বিভাগ জাতীয়

স্থগিত রপ্তানি আদেশের ৮০ ভাগই ফিরেছে

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের প্রধান গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার চালু হওয়ার পর ধীরে ধীরে রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। ফলে করোনার প্রভাবে শুরুতে স্থগিত ও বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশের বেশির ভাগই তারা ফের নিচ্ছেন।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে বাতিল হওয়া রপ্তানি আদেশের ৮০ শতাংশই ফিরেছে। এক্ষেত্রে বিজিএমইএর পক্ষ থেকেও ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা কিংবা মধ্যস্থতা করা হচ্ছে। অবশ্য ক্রয়াদেশ ফিরলেও অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন বায়াররা। অনেক ক্ষেত্রেই ছয় মাস কিংবা এক বছরের মতো লম্বা সময় নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ডিসকাউন্ট দিতে বাধ্য করছেন।

যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, এরই মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি ফেরত এসেছে। তবে অর্থ পরিশোধ বিলম্বিত করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ১৫০ থেকে ১৮০ দিন কিংবা এক বছরও সময় নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ স্থগিত হওয়া রপ্তানি আদেশ নতুন করে দিলেও পণ্য নিবে আগামী বছর। এ পরিস্থিতিতে আমাদের কী করার আছে? তবুও অন্তত ক্রয়াদেশ বাতিল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি।

অন্যদিকে ঢালাও ক্রয়াদেশ বাতিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় বাংলাদেশ। গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বিজিএমইএ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৪১টি ব্র্যান্ডকে চিঠি পাঠিয়ে ক্রয়াদেশ স্থগিত কিংবা বাতিল না করতে অনুরোধ জানায়। এতে বলা হয়, প্রয়োজনে দেরিতে পাওনা মেনে নেওয়া হবে। অন্যথায় শ্রমিক ছাঁটাই ছাড়া তাদের আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। এর মধ্যেই গত মে থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার পোশাকের দোকানগুলো খুলতে শুরু হলে ফিরতে শুরু করে রপ্তানি আদেশ।

ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার বিস্তার বাড়তে থাকায় গত ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে একের পর এক স্থগিত ও বাতিল হতে থাকে রপ্তানি আদেশ। বিজিএমইএর হিসাবে, প্রায় তিন শতাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩১৫ কোটি ডলারের (স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা) রপ্তানি আদেশ স্থগিত করে। বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতিতে এসংক্রান্ত চুক্তির শর্ত দেখিয়ে একের পর এক স্থগিত করে রপ্তানি আদেশ। একই সুযোগে আবার কেউ কেউ পণ্যমূল্যের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দাবি করে। সবমিলিয়ে বিপাকে পড়েন রপ্তানিকারকরা। এ অবস্থায় অনেক উদ্যোক্তার পক্ষে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ কঠিন হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামমাত্র সুদে সরকার রপ্তানিকারকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা সুবিধা দেয়।

দেশের অন্যতম বৃহত্ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপ। এইচএন্ডএম, ওয়ালমার্ট, জি স্টার, জারা, পুমাসহ বেশকিছু ব্র্যান্ডের কাছে রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি। করোনা আসার পর দুটি ব্র্যান্ড বাদে বাকি ক্রেতারা ক্রয়াদেশের পণ্য নেওয়া স্থগিত করে দেয়। তবে গত দেড় মাসে সেগুলোর ৯৭ শতাংশই ফেরত এসেছে বলে ইত্তেফাককে জানিয়েছেন ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম ফিরোজ।

অন্তত ৮ জন রপ্তানিকারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে তাদের রপ্তানি আদেশ স্থগিত হলেও পরবর্তীতে তার বেশির ভাগই ফেরত এসেছে। অবশ্য নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা গ্রুপের প্রধান ও বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান জানান, তার স্থগিত হওয়া রপ্তানি আদেশ এখনো ফিরেনি।

বাংলাদেশ থেকে একক ব্র্যান্ড হিসেবে সবচেয়ে বেশি পোশাক পণ্য ক্রয় করে সুইডেনভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচএন্ডএম। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ অফিসের প্রধান জিয়াউর রহমান করোনা আসার পর তারা কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল করেননি। শুধু তাই নয়, কারো পাওনা পরিশোধেও দেরি করেনি। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় সম্প্রতি তাদের ক্রয়াদেশ বেশ ভালোভাবে ফিরে এসেছে। গত দেড় মাসে নতুন করে প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ দিয়েছে। এখন পরবর্তী গ্রীষ্মের জন্য অর্ডারের প্রস্তুতি চলছে। বিশ্বব্যাপী এইচএন্ডএমের ৫ হাজারের বেশি খুচরা দোকানের মধ্যে বর্তমানে ৯০ শতাংশই খোলা। বাংলাদেশের প্রায় ২৫০ রপ্তানিকারক এই ব্র্যান্ডের কাছে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। অবশ্য গত গ্রীষ্মের পণ্য গুদামে থেকে যাওয়ায় এবার গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ কেমন আসবে তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

গত জুনের রপ্তানির পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উত্সব বড়দিন উপলক্ষ্যেও ভালো রপ্তানি আদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তা কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের জন্য ইতিবাচক বলেই মনে করেন তিনি।

অবশ্য করোনার কারণে বিক্রি না করতে পারা পণ্য ব্র্যান্ডগুলোর কাছে রয়ে যাওয়ায় গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ কম আসবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। অন্যতম রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, এই সময়ে গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু তেমন আলোচনা হচ্ছে না। এটি আমাদের জন্য উদ্বেগের।

করোনার কারণে সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৬৮৬ কোটি ডলার বা প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার। স্বাধীনতার পর এত বেশি পরিমাণে রপ্তানি কমেনি বাংলাদেশের।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…

January 6, 2024

এমনটা কেনো করলেন এ. আর রহমান?

হিরো আলম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার পর সারা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। এমনকি ওই প্রতিবাদের…

November 12, 2023

ন্যানোমিটার সেমিকন্ডাক্টর বা চীপ তৈরিতে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে চীন

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন।…

September 25, 2023
Sponsored