দেশে করোনার বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে দায়িত্ব পালনকারী ২১৭ জন পুলিশ, ২৩১ জন চিকিৎসক, ৫৭ জন নার্স এবং ১৪৬ নার্স প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া, যারা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছে তাদেরকে হোম কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের বুধবার বিকেল পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের ২১ সদস্য করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, এর মধ্যে শুধু ডিএমপিতেই দায়িত্বরত ১৬ জন। এ নিয়ে দেশজুড়ে ২১৭ জন পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটে রয়েছেন ১১৭ জন।
ডিএমপির পর সর্বোচ্চ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে (জিএমপি) ২৬ জন সদস্য করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জে ১৬ জন, গোপালগঞ্জে আক্রান্ত ১৮ জন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) ৩ জন, বিশেষ শাখার (এসবি) ৫ জন, পুলিশের টিঅ্যান্ডআইএম’এ ১ জন, এপিবিএন-২ ময়মনসিংহে ১ জন, নৌ পুলিশে ১ জন, এন্টি টেরোরিজম ইউনিটে ১ জন, কিশোরগঞ্জে ৯ জন, গাজীপুরে ৭ জন, নরসিংদীতে ৬ জন, শেরপুরে ৩ জন, ঢাকা জেলায় ২ জন, মুন্সিগঞ্জে ১ জন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ৮ মার্চের পর থেকে মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় পুলিশের ৭৭৭ জন সদস্যকে। এদের মধ্যে ২৯৮ জন কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে ২৫৯ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৬৩ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৪৬ জন এবং আইসোলেসন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫ জন।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসে সংক্রমিতদের প্রয়োজনে পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সাধারণ আক্রান্তদের আইসোলেটেড করতে ব্যারাকের বাইরে রাখা হচ্ছে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের ব্যারাকের বাইরে সরকারি ভবন ও হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা সুস্থ আছেন তাদের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬ জন চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩১ জনে। এদের মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন দুই জন। একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর তিন জন চিকিৎসক সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৫ জনের বেশি। বাকিরা বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফোরাম (বিডিএফ)-এর প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরুপম দাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৪ চিকিৎসক। ময়মনসিংহ বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ জন ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন। এছাড়া রংপুরে ৩ জন, খুলনায় ৩ জন, বরিশালে ৭ জন এবং সিলেট বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন একজন। এ পর্যন্ত সবমিলিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩১ চিকিৎসক।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২৩১ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা এর বাইরে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৯ জন নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৬ জনে। আক্রান্তের বেশিরভাগই নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন। কয়েকজন নার্সিং কর্মকর্তা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন তিন জন। আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছে এমন ৩৮০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
বুধবার রাতে সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস এর মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ সংগঠনের তথ্য মতে, ২৭টি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু মাত্র ঢাকা বিভাগেই আক্রান্ত হয়েছে ১২৬ নার্স। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্বোচ্চ ১৬ জন এবং স্যার সল্লিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন। ঢাকা জেলায় ৭৬ জন, গাজীপুরে ১৫ জন, নারায়ণগঞ্জে ৫ জন, কিশোরগঞ্জে ১৮ জন, নরসিংদীতে ১২ জন এবং ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও ৪২ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত।
সাব্বির মাহমুদ তিহান জানান, ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহে ১৪ জন, বরিশালে ৪ জন ও রংপুরে ১ ও সিলেটে ১ জন নার্সিং কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে ২ জন মিডওয়াইফ ও ২ জন অন্তঃসত্ত্বা নার্সও রয়েছেন।