করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় আড়াই মাস আইনজীবীরা বিশেষ করে জুনিয়র আইনজীবীরা প্রাকটিস করা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এতে অনেকেই আর্থিক সংকটে পতিত হয়েছেন। অনেকেই কষ্টে আছেন।
তাঁদের এই কষ্ট লাঘবের জন্য স্বল্পসুদে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মাধ্যমে এই ঋণ দেওয়া হবে।
ফরিদপুরে ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আটতলা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রবিবার ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. সেলিম মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য যথাক্রমে মনজুর হোসেন, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন), আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এওএম খালেদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেল হত্যা মামলা, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, হেফাজতে মৃত্যুর কারণে এই উপমহাদেশে প্রথম সাজাও তাঁর সরকারের সময় হয়েছে। তিনি বলেন, অপরাধীদের সাজা দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়।
কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়, এই দেশে সকলকেই আইন মানতে হবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটালে তার বিচার হবে এবং আইনসংগত সাজা হবে। এটা সকলকে মনে রাখতে হবে।
জনগণ আমাদের ওপর তখনই আস্থা রাখবে, যখন তারা সঠিক বিচার পাবে। রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ একটি। এই বিচার বিভাগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বিচারক ও আইনজীবীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইনস্টিটিউশন।
বিচার বিভাগকে কার্যকর করার জন্য বিচারক ও আইনজীবী অত্যন্ত মূল্যবান দুটি অঙ্গ। এই দুই ইনস্টিটিউশন মিলে জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের যে উন্নয়নের ধারা তা চলবে। দুই হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে যে ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সেটাও বাস্তবায়ন হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করলে জনগণ এসব কাজের সুফল পাবেন।
বর্তমানে ৩৭ লাখ মামলা জট রয়েছে। এ জট কমাতে হবে। আমরা Justice delayed is justice denied এবং Justice hurried is justice Buried-এই দুটোর মাঝখান দিয়ে যেয়ে এই মামলা জট কমানোর চেষ্টা করবো এবং জনগণের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।
জনগণের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দেওয়া না গেলে তার পরিণতি কি হবে সেটা মুখে উচ্চারণ করাও উচিত নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মতোই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, ব্রিটিশরা যে আদালত ভবনগুলো তৈরি করে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত অন্যান্য সরকার সেগুলোর কোনো পরিবর্তন করেনি।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বিচার বিভাগে বৃহদাকারে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে হাত দেন। তাঁর সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
সরকার জেলায় জেলায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন ও জেলা জজ আদালত ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছে। বিচারকদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে তাদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারণ শেখ হাসিনা মনে করেন বিচারকরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকলে তাঁরা কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন এবং জনগণ সুষ্ঠু বিচার পাবেন।
বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংবিধানে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কথা থাকলেও সামরিক ও খালেদা জিয়ার সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচার বিভাগের অনেক পজিটিভ পরিবর্তন আনেন এবং এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ করা হয়।