ইউএনডিপি পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী ভোটারদের সংগৃহীত ডাটার ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ সঠিক মর্মে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রের ওপর আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে এ পর্যন্ত ১৪৪টি সংস্থা নাগরিকদের জাতীয় পরিচিতি নিশ্চিতকরণের জন্য চুক্তির করে এনআইডি সার্ভারের মাধ্যমে এনআইডি যাচাই সেবা গ্রহণ করছে।
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নোত্তরে তিনি এ সকল তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সসরকারী দলের সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন।
তিনি মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, তড়িঘড়ি করে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করতে গিয়ে পিতার নামের স্থলে মায়ের নাম, প্রকৃত নামের স্থানে অন্যজনের নাম, নামের বানান ভুলের কথা তুলে ধরেন এবং এসব সংশোধনী নিয়ে হয়রানির অন্ত নেই।
এমতাবস্থায় নির্ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র জনগণ যাতে পায় তার সুব্যবস্থা হবে কী না?
জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে ভোটার তালিকার ডাটাবেইজ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ টেকনিক্যাল জনবল না থাকায় এবং সময় স্বল্পতার কারণে প্রাথমিক পর্যায় কিছু ভুল ভ্রান্তি রয়ে যায়। যার অধিকাংশই বানানজনিত ভুল।
বিভিন্ন পর্যায়ে পরিলক্ষিত ভুলসমূহের বিষয়ে আইন ও বিধি অনুসারে নির্বাচন কমিশন সংশোধনের সুযোগ দিলেও অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে অনেকেই যথাসময়ে সেই সেবা গ্রহণ করেনি। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রে লিপিবদ্ধ তথ্যাদির ক্ষেত্রে এখনো কিছু ভুল বিদ্যমান।
তবে, সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত অবেদনসমূহে চাওয়া দাবি অনেকক্ষেত্রে অযৌক্তিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত। ফলে ওইসব আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যথাযথ প্রমাণপত্র ও দলিলাদি দাখিলসহ ক্ষেত্রবিশেষ তদন্ত বা পুন:তদন্তের প্রয়োজন পড়ে।
এ সকল আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার উদ্ভব ঘটে এবং দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়। এ কারণে বিশেষ করে সাংবাদিক মহল বিরাগভাজন হয় এবং এসংক্রান্ত সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে, যা সম্পূর্ণ সত্য নয়।
একই প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, এনআইডির সংশোধন বা পরিবর্তনের আবেদন সাধারণত ৩০ কার্যদিবসে নিষ্পত্তির কথা থাকলেও সঠিক দলিলাদি যুক্ত করে যৌক্তিক সংশোধনের আবেদন করতে ৫/৬ দিবসেই নিষ্পন্ন হয়ে থাকে।
জন্মতারিখ সংশোধন বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নাগরিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এনআইডিতে মুদ্রণ ভুল হলে ও আবেদনকারীর চাওয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম অনুযায়ী সঠিক থাকলে (যত বছরের পার্থক্য-ই হোক) এবং যাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষাগত সনদ আছে তাদের ক্ষেত্রে ৫/৭ কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধন হয়ে থাকে।
কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু কিছু নাগিরক উদ্দেশ্যমূলকভাবে জন্মতারিখ পরিবর্তন করতে আবেদন করে থাকেন, যা একেবারেই অযৌক্তিক।
চাকরি বেতন ও ভাতাদি আদেশ ২০১৫ অনুযায়ী সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন নির্ধারণ বা বেতন প্রাপ্তিতে এনআইডির তথ্যাদির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কিন্তু এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কতিপয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরিচয়পত্র আমলে না নিয়ে শুধুমাত্র জন্ম সনদের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করছে।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন আবেদন ঘরে বসে অনলাইনে করার পাশাপাশি ঘরে বসেই প্রিন্ট দিয়ে পরিচয়পত্র গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান।
আওয়ামী লীগের সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে সংসদ কাজে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী জানান, সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদের পর দেশে খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ১২ লাখ ৮৪ হাজার ১৫৮ জন। আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।