জীবন বিনাশী করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ যেন কমছেই না। কার্যত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে অঞ্চল ভিত্তিক লকডাউন শুরু হওয়ার পাঁচ দিন। আর এর মধ্যে প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণের নিত্যনতুন রেকর্ড গড়ছে দেশ। তবে সুস্থ হয়ে উঠার সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। এ পর্যন্ত ৪৩ হাজারেরও বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন
গত ২৪ ঘন্টায় দেশে প্রাণঘাতী করোনায় কেড়ে নিলো আরও ৩৭ জনের প্রাণ। যার হাত ধরে দেশে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৪২৫ জন।নতুন শনাক্ত ৩২৪০ জন সহ দেশে এই মুহুর্তে শনাক্ত এক লাখ আট হাজার ৭৭৫ জন। তবে আশার কথা হলো গত ২৪ ঘন্টায় ১০৪৮ জন সহ মোট ৪৩ হাজার ৯৩৩ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
আজ ২০ জুন শনিবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর মহাখালিস্থ স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ৭৭৯ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৪ হাজার ৩১ টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৯ টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ২৪০ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৮ হাজার ৭৭৫ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৭ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৪২৫ জনের পাশাপাশি গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আরও ১ হাজার ৪৮ জন মোট ৪৩ হাজার ৯৩৩ জন।
বুলেটিনে ডা. নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২৩.০৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০.৪৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আজ মৃতদের লিঙ্গ বিভাজন ও বয়স পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হবে বললেন। যা হতাশা জনক।
এদিকে বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি জানার অন্যতম ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের মোট ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৮ জন। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে মারা গেছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৭০৬ জন। তবে ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪৬ লাখ ২৮ হাজার ৬০৬ জন।
অর্থাৎ এখনও বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর তুলনায় সুস্থ হয়ে উঠাদের সংখ্যা ১০ গুণের বেশি। এই পরিসংখ্যান আমাদের আশার আলো দেখায়।
২০১৯ এর ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম হামলা হয়েছিল করোনার। চীন থেকে ইরান হয়ে ইউরোপের ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে মরণ কামড় বসিয়েছে করোনা।
ইউরোপকে তছনছ করার মধ্যেই উত্তর আমেরিকায় হামলা শুরু করে করোনা। এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছে মোট ১ লাখ ২১ হাজার ৪০৭ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ লাখ। অর্থাৎ সেখানে আক্রান্ত ২২ লাখ ৯৭ হাজার ১৯০ জন।
বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের। শুক্রবারও সেখানে ৫৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত এবং আরও ১ হাজার ২২১ জন মারা গেছে। ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬৮ জন। আর মোট মারা গেছে ৪৯ হাজার ৯০ জন। দেশটিতে সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও তুলনামূলক কম। সেখানে মোট সুস্থ হয়েছে ৫ লাখের বেশি মানুষ। আর চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ১১৮ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এই অবস্থা চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা দখল করে নেবে দেশটি। করোনা তালিকায় দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে রয়েছে ট্রাম্পের দেশ।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে জার্মানিতে। সেখানে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৯০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজার ১শ জনই সুস্থ হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় ৯ হাজার মানুষ। বর্তমানে দেশটিতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা মাত্র ৭ হাজার ৩০০ জন।
এছাড়া সুস্থ হওয়ার তালিকায় এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো।
এদিকে করোনা তালিকার সেরা পাঁচে থাকা বাকি তিনটি দেশ হচ্ছে যথাক্রমে রাশিয়া (আক্রান্ত ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩ জন; মৃত্যু ৭ হাজার ৮৪১ জন, ভারত (আক্রান্ত ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৮১২ এবং মৃত্যু ১২ হাজার ৯৭০ জন) যুক্তরাজ্য (আক্রান্ত মোট ৩ লাখ ১ হাজার ৮১৫ জন ও মৃত্যু ৪২ হাজার ৪৬২ জন) ও স্পেন (আক্রান্ত ২ লাখ ৯২ হাজার ৬৫৫ জন ও মৃত্যু ২৮ হাজারের বেশি)।
আফ্রিকার কিছু দেশেও বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। তবে আপাতত নিরাপদ অস্ট্রেলিয়া এবং ওশেনিয়া মহাদেশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) রিপোর্ট বলছে, এবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি যেমন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে করোনার সামাজিক সংক্রমণ ও মৃত্যু রীতিমতো উদ্বেগ তৈরি করছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।