সৌদি আরব লালমনিরহাটের বিমানঘাঁটিতে বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের(MRO) জন্য ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং এই প্রকল্পে খুব শীঘ্রই চুক্তি হতে যাচ্ছে সৌদির এরোস্পেস কোম্পানি SAMI এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মধ্যে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় সামরিক এবং বেসামরিক উভয় বিমানের MRO করার ব্যবস্থা করা হবে লালমনিরহাটে ।
লালমনিরহাটের এই বিমানঘাঁটি ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা হয়েছিলো এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর সম্প্রসারণ করা হয় । পরবর্তীতে দেশ বিভাজনের ফলে এই বিমানঘাঁটি পরিত্যক্ত হয়ে পরে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ার কারণে । এর ফলে বিমানবাহিনীকে এই বিমানঘাঁটির দায়িত্ব দেয়া হয় তবে নতুন করে একে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে রূপ দিতে চাইছে সরকার যার ফলে ভারত, নেপাল এবং ভূটানের মানুষ এই বন্দর ব্যবহারের সুবিধা পাবে ।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাটের বিমানঘাঁটিকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেশের প্রথম এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে এবং যার নির্মাণ এখনো প্রক্রিয়াধীন। আমাদের তরুণ ইন্জিনিয়ারগণকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে এই MRO plant এর ভূমিকা হবে অনস্বীকার্য কারণ ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে আমাদের সামরিক ও বেসামরিক শিল্পের বিকাশ ঘটবে । দেশেই তৈরি হবে এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার, ড্রোন, রেডারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ।
বাংলাদেশ এবং সৌদিআরবের গত চার বছরে সম্পর্ক এক অন্য উচ্চতায় পৌছেছে এবং এই সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিগণ সেখানে বার বার সফর করে যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো সৌদিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা এবং এর গতি আসে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে করা প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে । এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সৌদি-ইয়েমনে সীমান্তের মাইন অপসারণ করবে এবং বিজিবি সৌদি সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সামরিক বেসামরিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং এর উন্নয়নকাজে নিযুক্ত হবে । এই চুক্তির কয়েকমাসের মধ্যেই সৌদির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে সফর করেন বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সেখানে প্রাথমিকভাবে তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পর্যটন, যোগাযোগ, সার শিল্পে, বেসামরিক বিমান চলাচল ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরব বিগত কয়েকবছর ধরেই তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেড়িয়ে আসছে এবং এর জন্য সৌদি প্রশাসন প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার বৈশ্বিকভাবে বিনিয়োগের চিন্তা করছে এবং যার জন্য উৎকৃষ্ট জায়গা হবে দক্ষিণ এশিয়া এবং ইতোমধ্যেই তাঁরা ভারত, পাকিস্তানেও বড় বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে যদিও পাকিস্তানের সাথে তাঁদের বর্তমান সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না । বাংলাদেশ সরকারও ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
উল্লেখ্য, সৌদি আরব ২০৩০ সালের মধ্যে সামরিক শিল্পে সরবরাহকারী দেশের তালিকায় নাম লেখাতে চাচ্ছে অন্যদিকে বাংলাদেশ ও ২০৩০ সালের ফোর্সেস গোল অনুসারে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করছে । সৌদি আরবের লালমনিরহাট বিমানঘাঁটির এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের সামরিক শিল্পের বিকাশে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে তা অনস্বীকার্য এবং এই MRO Facility এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর ও দুবাই এর মতো “এভিয়েশন হাব” পরিণত হতে পারে এর ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে ।