বিভাগ জাতীয়

ভারতের প্রতিবেশীই প্রথম নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না: শ্রিংলা

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

মহামারি সৃষ্ট নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারতের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জনিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

তিনি গত শুক্রবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিলর অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা জানান।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স (আইসিডাব্লিউএ) এবং এর মহাপরিচালক ড. টিসিএ রাঘবনকে ধন্যবাদ জানাই মহামারি চলাকালীন ভারতীয় কূটনীতির বিস্তৃত পরিসর নিয়ে এই মতবিনিময়ের আয়োজনের জন্য।

আমি খুবই খুশি যে আমরা আজ দেশের বিভিন্ন স্থানের নামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের প্যানেলিস্টদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি।

একটি জাতির পরিচয় তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতাকে উপস্থাপন করে। আইসিডাব্লিউএ আমাদের দেশ ও এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান থিঙ্কট্যাঙ্ক, যার জন্য আমরা সবাই গর্ব করতে পারি।

এর শুরু স্বাধীনতার আগে। বিশ্বব্যবস্থায় ভারতের ভূমিকা থাকতে পারে, সেটা সেই সময়ে আকাঙ্ক্ষার চেয়ে একটু বেশি ছিল। আমরা তখনো উপনিবেশ ছিলাম। ভারতের স্বাধীনতা, দেশভাগের ক্ষত এবং উদীয়মান জাতিসত্তার সংগ্রাম ছিল সামনে। তার পর থেকে ভারত অনেক দূর এগিয়েছে। আমাদের যাত্রা কঠিন ছিল এবং আরো অনেক চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে।

গর্ব করার মতো অনেক কিছুই আছে। আমরা এমন একটি দেশ, যার মধ্যে স্থিতিস্থাপকতা, অর্জন এবং অবিরাম প্রচেষ্টার ইতিহাস রয়েছে। আমরা একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ। আমরা এমন একটি দেশ, যারা ভিন্ন কিছু করতে চায়। আমরা এমন একটি জাতি, যা চ্যালেঞ্জকে ভয় পায় না।

২০২০ সাল একটি চ্যালেঞ্জিং বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমরা বিশ্বব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় ধাক্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতি শুরু হয়েছিল একটি স্বাস্থ্যসংকট হিসেবে, যা হয়তো ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর মতো বা আরো তীব্রতর। কিন্তু এটি একটি অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং একটি বিশাল সামাজিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে রূপ লাভ করেছে, যা আমাদের কেউ-ই এর আগে কখনো দেখিনি। সারা দুনিয়ার আট লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।  অসংখ্য মানুষ হারিয়েছে তার জীবিকা।

আপনারা সবাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) চীনের সঙ্গে আমাদের সংঘাতের বিষয়ে অবগত আছেন। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় পর এই সীমান্তে এই দুর্ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ। আমরা এই বিষয়ে সামরিক এবং কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং সংলাপের মাধ্যমে সব অমীমাংসীত বিষয় সমাধানের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছি। আলোচনা চলাকালে আমরা আবার এই বিষয়ে ফিরে আসব।

কভিড-১৯ আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি বিষয় পরিস্থিতির জটিলতা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। ভারতীয় কূটনীতি এবং আমাদের বাহ্যিক নীতিগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়।

লকডাউন আমাদেরকে বিশ্বায়নের কয়েকটি মৌলিক চালিকাশক্তি কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা বর্তমানের বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে রূপদান করে এমন অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও ভাবতে বাধ্য হয়েছি। এটি আমাদের চিন্তাভাবনার কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে।

আমরা কিভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাই, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি সাম্প্রতিক ভার্চুয়াল ন্যাম এবং জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন যে, এই মহামারি বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ঘাটতি এবং সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে এনেছে। সংকীর্ণ অর্থনৈতিক অ্যাজেন্ডা এখন পর্যন্ত বিশ্বায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে।

আমরা সমস্ত মানবজাতির সম্মিলিত স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থকে ভারসাম্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় মানুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানান।

বিশ্বব্যাপী চিন্তাভাবনা গঠনের প্রচেষ্টা এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি মহামারির মধ্যেও অব্যাহত রয়েছে। জি -২০ এবং জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক আহ্বানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন করেছেন। এরপর ভারত-ইইউ শীর্ষ সম্মেলন হয়। তিনি জাতিসংঘের ইকোসকের একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় ও গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিটে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে মরিশাসের নতুন সুপ্রিম কোর্ট ভবনের ডিজিটাল উদ্বোধন করেছিলেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ৬৪টিরও বেশি দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোন এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেছেন।

ভারতের পরামর্শ, অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নেতৃত্ব দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে প্রশংসা পেয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহামারি চলাকালীন প্রায় ৮০ জন প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি ডিজিটালি ব্রিকস, এসসিও এবং আরআইসির মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় অংশ নিয়েছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে একটি যৌথ বৈঠক করেছেন।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…

January 6, 2024

এমনটা কেনো করলেন এ. আর রহমান?

হিরো আলম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার পর সারা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। এমনকি ওই প্রতিবাদের…

November 12, 2023

ন্যানোমিটার সেমিকন্ডাক্টর বা চীপ তৈরিতে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে চীন

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন।…

September 25, 2023
Sponsored