বিভাগ জাতীয়

বঙ্গবন্ধু সবসময় অদম্য তারণ্যের শক্তি দিয়ে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন-শেখ হাসিনা

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের যুবকদের জন্য স্থিতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ধারণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তাদেরকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আজ ২৭ জুলাই সোমবার বিকেলে দু’দিন-ব্যাপী ‘ঢাকা-ওআইসি ইয়থ ক্যাপিটাল ২০২০’ এর অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান।

বিশ্বে করোনায়  আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ৬ লাখ ৫২ হাজার ৬০৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এই মহামারি কবল থেকে মানবতার মৌলিক অস্তিত্ব রক্ষায় বিশ্বব্যাপী আরো জোরালো সহযোগিতারও আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে যুবকদের স্থিতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ধারণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নিজেদের সম্পৃক্ত করার সূবর্ণ সুযোগ রয়েছে। প্রাণবন্ত যুবকরা তা দেখাতে সক্ষম হবে বলে আশা করি।’

সেইসঙ্গে তিনি ‘সমতা ও সমৃদ্ধিঃএকটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য’ এই শিরোনামে  দুই দিনব্যাপী ‘রেসিলেন্ট যুব নেতৃত্ব শীর্ষ সম্মেলন’ এরও উদ্বোধন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এটা দেখা যাচ্ছে যে, প্রাকৃতিক পরিবেশের লালিত মানুষ এই মহামারির সঙ্গে ভালোভাবেই লড়াই করছে। তিনি বলেন, ‘তাই আমাদের অবশ্যই দৈনন্দিন জীবনে মৌলিক প্রকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

করোনা সঙ্কট জল স্রোতধারা অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী মহামারি পরবর্তী ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের’ জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের’ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন এভাবে হতে পারে- প্রথমত: উদ্বেগের কারণে সুরক্ষাবাদের নামে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আরও নিয়ন্ত্রণ, অভিবাসন ও ভিসা নীতিমালায় আরো কঠোর হতে পারে। তবে, এটি মহামারি মোকাবিলার জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।

দ্বিতীয়তঃ এটা পরিস্কার যে করোনার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি ২০০৮-২০০৯ এর অর্থনৈতিক সঙ্কটকে ছাড়াবে। তবে, নেটওয়ার্কযুক্ত অর্থায়ন ও সম্পদ সৃষ্টির নতুন মাত্রা যোগ করবে।

তৃতীয়ত: এরূপ অর্থনীতির ওপর এতবড় অভিঘাত গত কয়েক দশকেও দেখা যায়নি। শুধুমাত্র ১০ এপ্রিলের মধ্যে বিশ্বের সরকারগুলো বিশ্বব্যাপী ১০. ০৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি উদ্বীপনা পরিকল্পনা ঘোষনা করেছিলো। এটি আটটি প্লানের সমতুল্য।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা মহামারি সর্বত্র – সরকার, প্রাইভেট সেক্টর, আন্তর্জাতিক কমিউনিটি এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দের কাছে অস্বাভাবিক দাবি জানাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘একটি সঙ্কটের সময়ে কি ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন তা পুননির্ধারিত পরিকল্পনায় হয় না বরং এই প্রক্রিয়ায় জড়িত মানুষের আচরণ ও মানসিকতায় তা গড়ে ওঠে।’

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা চূর্ণবিচূর্ণ মাত্রার রৌপ্য রেখা তুল্য ঠুনকো বাধাগুলি দূর করে কর্মক্ষেত্রে উদ্ভাবনের গতি ও মাত্রা যোগ করতে বাধ্য করছে।

‘এর বিকল্প হিসেবে আমরা অর্থনীতিতে শক্ত অবস্থান নিতে পারি এবং এই বিপর্যস্থ পরিস্থিতিতে সবধরণের বাধা মোকাবিলা করে আমরা উদ্ভাবনের জন্য নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে নমনীয়তা ও গতিশীলতা আনতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, প্রবাদবাক্য এই পরিস্থিতিকে ‘সোনার গড়’ হিসেবে নিতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জনসংখ্যা ব্যবসা ও কৃষিক্ষেত্রের দূর্বলতা কাটিয়ে ঊঠতে ১২. ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘোষণা করেছে যা জিডিপির ৩.৭ শতাংশ।

তিনি বলেন, খাদ্যে নিরাপত্তা অর্জন, স্বাস্থ্য ও সেনিটেশন উন্নতি ও লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ও নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, আগামী তিন দশকে বিশ্বব্যাপী তিনটি দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির এক হিসেবে বিশ্বব্যাপী মূল্যায়ন অভিক্ষেপণ বাংলাদেশের দিকে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৬ তম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ২৩ তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর জন্য তার সরকারের ভিশন-২০২১ এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি শুধুমাত্র ৫৩ মিলিয়ন তরুণের ডিজিটাল সৃজনশীলতা উন্মোচনের নকশা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের প্রাক-কোরোনা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮.১৩ শতাংশ পর্যন্ত দ্রুত ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোর পূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি ওআইসি এবং এর সকল সদস্য রাষ্ট্রকে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের উদার সহায়তা প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে অস্বীকার করা সত্ত্বেও, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্যে তাদের মাতৃভূমিতে তাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।

শেখ হাসিনা ‘ঢাকা, ওআইসি ইয়ুুথ ক্যাপিটাল ২০২০’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের জন্য আয়োজকদের উষ্ণ অভিনন্দন জানান এবং ঢাকাকে ওআইসি ইয়ুুথ ক্যাপিটাল ২০২০ হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য ইসলামিক কোঅপারেশন ইয়ুুথ ফোরামকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) সারা বিশ্বের ১.৮ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতীক।

তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যোগদানের সময় থেকে আমরা সবসময় ওআইসির দিকে তাকিয়ে থাকি তার দৃঢ় নীতি, মানবতার প্রতি সহানুভূতি এবং নীতি নৈতিক দিক নির্দেশনার প্রতি সহানুভূতির জন্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তারুণ্য, পৌরুষ এবং প্রাণশক্তির প্রতীক।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় অদম্য তারণ্যের শক্তি দিয়ে একটি সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর, উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ছাত্র জীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আদর্শ জীবন হতে পারে। যেহেতু, তিনি একজন খেলোয়াড়, নিষ্ঠাবান ছাত্র এবং একই সঙ্গে অবিচার এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে একজন বীরযোদ্ধা ছিলেন।

 
শেখ হাসিনা ঢাকা, ওআইসি ইয়ুুথ ক্যাপিটাল ২০২০’ এর আয়োজকরা এই মহান নেতার চিরন্তন আদর্শের প্রকৃত চেতনাকে সম্মান জানাতে ‘বঙ্গবন্ধু গ্লোবাল ইয়ুুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ওআইসি মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওছাইমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুুল মোমেন, আজারবাইজানের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী আজাদ রহিমভ, কাতারের সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রী সালাহ বিন গনিম আল আলী, , ইসলামিক কো অপারেশন ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি তাহা আইহান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এ সময় বক্তব্য রাখেন।

এর আগে কাতারের সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রী ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দোহা থেকে ওআইসি যুব রাজধানী চাবি ঢাকায় হস্তান্তর করেন। ৭৪টি দেশের ১ হাজার ২ শ’-র বেশি তরুণ এতে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল।

যুব সম্মেলনে অংশগ্রহণ, যার মধ্যে আয়োজক কমিটি ২ শ’ ৫০ জন অংশগ্রহণকারীকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১ শ’ জন এবং ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র এবং এর বাইরে আরও ১ শ’ ৫০ জন অংশগ্রহণকারীকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটিয়ে যথাযথ লিঙ্গ ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে।

গত ২৫ ডিসেম্বর ইস্তাম্বুল ভিত্তিক ইসলামিক কোঅপারেশন ইয়ুুথ ফোরাম (আইসিওয়াইএফ) ঢাকাকে ‘ওআইসি ইয়ুুথ ক্যাপিটাল ২০২০’ হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলাদেশ গত বছরের মে থেকে প্রত্যাশিত শিরোপার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল এবং অবশেষে ২৫ ডিসেম্বর তারিখে শিরোপা জয়ের আগে পর্যন্ত আইসিইএফ কর্তৃক কাজাখস্তান এবং তিউনিশিয়াসহ সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ছিল। তথ্য সূত্রঃ বাসস

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored