প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে এদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠা করা হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আমরা এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি।
বুধবার সকালে ঢাকা জেলার নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর জনসন রোডস্থ আদালত পাড়ায় ঢাকা জেলার নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার, নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ৭ খুনের মামলা এবং হলি আর্টিজেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাসহ সকল চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার সম্পন্ন করা উল্লেখ করে এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল বিচারকগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ লক্ষ্যে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও এজলাস সংকট নিরসনের পাশাপাশি মামলা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে অধস্তন আদালতে ১১২৬ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দরিদ্র-অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের সরকারিভাবে আইনি সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলা সদরে এবং সুপ্রীম কোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে জুলাই ২০২০ পর্যন্ত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে সর্বমোট ৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৩০ জনকে বিনামূল্যে আইনি সেবা প্রদান করা হয়েছে।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল বাস্তবায়ন, বিচারকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জুডিশিয়াল ভাতা প্রদানসহ বিচার বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নের প্রসংগ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪২টি জেলায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য ৮-১০ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে ২৯টি জেলায় নবনির্মিত আদালত ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। এসব ভবনে স্থাপিত আদালতে এখন উন্নত পরিবেশে বিচারিক কাজ চলছে। অবশিষ্ট জেলাগুলোতেও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের উদ্বোধন করা হলো। আমার প্রত্যাশা, এ ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে জনগণের বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তি অনেকাংশে কমবে।
সন্ত্রাসবিরোধী মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ৭টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন, ৭টি বিভাগীয় শহরে সাইবার ট্রাইবুন্যাল স্থাপন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১৮ সালে ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের পর ২০২০ সালে আরো ৬টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ছাড়া ৭টি মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি।
সরকার প্রধান আরো বলেন, ধর্ষণের মামলায় ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি প্রদানের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে তাঁর সরকার ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২০’ প্রণয়ন করেছে এবং মাদক সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করেছে।
তিনি বিচারপতি এবং আইনজীবীদের কল্যাণ কামনা করে তারা যেভাবে মানুষের পাশে রয়েছেন সেভাবেই তাদেরকে মানুষের পাশে থাকার ও আহবান জানান।
তার সরকার দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এবং শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম, সামাজিক খাতে নিরাপত্তা বিধান এবং দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার প্রদান অব্যাহত রাখতে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার, আইন ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের কারাগারে এ ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দাগী আসামিদের বিচারের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে দেশের সব কারাগারেই ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা রাখতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
করোনাভাইরাসে সাবেক এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ দেশ দিবেশে যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।