যূকালে তিনি স্ত্রী ও ২ কন্যা সন্তান রেখে যান।