সাম্প্রতিক শিরোনাম

চলমান পরিস্থিতিতে মুক্ত গণমাধ্যমদিবস ও আমাদের মূল্যায়ন : আলাউদ্দিন আহমেদ

এবারের বিশ্ব গণমাধ্যম মুক্ত দিবস পার হলো ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। শুধু করোনা ভাইরাস আক্রান্তে সারাবিশ্বে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে ৫৫জন সাংবাদিকের অকাল মৃত্যু হয়েছে তাই নয়; আমাদের বাংলাদেশে আলোচিত ডিজিটাল আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সাংবাদিক গ্রেফতার, হয়রানি, মানসিক চাপ সৃষ্টি, মিডিয়া হাউজগুলো থেকে ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

মে’র তিন তারিখ ছিল বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। অন্যান্য বছর এই দিবসটি মিডিয়াকর্মীরা সারাদেশে বিভিন্ন আয়োজনে পালন করে থাকে। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকলে নাজেহাল। সুতরাং আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করার সুযোগ ছিলনা। কিন্তু মিডিয়াকর্মীরা পালন করতে না পারলেও তাদেরকে নাজেহাল করার মত বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে নিখোঁজ ফটোসাংবাদিক ও পক্ষকাল সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজল বেনাপোল থেকে উদ্ধার হওয়ার পর হাতকড়া পরিয়ে পিঠমোড়া করে যশোরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা।
তিনি ২রা মে উদ্ধার হন। সাংবাদিক কাজল গত ১০ই মার্চ সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয়েছিলেন। পাপিয়াকান্ডে একজন এমপি আদালতে যে মামলা করেছিলেন তাতে সাংবাদিক কাজলের নামও ছিল।

এখন প্রশ্ন হলো সাংবাদিক কাজল কি মহাঅপরাধি-? তিনি কি ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, রাষ্ট্রদ্রোহ অথবা এ ধরনের কোন বড় অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন-! তাঁকে পিছমোড়া করে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি বিভিন্ন চ্যানেলে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
গত ৫ এপ্রিল আইন ও শালিশ কেন্দ্র প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ৫১ জন সাংবাদিক বিভিন্ন পর্যায়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। মাত্র কয়েকদিন আগে ত্রাণ চুরির সংবাদ প্রকাশ করায় জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও বিডি নিউজের সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হলো, শুধু হয়রানি করার জন্য। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচার তো দূরের কথা তদন্তই হলো না। হাতবদল হলো তদন্ত কর্মকর্তার। পরিবর্তন হলো তদন্ত সংস্থার। কাজের কাজ কিছুই হলো না। দেশের প্রথম সারির একটি বাংলা দৈনিকের সম্পাদকের বিরুদ্ধে একটি সংবাদের রেশ ধরে একই সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি মামলা হলো। আরেকটি বাংলা সংবাদপত্রের অফিস তালাবদ্ধ। পত্রিকাটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা। জেলে থেকেছেন দীর্ঘদিন। একটি মামলায় কুষ্টিয়ার আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হয়েছেন তিনি। এখন তো দেশছাড়া।
ঈশ্বরদীর একটি অনলাইন পোর্টালের ৪জন সাংবাদিকও ডিজিটাল আইনে মামলার শিকার হয়েছেন।

শুধু এ ধরনের মামলা-মোকদ্দমায় সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাই নয়, মিডিয়া কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন অনেক মিডিয়াকর্মী। করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যেই সাংবাদিক ছাঁটাই করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান; যা এই সংবাদকর্মীদের চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।
মহামারীর মধ্যেই বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সারাবাংলাডটনেট থেকে এক ডজনেরও বেশি সাংবাদিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির নেতা ও কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন আহমেদের মালিকানাধীন এসএ টেলিভিশন থেকেও প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
এছাড়াও আলোকিত বাংলাদেশ এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল আগামী নিউজেও ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক বাংলাদেশের খবর, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকাসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র ছাপা বন্ধ রেখে শুধু অনলাইন সংস্করণ চালু রেখেছে।

পাটমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান গাজী টেলিভিশনে কোনো নোটিস ছাড়াই দুইজন নিউজরুম এডিটরসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে।
এর আগে মার্চের মাঝামাঝিতে সারাবাংলাডটনেট-এর বার্তা সম্পাদকসহ চারজন সংবাদকর্মীকে ইস্তফা দিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য করায় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী সম্পাদকও ইস্তফা দেন।
একই দিন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের পাঁচ সাংবাদিককে ছাঁটাইয়ের নোটিস দেওয়া হয়।

উল্লেখিত সামগ্রিক এই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করলে সহজেই বোঝা যায় আমরা বাংলাদেশের মিডিয়াকর্মীরা কত উৎসাহ-আনন্দে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করলাম।

আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করার সময় ঢাকায় সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিকবার আপত্তি জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে আন্দোলন লেখালেখি কম হয়নি। তখন বলা হয়েছিল, এই আইনের কোন অপব্যবহার হবেনা, মিডিয়াকর্মীরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবে ইত্যাদি। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ কিভাবে হয় তা যশোরের ফটো সাংবাদিক কাজলের পিছমোড়া করে হ্যান্ডকাপ পরানো ছবি দেখেই বোঝা যায়। এই অবস্থায় তাঁর তরুন বয়সী সন্তান বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি। তখন সাংবাদিক কাজল বললেন, ‘বাবা কোন চিন্তা করিসনা, আমি কোন অপরাধ করি নাই। সব ঠিক হয়ে যাবে’। এই দৃশ্যটি যারা দেখেছেন তারা নিশ্চয় কষ্ট পেয়েছেন।

অবশ্য মিডিয়াকর্মীরা কোন ঝামেলায় পড়লে একশ্রেনীর দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, আমলা, সমাজপতি বেশ পুলকিত বোধ করেন। কারন এদের কাছে মুলধারার সাংবাদিক ও সংবাদপত্র বিপদজনক, তাদের দুশ্চিন্তার কারন। এই শ্রেনীর মানুষগুলো সব সেক্টর ম্যানেজ করে অপকর্ম চালায়। কিন্তু মুলধারার কিছু মিডিয়াকর্মীর ঘাড়ট্যারা। এদেরকে ম্যানেজ করা যায়না। তারা সংবাদপত্রের নিয়মনীতি অনুসরণ করে সঠিক ভূমিকা রাখতে যেয়ে ওদের বিরাগভাজন হন। ফলে যখন কোন মিডিয়াকর্মী ঝামেলায় পড়েন তখন ওরা মহাখুশি হয়।

সবমিলিয়ে এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসটি মোটেই আমাদের জন্য ভাল ছিলনা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত মিডিয়াকর্মীরা নিজেদের সংগঠনের বিভাজন, নেতৃত্বের দুর্বলতা, উল্লেখিত অসৎ ব্যক্তিদের সাথে দহরম-মহরম থাকার কারনে সহজেই নাজেহাল হন। এদের একটি অংশ মিডিয়া সেক্টরে অনুপ্রবেশ করে পেশাদারিত্বের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত রয়েছেন। মিডিয়াকর্মীরা হয়রানির শিকার হলেও নেতৃত্বের নানাবিধ দুর্বলতার কারনে বাস্তবে কোন প্রতিবাদসহ ভূমিকা রাখতে পারেনা। পরিবেশের এই বাস

সর্বশেষ

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ফান্ড আওয়ামী ঘরানার দুই ইয়েলো...

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড" বা অগ্রগামী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি...

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং...

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...