দেশে ডিজেলের সংকট কাটাতে বিকল্প উৎস হিসেবে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল আমদানির চেষ্টা চালাচ্ছিল বাংলাদেশ। রাশিয়ার প্রস্তাব লুফে নিয়ে চলছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা। গতকাল ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড সেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে।প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আরব দেশগুলো থেকে আনা ক্রুডের চেয়ে রাশিয়ার ক্রুডে ডিজেলের পরিমাণ কম। ক্রুড থেকে পাওয়া ন্যাপতার মানও পেট্রল তৈরির উপযোগী নয়। তাই কম দামে পেলেও রাশিয়ার ক্রুড অয়েল আমদানি অলাভজনক হবে।
বিপিসি মারবান ক্রুড ও অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড (এএলসি) আমদানি করে। মারবান ও এএলসিতে ৪১-৪২ শতাংশের বেশি ডিজেল পাই। রাশিয়ান ক্রুডে পাওয়া গেছে ৩৩ শতাংশ। ‘টপ কাট’-এ ন্যাপথার পরিমাণও কম হবে। এতে পেট্রলও কম পাওয়া যাবে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করবে ‘বটম কাট’। এখানে ৫০ শতাংশ হবে বটম কাট। এটা প্রসেস করা খুবই কষ্টসাধ্য। এতে প্ল্যান্টে পাম্পসহ কিছু যন্ত্রপাতিতে মডিফিকেশনের প্রয়োজন হবে। যাতে যোগ হবে বাড়তি খরচও।
দেশে বছরে কমবেশি ৬০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকে। এর মধ্যে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড আমদানি করে পরিশোধন করা হয়। অবশিষ্ট ৪৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে বিপিসি। বাংলাদেশ সাধারণত সৌদি আরব, কুয়েতসহ আরব আমিরাতের দেশগুলো থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে ডিজেল, পেট্রল, অকটেনসহ বিভিন্ন রকম জ্বালানি তেল উৎপাদন করে। বছরে ১৫ লাখ টন তেল শোধনের সক্ষমতা আছে তাদের। দেশে মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশই ডিজেল।
আমাদের দেশে ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ডিজেলকে টার্গেট করেই মারবান ও এএলসি আমদানি করে বিপিসি। সেই অনুপাতে রাশিয়ার নমুনা পরীক্ষায় ডিজেল ও পেট্রলের পরিমাণ কম। তাই আনুপাতিকহারে আর্থিকভাবে আমরা লাভবান হবো না। অবশ্য ইস্টার্ন রিফাইনারির কর্মকর্তারা এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি না, বিষয়টি যেহেতু বাংলাদেশ-রাশিয়া দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের এবং স্পর্শকাতর। তারা বিপিসি এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের হাতে সিদ্ধান্তের ভার ছেড়ে দিয়েছেন।