সাভার প্রতিনিধিঃ মর্মান্তিক সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের ১ হাজার ১৩৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার ৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ২৪ এপ্রিল শুক্রবার।
এ উপলক্ষে মৃত শ্রমিকের স্মরনে প্রতি বছর ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার সামনে বর্ষপূর্তি পালন করে আসছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রামন রোধে সকল কর্মসূচী স্থগিত ও নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ঘরে বসে জানানোর আহবান করছে সাভার-আশুলিয়ার ২৫টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে আশুলিয়ার ধামসোনা ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সাথে বৈঠকের পর এ ঘোষণা দেন তারা।
এসময় শ্রমিক সংগঠনের নেতারা করোনা পরিস্থিতি জন্য তাদের সকল কর্মসুচী স্থগিত করেন। শুধু তাই নয়, শ্রমিকদের সাভারে রানা প্লাজার সামনে জড়ো না হবার আহ্বান জানান তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচী পালনের কথাও জানান তারা।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু জানান, বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনার প্রভাবে দেশ, জাতি ও শ্রমিকদের কল্যানে রানা প্লাজার সকল কর্মসূচী স্থগিত ঘোষনা করেছি। যাতে করে সামাজিক দুরুত্ব বজায় থাকে।
বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন শ্রমিকদের অনুরোধ করে জানান, বিশ্বব্যাপী করেনায় ফলে ঘরে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতহাত শ্রমিকদের প্রতি আপনাদের সমবেদনা প্রকাশ করবেন। তিনি রানা প্লাজার স্মৃতিসম্ভে না যাওয়া অনুরোধ করেন শ্রমিকদের ।
পাশাপাশি রানা প্লাজা ধ্বসের বর্ষপূর্তির সব ধরনের কর্মসূচী বাতিল করার ঘোষণা দেন তিনি। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের আহ্বানের পাশাপাশি নিজেদের নৈতিক অবস্থান থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান।
এ বিষয়ে মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, করোনার এই পরিস্থিতি কোন কর্মসূচী পালন করলে সামাজিক দুরুত্ব বজায় থাকবে না। এতে করে করোনার মাহামারি আকার ধারন করতে পারে। এই আহ্বা নে সাভার-আশুলিয়ার ২৫ টি শ্রমিক সংগঠন সাড়া দিয়ে তাদের সকল কর্মসূচী বাতিল করেছেন।
পরে রানা প্লাজা ও তাজরীনের হতাহত পরিবারের জন্য শ্রমিক প্রতিনিধির হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ।
সাত বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৬ জন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও ১ হাজার ১৬৯ জন। এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যু চিহ্নিত হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে।
প্রায় চার বছর আগে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই হত্যার অভিযোগে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
ঢাকা জেলার পিপির দপ্তর সূত্র বলছে, বিচারিক আদালতের অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আট আসামি হাইকোর্টে আবেদন করেন।
শুনানি নিয়ে এই আটজনের পক্ষে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আসে। ইতিমধ্যে ছয় আসামির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কেবল সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র রেফায়েত উল্লাহ এবং তৎকালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের পক্ষে স্থগিতাদেশ বহাল আছে।
রানা প্লাজা ধসের জন্য ছয়জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ার কারণে তিন বছর ঝুলে ছিল এই মামলা। সে সময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল, যাঁরা বড় অপরাধ করেননি, তাঁদের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দিতে পারবে না তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
আদালত সূত্র বলছে, রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন একজন। তিনি হলেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক সোহেল রানা। জামিনে আছেন ৩২ আসামি। পলাতক ছয়জন। মারা গেছেন দুই আসামি।