করোনাভাইরাস সব অগ্রযাত্রা সাময়িকভাবে থামিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে, এই সমস্যা সবাই কাটিয়ে উঠব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, আমি আশা করি জনগণ এর থেকে বেরোতে পারবে, আবার আমরা এগিয়ে যাব।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দেশব্যাপী এক কোটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। জীবন ও অর্থনীতির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়া করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের না, বিশ্বব্যাপী। কাজেই সবাই যেন এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে।
পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশে বনায়ন সৃষ্টি আমি যখন ৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন মাত্র ৭ ভাগ আমাদের বনায়ন ছিল। আজকে প্রায় ১৭ ভাগের উপরে আমরা করতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য ২৫ ভাগ বনায়ন আমরা সারা বাংলাদেশে করব। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিব বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশব্যাপী এক কোটি বৃক্ষের চারা রোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা বলেন, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বা তার বেশি যাতে করে আমাদের সারা বাংলাদেশে বনায়ন সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টি হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে বৃক্ষরোপণ করে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। কাজেই তাঁর স্মরণে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা এই পদক্ষেপ প্রতিবছরই নিচ্ছি।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেই চুরাশি সালে আমরা শুরু করি। ৮৪ থেকে শুরু করে আমরা প্রতিবছর পহেলা আষাঢ় সমগ্র বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণ করি। আমাদের সহযোগী সংগঠন কৃষকলীগের উপরে দায়িত্ব থাকে। কৃষকলীগ সমগ্র বাংলাদেশে এই উদ্যোগটা নেয় এবং আমাদের সকল সহযোগী সংগঠন মিলে আমরা বৃক্ষরোপণ করি।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশটা রক্ষা হওয়া দরকার। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টির দরকার। কাজেই আমরা তাদের খাদ্য এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কথা চিন্তা করি কিন্তু বৃক্ষরোপণ করি। আমি নির্দেশনা দিয়েছি শুরু থেকেই যে তিনটা গাছ লাগাতে হবে। একটা ফলের গাছ।
আজকে আমি একটা চালতে গাছ, তেঁতুল গাছ আর একটা ছাতিয়ান গাছ লাগিয়েছি। ছাতিয়ান গাছটা খুব বড় হয় এর কাণ্ড খুব মোটা হয় এবং কাঠ হিসেবে খুব ভালো। সেজন্য ওটা লাগানো হয়েছে। আর তেতুলের কথাতো শুনলেই জিভে পানি আসে। ছোটবেলার কথা মনে হয়, তবে এই বৃদ্ধবয়সে আসে না। বৃদ্ধ বয়সে তো এত টক খাওয়া যায় না। তেঁতুলের শক্তি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটা যেমন কারো যদি প্রেসার থাকে সে প্রেসার এর জন্য ভালো। আর তাছাড়া এমনিতে শরীরটাকে ঠান্ডা রাখা। তেঁতুল অনেক কাজে লাগে।
একটা কাঠের জন্য যেটা আর্থিক সচ্ছলতা আনবে। আরেকটা ভেষজ গাছ। অর্থাৎ যে গাছ দিয়ে নানা ধরনের ঔষধ সৃষ্টি হয়, সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এই ধরনের গাছ।
কাজেই আমাদের দেশ থেকে তেঁতুলের জাতটা আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তবে এটার চাহিদা আছে। আর ফুচকা-চটপটি তো সবার খেতে ভালো লাগে। সেজন্য তেতুল সব সময় দরকার। সেজন্য আমি তেঁতুল গাছের উপর একটু জোর দিয়েছি। আর চালতাটাও। চালতার পাতা গুলো যেমন সুন্দর দেখতে ফুল আরো সুন্দর দেখতে। চালতার আবার অনেক গুণ রয়েছে। ডালে চালতা দিয়ে খেতে তো এমনি মজা লাগে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবাইকে আহবান করবো, যে যেখানে আপনার যতটুকু জায়গা আছে একটা গাছ লাগান। অথবা যারা শহরে থাকেন ছাদে বা বারান্দায় একটা টবে গাছ লাগান। যেভাবেই হোক একটু গাছ লাগালে ভালো লাগবে। মনটাও ভালো লাগবে।
আজকের দিনটা একটা বিশেষ দিন কারণ ২০০৭ সালে তদানীন্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে গ্রেফতার করেছিল। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, আমাদের দেশের জনগণের প্রতি, প্রবাসীদের প্রতি এবং বিশ্ব নেতাদের প্রতি। সেই সাথে আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের সংগঠন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ আমাদের সকল সংগঠন, সহযোগী সংগঠন। তারা প্রতিবাদ করেছিলেন।
আর কিছুটা আপনার নিজের সচ্ছলতা আসবে আর নিজের হাতে লাগানো একটা গাছের একটা কাঁচামরিচ খেলেও কিন্তু ভালো লাগে। কাজেই সেইভাবে আমি আহবান করব সবাইকে আসুন আমরা সবাই মিলে গাছ লাগাই আমাদের দেশটা একটা বদ্বীপ এই দেশটাকে আমরা রক্ষা করি এবং দেশটাকে উন্নত করি।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ২৫ লাখ সিগনেচার সংগ্রহ করে সেটা তত্ত্বাবধায়কের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দিয়েছিলেন এবং তাদের এই সংগ্রহ কাজে আমি জোর পেয়েছিলাম মনে। পরে আন্তর্জাতিক চাপে আমাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। যদিও আমার বিরুদ্ধে বিএনপির আমলে বারোটা মামলা দেওয়া হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আরো পাঁচটা মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। প্রতিটি মামলায় আমি বলেছি যে তদন্ত করে দেখতে হবে যে আমার দুর্নীতি আছে কিনা। ঠিক সেভাবে করা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমি সব কিছু থেকে খালাস পেয়েছি। জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা যে তাদের সমর্থনে আমি মুক্তি পেয়েছিলাম।
দেশের জন্য, জাতির জন্য কাজ করা এটা আমার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কাছ থেকে আমি শিখেছি। যে কোনো কিছু মোকাবেলা করে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে চলো। সৎ পথে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করো। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ, এই বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো।