ছোটো থেকে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য স্কুল ব্যাংকিংয়ের সূচনা। স্কুল ব্যাংকিংয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে ব্যাংকগুলোতে এই কার্যক্রমের আওতায় খোলা হিসাবের পাশাপাশি আমানতের পরিমাণও বাড়ছে। বরাবরের মতো স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই এগিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ২১ লাখ ছাত্রছাত্রীর এখন ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আর তাদের জমানো অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৭টি। গত এক বছরে হিসাবসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৩৬টি। অর্থাত্ এক বছরে হিসাবসংখ্যার প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এই সময়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের জমানো আমানত বেড়েছে ৩৮০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, স্কুল শিক্ষার্থীদের হিসাব সংখ্যা ও টাকা জমার স্থিতির দিক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের অবদান সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো মোট ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৭টি ব্যাংক হিসাব খুলেছে, যা মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের ৬৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর স্কুল ব্যাংকিংয়ে মোট আমানতের ৮৫ ভাগই বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাবের ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ খোলা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে। ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ খোলা হয়েছে শহরাঞ্চলে। শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি হিসাব খুলেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে। এই ব্যাংকে ৪ লাখ ৩ হাজার ৩১৭ শিক্ষার্থী হিসাব খুলেছে, যা মোট হিসাবের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অপরদিকে স্কুল শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি টাকা জমা রেখেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে। এখানে তারা আমানত রেখেছে ৪৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যা মোট আমানতের ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুল ব্যাংকিং সেবাকে জনপ্রিয় করতে কোনো কোনো ব্যাংক আলাদা কাউন্টার বা ডেস্ক খুলেছে। জানা গেছে, স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং সুবিধা ও তথ্যপ্রযুক্তিগত সেবার সঙ্গে পরিচিত করানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের ২ নভেম্বর স্কুল ব্যাংকিং বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করে। এরপর থেকেই স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে। ২০১০ সালে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয় ২৯ হাজার ৮০টি। রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিংয়ে ভালো করেছে। স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাবের মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ বা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার হিসাব রয়েছে এ ব্যাংকে। স্কুল ব্যাংকিং বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. শামস-উল-ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমরা আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই হিসাব সংখ্যা বেড়েছে। মো. শামস-উল-ইসলাম বলেন, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক অন্তভুক্তিতে জোর দিচ্ছে। তারই অংশ হিসাবে স্কুল ব্যাংকিংকে আমরা আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই হিসাব সংখ্যা বেড়েছে।
স্কুল ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে বেশি হিসাব থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রমের মধ্যে যতগুলো খাত রয়েছে আমরা স্কুল ব্যাংকিংকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় আমরা লিড ব্যাংক পদ্ধতিতে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাব খোলার কাজ করেছি। স্কুল ব্যাংকিংকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণ হলো যারা একবার ব্যাংকে হিসাব খোলে তাদের আর্থিক শিক্ষার (ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি) বাস্তবিক জ্ঞান অর্জন হয়। এছাড়াও সঞ্চয় ও ব্যাংক হিসাবে নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যস্ত থাকলে তারা মোবাইল গেমসের মত বিপজ্জনক কাজ থেকেও বিরত থাকতে পারে বলে মনে করেন এই ব্যাংকার।