বিভাগ জাতীয়

ব্যাপক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায়

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored


শিক্ষা একটি শিশুর জীবনের মৌলিক অধিকার। আমাদের ১৯৭২ সালের সংবিধানে শিক্ষাকে একটি বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এই সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে শিক্ষাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আর প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে একটি শিশুর শিক্ষা লাভের প্রথম ধাপ এবং মূল ভিত্তি। দেশের প্রাথমিক শিক্ষাস্তরকে আরো শক্তিশালী এবং আধুনিক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের সম্মানিত হাসিনা সরকার বাস্তব জীবন নির্ভর এবং উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন শিক্ষানীতি ২০২০ প্রনয়ন করেছেন। যার আলোকে শিশুর মূল প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করার আগেই ৪+ এবং ৫+ বয়সী শিশুদের কিন্ডারগার্টেন বা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী শিক্ষা ধাপের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার এক বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন আমাদের সম্মানিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়


যদিও ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ প্রথমবারের মতো দুই বছর মেয়াদী আনুষ্ঠানিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের নীতি গ্রহণ করা হয়। তবে ২০১২ সালে এ নীতি থেকে কিছুটা সরে এসে শিক্ষাক্রম অনুসারে ৫+ বয়সী শিশুর জন্য এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রনয়ন করা হয় এবং তা ২০১৫ সাল থেকেই সারা দেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একযোগে বাস্তবায়ন করা হয়। যার পরিধি আরো বাড়িয়ে আগামী ২০২২ সাল থেকে ৪+ এবং ৫+ বয়সী শিশুর উপযোগী দুই বছর মেয়দী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সারা দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একযোগে চালু করা হবে। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের সরকার সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন করে আরো ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।


তবে এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাস্তর যেন কোন ভাবেই শুধুমাত্র পাঠ্য পুস্তক নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে আত্ম প্রকাশ না করে। এখানে শিশুরা ৪+ এবং ৫+ বয়সে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে ভর্তি হয়ে খেলাধুলা, আনন্দ, ব্যায়াম, গান ও ছড়ার মাধ্যমে নিরাপত্তাবোধ পরিবেশে নিজের জীবন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভের পাশাপাশি দুই বছরে নতুন একটি শিক্ষাস্তর অতিক্রম করবে। সম্ভব হলে শিক্ষা উপবৃত্তির পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে আমাদের দেশের কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ের ভীতি কাটিয়ে উঠে আনন্দঘন পরিবেশে এবং খেলাচ্ছলে বর্ণমালা ও সংখ্যার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া ও প্রাথমিক শিক্ষার মূলস্তরে সাবলীলভাবে হাঁটতে শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সারা দেশের সজ্জিত এই সকল প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষসমূহ।


উদাহরণ স্বরুপ, বর্তমানে বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ চীনে সাধারণত ৩+ থেকে ৫+ পর্যন্ত বয়সী শিশুরা কিন্ডারগার্টেন বা প্রাক্–প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করে। যদিও দেশটিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে শিশ ভর্তির হার প্রায় ৪৫ শতাংশ। আর চীনে প্রাক-প্রাথমিক কিংবা কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিশুদের খুব ছোট থেকেই তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়। যেমন নিজে নিজে (চপস্টিক বা চামচ) খাওয়া, নিজে নিজে কাপড় পরিধান করা, নিজের বইপত্র ও খেলনা গুছিয়ে রাখা, সহপাঠীদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলা, ক্লাসরুম মেনার ইত্যাদি। তার পাশাপাশি বাড়তি কারিকুলার হিসেবে থাকে নাচ, গান, বিভিন্ন দিবসে পারফরম্যান্স, কারাতে, কুংফু ইত্যাদি।


তাছাড়া চীনের প্রতিটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পর্যাপ্ত খেলাধুলার সামগ্রী ও উপকরণ দিয়ে সজ্জিত করা হয়ে থাকে। মোটকথা, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক ধাপেই স্বাবলম্বী, বিনয়ী, সহযোগিতামূলক আচার–ব্যবহারের খুঁটি গেড়ে দেওয়া হয়। যেহেতু অধিকাংশ মা-বাবাই চাকরি, ব্যবসা বা অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কিন্ডারগার্টেনগুলোতে বাচ্চারা সাধারণত সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থাকতে হয় এবং এক্ষেত্রে মিড-ডে মিল হিসেবে দুপুরের খাবার প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে সরবরাহ করা হয়।


আমাদের দেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ইতোমধ্যেই অনেক পথ পাড়ি দিলেও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা এখনো পর্যন্ত সুনিদিষ্ট্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি। তবে আশার কথা হলো, সরকারের সহযোগিতায় এবং অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে অধ্যয়ন, শিক্ষা উপবৃত্তি, মিড-মে মিল চালুকরণসহ নানবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে আমাদের সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনের জন্য আমরা এখন অনেকটাই নিজেদের প্রস্তুত করে ফেলেছি। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাবে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুরা। তাই আমাদের কমলমতি শিশুরাই গড়ে তুলবে আগামী দিনের এক সোনালী ভবিষ্যত।


সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…

January 6, 2024

এমনটা কেনো করলেন এ. আর রহমান?

হিরো আলম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার পর সারা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। এমনকি ওই প্রতিবাদের…

November 12, 2023

ন্যানোমিটার সেমিকন্ডাক্টর বা চীপ তৈরিতে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে চীন

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন।…

September 25, 2023
Sponsored