স্বনামধন্য ওষুধ প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (বেক্সিমকো ফার্মা, বিপিএল বা কোম্পানি) আজ রেমডিসিভির (ব্র্যান্ড নাম বেমসিভির) বাজারজাত শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। এন্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডিসিভির সম্প্রতি কোভিড-১৯ চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থার (এফডিএ) জরুরি- ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। বহুল প্রতীক্ষিত এই ওষুধের জেনেরিক সংস্করণ বাজারজাতকরণে বেক্সিমকো ফার্মাই বিশ্বের প্রথম। সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের রেপ্লিকেশন বা বংশ-বৃদ্ধি রোধে প্রথম কার্যকরী ওষুধ হিসেবে রেমডিসিভির প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশে বেক্সিমকো ফার্মাই সর্বপ্রথম ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের আবেদন করে। ওষুধের অনুমতির জন্য প্রযোজ্য সকলবিধি বিধান অনুযায়ী আবেদনের সকল ধাপ সুসম্পন্ন করে। পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা শেষে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার জরুরি ব্যবহারের জন্য বেমিসিভির ব্র্যান্ড নামে বেক্সিমকো ফার্মার উৎপাদিত রেমডিসিভির ইঞ্জেকশন এর চুড়ান্ত অনুমোদন দিল।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গিলিয়াড সাইন্সেস রেমডিসিভির এর উদ্ভাবক। প্রত্যক্ষ এন্টিভাইরাল হিসেবে রেমডিসিভির ভাইরাসের আরএনএ সংশ্লেষন প্রতিরোধে সরাসরি কাজ করে। রেমডিসিভির রক্তনালীতে ইঞ্জেকশন হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।
কোভিড-১৯ এ গুরুতর অসুস্থ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।সাম্প্রতিক ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় রেমডিসিভির ব্যবহারে কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের দ্রুততম সময়ে সুস্থ হয়ে উঠার প্রমাণ মিলেছে। জাপান সরকারও কোভিড-১৯ এ গুরুতর অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসা হিসেবে রেমডিসিভির ব্যবহারের বিশেষ অনুমতি দিয়েছে। জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ক্ষেত্রে রেমডিসিভির ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের রোগীদের জন্য সর্বাধুনিক যুগান্তকারী ওষুধ সহজলভ্য করা সবসময়েই একটি দুরহ বিষয়।
বাংলাদেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, বেক্সিমকো ফার্মা শুধুমাত্র কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতাল সমূহেই রেমডিসিভির (বেমসিভির) সরবরাহ করবে, কোন ফার্মেসিতে সরবারাহ করবে না। ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রাপ্তির প্রথম দিনেই বেক্সিমকো ফার্মা বিপুল পরিমানে রেমডিসভির (বেনসিভির) কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য অনুদান হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব নাজমুল হাসান এমপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহেদ মালিকের কাছে এই ওষুধ হস্তান্তর করেন। অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা সচিব জনাব মোঃ আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব জনাব মোঃ আলি নুর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মাহবুবুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ এবং কেন্দ্রীয় ঔষধাগার এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উপিস্থিত সকলে মহামারি করোনা মোকাবেয়াল বেক্সিমকো ফার্মার গৃহীত সকল উদ্যোগসমুহের প্রশংসা করেন।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ওষুধটি আনার ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম জেনেরিক কোম্পানী হতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, নতুন এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার এই ওষুধটি উৎপাদন মূলত যুগান্তকারী আবিস্কার সমূহকে সহজলভ্য করার আমাদের অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন। সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতার কারনেই স্বল্পোতম সময়ে রোগীদের জন্য এই ওষুধ নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। এজন্য তাদের প্রতি আমরা সবিশেষ কৃতজ্ঞ। সামাজিক দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সরকারের কর্মকান্ডে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।
মহামারি করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য বিশ্বের সর্বাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেক্সিমকো ফার্মা সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলছে। নিজস্ব আধুনিক গবেষণা ও উৎপাদন সক্ষমতার আলোকে, নতুন এই মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহনে বেক্সিমকো ফার্মা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বেক্সিমকো ফার্মা ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ চিকিৎসায় আরেকটি এন্টি-ভাইরাল ওষুধ ফেভিপিরাভির (ব্র্যান্ড নামঃ ভিরাফ্লু) এবং কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত ও সম্ভাবনাময় ওষুধ এন্টিম্যালারিয়াল হাইড্রোক্সিক্লোরকুইন (ব্র্যান্ড নামঃ কোভিসিন) ও এন্টি-প্যারাসাইটিক ইভারমেক্টিন (ব্র্যান্ড নামঃ ইভেরা) উৎপাদন শুরু করেছে।
বেক্সিমকো ফার্মা বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ওষুধ রপ্তানিকারী প্রতষ্ঠান। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে প্রতিষ্ঠানটির উপস্থিতি আছে। বেক্সিমকো ফার্মার সর্বাধুনিক উৎপাদন স্থাপনা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জিসিসি ও লাতিন আমেরিকা সহ বিশ্বের অনেক ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত। ২০১৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ বেক্সিমকো ফার্মার উৎপাদন স্থাপনাকে অনুমোদন প্রদান করে। এরপর ২০১৬ সালের আগস্টে প্রথম বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধ রপ্তানি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।