বিভাগ জাতীয়

রোহিঙ্গাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়

সাম্প্রতিক সংবাদ
মোহাম্মদ শিপন
Sponsored

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মর্যাদার সাথে ও শান্তিপূর্ণভাবে তাদের নিজে দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সহায়তার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নবম মস্কো সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানকালে এ আহ্বান জানান।
তিনি রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি পুনরুল্লেখ করে বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, প্রায় চার বছর আগে মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিককে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হলে, বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দেয়।

এরা বাংলাদেশ ও গোটা অঞ্চলের জন্য মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড করা এই বক্তৃতা তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নবম মস্কো সম্মেলনে সম্প্রচার করা হয়। ভার্চুয়াল প্লাটফরমে ২১ জুন থেকে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সাথে শান্তিপূর্ণভাবে প্রত্যাবাসনে সহায়তার জন্য আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে বঞ্চনা ও শোষণ থেকে মুক্তি এবং সকলের জন্য শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

এই সম্মেলন আয়োজন করার জন্য প্রধাননমন্ত্রী রুশ ফেডারেশন সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা করেন যে, এই সম্মেলন জরুরি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করবে।

কভিড-১৯ মোকাবেলায় সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মানবিক সাহায্য প্রদান, রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদে প্রত্যাবাসন, সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনা সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার উপর জোর দেন।

এ প্রসঙ্গে, তিনি বলেন, আমি ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সাম্প্রতিক অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানাই। আমি আশা করি যে, মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে।

দেশে দেশে সংঘাত আন্তঃদেশীয় নিরাপত্তা সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপত্তা সংজ্ঞায় এখন মানুষের সামরিক ঝুঁকি, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজন, অ-স্বেচ্ছাপ্রণদিত গণ অভিযোজন, পরিবেশগত নিরাপত্তা ও অন্যান্য নতুন নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকিও অন্তর্ভূক্ত।

সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, বিচ্ছিন্নতাবাদ, গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র, সাইবার অপরাধ, আঞ্চলিক সংঘাত ও প্রতিবেশগত বিপর্যয়ের কারণেই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার নতুন চ্যালেঞ্জ ও ইস্যুগুলো আবির্ভূত হয়েছে।

কভিড-১৯ মহামারিকে বর্তমান সময়ে অন্যতম বৈশ্বিক ইস্যু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহামারির কারণে শুধু বহু মানুষই মারা যায়নি, অধিকন্তু অর্থনীতির উপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ জীবিকা হারিয়েছে।

সরকার সকলের জন্য স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত ও বিভিন্ন খাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মহামারি মোকাবেলা করে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিটি নাগরিককে বিনামূল্যে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসবে। তাই সরকার সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সরকার এই ভ্যাকসিনের জন্য রুশ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

আমি জানাতে চাই বাংলাদেশের ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা রয়েছে এবং যদি উৎপাদনে যেতে পারি, তবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহায়তা করতে পারব।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। যদিও বাংলাদেশ এই মারাত্মক প্রাকৃতিক সংকটের জন্য একেবারেই দায়ী নয়। আমরা আশা করছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবগুলো সমাধানে একটি বড় ধরনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন যে এই ফোরাম আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদারে সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর সমাধান বের করার ওপর গুরুত্ব দেবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। তিনি তাঁর সারা জীবন মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।

তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রবর্তিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্র-নীতির আলোকেই চলছে।

একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব ধরনের আন্তর্জাতিক বিবাদ মিমাংসায় বিশ্বাস করে। কারণ, যুদ্ধ-সংঘাতে প্রিয়জন হারানোর বেদনা বাংলাদেশ বোঝে। ১৯৭১ সালের দেশটির মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে তাঁর দেশের সর্বাধিক সদস্য রয়েছে। এভাবে বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীনতার পরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি পুর্নগঠনে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও দেশটির জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতার কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored