মহামারির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও এইচএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এমনকি এ বছর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাও হচ্ছে না।
এ অবস্থায় দ্বারপ্রান্তে নতুন শিক্ষাবর্ষ। অভিভাবকদের মধ্যেও সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
অনেকেই নিয়মিত স্কুলের ওয়েবসাইটে ঢু মারছেন। আবার কেউ কেউ ফোনে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নানা তথ্য নিচ্ছেন।
চলতি মাসের শুরু থেকেই বেসরকারি স্কুলগুলো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে শুরু করেছে। নামিদামি সব স্কুলই অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ করতে বলেছে। যেহেতু জন্মনিবন্ধন সনদ, ছবি স্ক্যানিং করতে হয় এবং প্রবেশপত্র প্রিন্ট করতে হয়, তাই কম্পিউটারের দোকানে যেতেই হচ্ছে বেশির ভাগ অভিভাবককে।
জানা যায়, এবার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে দুই প্রস্তাব দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে প্রতিটি শ্রেণিতেই শূন্য আসনে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা বলা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে পরীক্ষার ভেন্যু বাড়ানো হবে। গত সপ্তাহে এই দুটি প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তাদের অনুমোদনের ভিত্তিতেই ২০২১ শিক্ষাবর্ষের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পদ্ধতি চূড়ান্ত হবে।
মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, আমরা ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে একাধিক প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের।
তারা আমাদের প্রস্তাব থেকে যেকোনো একটি বিবেচনা করতে পারে, আবার নতুন কোনো পদ্ধতির কথাও বলতে পারে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখেই বেসরকারি বিদ্যালয়ের ভর্তি নীতিমালা করা হবে।
বিগত বছরগুলোতে শুধু প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করত স্কুলগুলো। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পিইসির নম্বরের ভিত্তিতে এবং নবম শ্রেণিতে জেএসসির নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি করা হতো। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে নেওয়া হতো লিখিত পরীক্ষা।
এবার সব শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করার বিপক্ষে বেশির ভাগ অভিভাবক। যদি আরো কিছুদিন অপেক্ষাও করতে হয়, তাহলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও ভর্তি পরীক্ষাই চান অভিভাবকরা।
বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর কেউ কেউ নীতিমালা প্রকাশের আগেই সরাসরি ভর্তি পরীক্ষার কথা বলেছে। আবার কেউ কেউ ভর্তির আবেদন নিচ্ছে। তারা বলছে, কোন পদ্ধতিতে ভর্তি করা হবে তা পরে জানানো হবে। তবে সবাই প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
গত ২৭ অক্টোবর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ। তৃতীয়, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে ৩ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে ৯ নভেম্বর থেকে, চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।
৬ ও ৭ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণির লটারি অনুষ্ঠিত হবে। ১০, ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ বলা হয়েছে। হলি ক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৭-১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম দেওয়া হয়, ২১-২৫ নভেম্বরের মধ্যে এই ফরম জমা দিতে হবে।
জানা যায়, রাজধানীর ৪২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে প্রথম শ্রেণি নেই। শুধু ১৪টি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হবে।
লটারি বা ভর্তি পরীক্ষা যে মাধ্যমেই ভর্তি নেওয়া হোক, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে ভর্তি ফরম ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে অধিদপ্তরের।
এবারও রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে ক, খ ও গ—এই তিনটি পৃথক গুচ্ছে (ক্লাস্টার) ভাগ করা হচ্ছে। আগে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি গুচ্ছ থেকে একটিমাত্র স্কুল পছন্দ করার সুযোগ পেত। আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজ গুচ্ছের অন্তত পাঁচটি স্কুল পছন্দ করার সুযোগ পাবে।