সিরাজুর রহমান: চীনের শি জিং পিং সরকার তাদের বাজারে বাংলাদেশের ৫,১৬১ পন্যের শুল্ক মুক্ত রপ্তানির সুবিধা ঘোষণা করেছে। এর ফলে চীনের বিশাল বাজারে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি পণ্যের ৯৭% পর্যন্ত শুল্ক মুক্ত প্রবেশের সুবিধা পেল এবং এর মাধম্যে অদূর ভবিষ্যতে চীনের বাজারে নতুন করে আনুমানিক 2.০০ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানির বিশেষ সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
চীনের বাজারে পন্য রপ্তানির শুল্ক সুবিধা আগামী ১ জুলাই ২০২০ থেকেই কার্যকর হবে বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে চীন সরকার। আর ১৮ই জুন তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো জরুরী বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন চীনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান।
চীনের শি জিং পিং সরকারের শুল্ক মুক্ত সুবিধার এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির বাজারে বাংলাদেশ যত পণ্য পাঠাবে তার ৯৭ শতাংশই শুল্ক মুক্ত সুবিধা পাবে এবং এটি বাংলাদেশের বার্ষিক বৈদেশিক রপ্তানি বৃদ্ধিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চীনের প্রদত্ত এই শুল্ক সুবিধা এক অর্থে শত ভাগ শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধার পর্যায়ে বলা চলে। কারণ বাংলাদেশ থেকে যত ধরনের পণ্য চীনে রপ্তানি হয় তার মধ্যে মাত্র তিনটি পন্য বাদে সব রপ্তানিযোগ্য পণ্যই বিনা শুল্কে চীনের বাজারে প্রবেশের বিশেষ সুবিধা পেতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বানিজ্যে এখনো পর্যন্ত ব্যাপক আকারের ঘাটতি বিদ্যামান। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ চীনের বাজারে ৪৭০.২০ মিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করে এবং ২০১৮-১৯ সালের অর্থ বছরে বাংলাদেশ মোট ৮৩১.২০ মিলিয়ন ডলারের পন্য চীনে রপ্তানি করে। তবে ঠিক একই সময়ে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশ চীন থেকে ১৩.৬৩ বিলিয়ন ডলারের পন্য আমদানি করে। যা কিনা আমাদের মোট আমদানির ২৬.১০% এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫২.১০ বিলিয়ন ডলার।
তাই চীনের সাথে আমাদের এই বিশাল আকারের বানিজ্য ঘাটিতি কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে চীন সরকারের সাম্প্রতিক ৯৭% পন্যের উপর শুল্ক মুক্ত সুবিধা। সে হিসেবে আমাদের বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থ বছরের মধ্যেই চীনের বাজারে খুব সহজেই ২.০০ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে তা ৫.০০ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করার সমুহ সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। যেখানে প্রত্যাশা করা হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থ বছরে চীন বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃ বানিজ্য ১৮.০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে।
তাছাড়া চীনের অভ্যন্তরীণ পোশাক বাজার কিন্তু বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার। ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, চীনের পোশাক গার্মেন্টসের অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্য ৩৫০.০০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ শুল্ক মুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনের এই বিশাল পোশাক বাজারের মাত্র ২% রেডিমেড গার্মেন্টস রপ্তানি করতে সক্ষম হলে তা হবে আমাদের জন্য এক বড় অর্জন। আর এই ২% রপ্তানি বানিজ্য টাকার অংকে হিসেব করলে তা ৭.০০ বিলিয়ন ডলারে পৌছে যায়।