এক লক্ষ টাকা রেমিট্যান্স বৈধ উপায়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠালে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা হারানোর সব থেকে বড় কারন হল হুন্ডি। দেশে বৈধ পথে যে পরিমান অর্থ রেমিট্যান্স হিসাবে আসে হুন্ডির ক্ষেত্রে ঠিক সেই পরিমান বা তার বেশি অর্থের লেনদেন হয়।
প্রশ্ন হল হুন্ডি কি? গ্রামে এটাকে বলে হাতে হাতে টাকা পাঠানো। একটা উদাহরন দেয়া যাক। ধরুন করিম সাহেব সিঙ্গাপুর এ জব করেন। এখন তাকে দেশে টাকা পাঠাতে হবে ১ লক্ষ টাকা। সেক্ষেত্রে সে সিঙ্গাপুরে কোন দালালকে সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার দিয়ে দিল। সেই দালালের সাথে যোগাযোগ আছে এদেশের দালালের। এদেশের দালাল কে সিঙ্গাপুর থেকে বলে দেয়া হল করিম সাহেবের বাসায় ১ লক্ষ টাকা পৌছে দিতে।
এখানে সিঙ্গাপুর থেকে কষ্ট করে ডলার আয় করা হলেও সেই ডলার সিঙ্গাপুরের অন্য কারো হাতে দেয়া হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার একটি টাকাও দেশে আসেনি। দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আবার এদেশে একজনের টাকা অন্য জনের কাছে হাত বদল হয়েছে। মুলত হুন্ডি করলে দেশে একটি বৈদেশিক মুদ্রাও আসেনা।
কিন্তু সরকারের ২% প্রণোদনা ঘোষনার পর পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে। জুলাই থেকে অক্টোবর মাত্র চার মাসেই রেমিট্যান্স এসেছে $৬.১৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫২০০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এই চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল $৫.১১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চার মাসে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে প্রায় $১.০৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৮৬০০ কোটি টাকা। ২০% এর বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেটা অকল্পনীয়। সেই সাথে টাকার মান কমে যাওয়ার কারনেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকার ২% অতিরিক্ত টাকা দেয়ার জন্য ভর্তুকি হিসাবে এক বছরের জন্য বরাদ্ধ করেছে ৩০৬০ কোটি টাকা। কিন্তু এর প্রভাব কতটা বেসি যে প্রথম চার মাসেই ৮৬০০ কোটি টাকা বৈধ পথে দেশে এসেছে। হয়ত এই ৩০৬০ কোটি টাকা ভর্তুকির জন্য বছর শেষে আমাদের অতিরিক্ত আসবে ৩০০০০ কোটি টাকার বেশি। এতে রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে। ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চাপে থাকতে হবে না।
রপ্তানি বাড়ছে না। কিন্তু রেমিট্যান্স এর কারনে আমরা সেটার প্রভাব অনুভব করছিনা। আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত হয়েছে।
গত মাসে মানে অক্টোবরেই দেশে রেমিট্যান্স এসেছে $১.৬৪ বিলিয়ন। সাধারনত শুধু দুই ঈদের আগেই কেবল এত বেশি রেমিট্যান্স আসে। আর এখন প্রতি মাসেই ঈদের মত বেশি রেমিট্যান্স আসা শুরু হইছে। গত বছর অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছিল $১.২৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রায় ৪০ কোটি ডলার বেশি এসেছে শুধু এই অক্টোবরেই।
যেহেতু প্রথম চার মাসে $৬.১৫ বিলিয়ন ডলার এসেছে। বাকি ৮ মাসে এভাবে আসলে হয়ত ২০১৯ সালে $১৮/$১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স থেকে আসবে যেটা হবে আমাদের জন্য রেকর্ড।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১.২ কোটি বাংলাদেশি কাজের সন্ধানে বিদেশে গেছেন। তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কারনেই আজ বাংলাদেশ গর্বের সাথে এগিয়ে চলছে।
Leave a Comment