বোরহান মেহেদী: বসন্ত যখন দুয়ারে কড়া নাড়ে, তখন ডালে শিমুল ফুল ফোটে। প্রকৃতির কিশোরী কণ্যা শিমুল, আলতা রঙ ঠোটে পরাণ তার আকুল। বুকে রঙ-রসের ফোয়ারা, পাখ-পাখালির সাথে বাড়ায় সুরা মজা। মৌ চোর পঙ্খীদের উড়াউড়ি, ডাল থেকে ডালে শালিকের পালক নাচে ত্বরি। শিমুল ফুল অনাবিল সুন্দরের রানি , বাজায় প্রাণে আগুনের পরশমনি।
দক্ষিণা বাতাসে আমের মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ চারিদিক। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়ার দোলা। গাছে গাছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল সমারোহ স্পর্শে শীত বিদায়ের শঙ্খধ্বণিতে আসে ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ফুটে তখন নয়নাভিরাম শিমুলের লাল কলি। প্রতিটি গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে বার্তা দেয় বসন্ত আগমনের।
এই আকর্ষনীয় মনলোভা প্রকৃতির সাঁজ শিমুল ফুল এক অনিন্দ্য সৌন্দর্য। ভাবুক মনের সরসী হৃদ্ধ স্পর্শিত সময়ের রূপের পলক ছোঁয়া ছবি। পৌষ শেষে যখন হালকা শীতের আমেজ চারিদিক। সে সময়ে মাটি ও পল্লবিত বৃক্ষে নরম শ্বাসে বাতাস চোখ মেলে তাকায়। কোথাও কোথাও মেহগনির নেংটা চিত্রে ঠায় দাঁড়িয়ে ন্যাড়া কান্ড ঝিমুয়। আবার কোন কোন বৃক্ষ নতুন পত্রপল্লবে উৎফুল্লতার নৃত্য নটিনী ঝর্ণাতালের নূপুর নাচ।
ফাল্গুনের শুরুতেই বাংলার রূপ অপরূপের সুন্দরের মুর্ছনা শিমুল ফুল, শিমুল বৃক্ষের ডালের ডগা ছুঁয়ে জোড়া বৃন্তে ডিম্বাকারে ছোট ছোট হয়ে কলিতে প্রকাশ ঘটে। পরে অল্পদিনের মধ্যেই ফ্যাকাসে মরিচা রঙ থেকে কলি জ্বলজ্বলে লাল রঙে ফুটে উঠে। বাংলাদেশে শিমুলের ৩টি প্রজাতির দেখা যায়। যেমন কমলা, হুলদ ও লাল রঙের ফুলে বিভক্ত। কিন্তু কান্ড, ডালপালা, কাঁটা ও নরম প্রকৃতির হয় এই বৃক্ষ।
শিমুল বৃক্ষ শতবর্ষী হয়ে বেচে থাকে। এই বৃক্ষ শীতের আগমনে পাতা ঝরে নেড়া হয়ে যায়। আর এসময়টি হচ্ছে পৌষ-ফাল্গুন মাস। এ বৃক্ষ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিল, বকসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করে। শিমুল ফুলে মধুর রস থাকে বলে পাখপাখালির সখ্যতা বা মধুর মিলন চিরন্তন।
প্রকৃতির কণ্যা এই শিমুল ফুল আমাদের শিশু তরুন যুবক বৃদ্ধ সবার কাছে ভালো লাগা বা ভালোবাসার এক আকর্ষনীয় প্রতিক, তেমনি কবি সাহিত্যিকদের কাছেও কাব্যকলার এক নান্দনিক উপমা অলংকরন হিসেবে বহুল ব্যবহৃত একটি ফুল। বসন্তের অবির্ভাবে যখন নবরূপে সাঁজে প্রকৃতি তখনি ঋতুরাজকে গর্বীত অলংকরনে ভরিয়ে দিপ্তীমান করে তোলে শিমুল ফুল।
যৌবনের গান গেয়ে উঠে শিমুলের লাল-হলদে পরাগ। এর নজরকাড়া প্রস্ফুটিত রূপ, দখিনা বাতাসে দোল খেয়ে যেন ডেকে বলে, আমি শিমুল প্রেমিকজনের আদরণীয় প্রেমের এক আগুন কণ্যা। এসো পথিক প্রেমিক বলো কানে কানে এক্ষুনি, বিরহ দ্রোহের নাবলা কবিতা খানি। আমি আজ শুনবো পরাণের ঘোমটা খুলে-আমি দেখবো তোমায় নিলাজচোখ খোলে। প্রণয়নী মোহ হৃদস্পন্দন-দখিনা দোল, আমি প্রকৃতির বর্ণময়ী ভালোবাসার রূপ কন্যা শিমুল ফুল।