হু হু করে বাড়ছে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এখন প্রায় প্রত্যন্ত গ্রামে পাড়া মহল্লায় ঢুকে পড়েছে সংক্রমণ। আনলক ওয়ানে রাস্তায় বেরোচ্ছে আম জনতা, আর ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে সংক্রমণের গ্রাফচিত্র।অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা চাঙ্গা করতে লকডাউন তুলে নিয়েছিল সরকার। ঈদে দেওয়া হয়েছিল মানুষকে ঘরে ফেরার বিশেষ সুবিধা। এর মধ্যেই সরকার বুঝতে পেরেছেন এই সিদ্ধান্ত ছিল ভীষণ রকম ভুল। তাই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকা রেড জোনের মধ্যে পড়েছে। সিটি করপোরেশনের বাইরে তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সবক’টি উপজেলাকে রেড জোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন হচ্ছে আজ হতে।
গত কয়েকদিন ধরে দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই রেকর্ড গড়ছে। আজ মঙ্গলবারও আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে চার হাজার ছুঁইছুঁই।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১ হাজার ২৬২ জনে। এছাড়া একই সময়ে আরও ৩ হাজার ৮৬২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আজ ১৬ জুন মঙ্গলবার অপরাহ্নে রাজধানীর মহাখালিস্থ স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
বুলেটিনে আরও জানানো হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬১ টি পরীক্ষাগারে আরও ১৮ হাজার ৪০৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৭ হাজার ২১৪ টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭১৭ টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৮৬২ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৪ হাজার ৪৮১ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৫৩ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ২৬২ জনের।
পাশাপাশি গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বরও ২ হাজার ২৩৭ মোট ৩৬ হাজার ২৬৪ জন।
এদিকে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আশি লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দক্ষিণ আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে নতুন করে প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে প্রথমে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ২১ লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ হয়েছে। যা মোট আক্রান্তের ২৫ শতাংশ হবে। মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ছাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকায়ও দ্রুত মহামারী ছড়িয়ে পড়ছে। মোট আক্রান্তের ২১ শতাংশই এই অঞ্চলটিতে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় বিশ্বের দ্বিতীয় হটস্পটে রূপ নিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল।
জানুয়ারির শুরুতে চীনে প্রথম এই ভাইরাসটির প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। এরপর মে নাগাদ আক্রান্তের সংখ্যা চল্লিশ লাখে পৌঁছায়। এই সংখ্যাটা দ্বিগুণ অর্থাৎ আশি লাখ ছুঁইতে সময় নেয় মাত্র দুই সপ্তাহ।
করোনায় এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই এক লাখ ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে আশার কথা হলো সারা বিশ্বে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে ৪২ লাখ ১৬ হাজার ৩১৮ জন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।