“মাই মম ইজ ভেরী হট, ভেরী সেক্সি। হার ক্লিভেজ আর জাস্ট ওয়াও।“ বছর দেড়েক আগে উঠতি বয়সের (১৫/১৬ বছর) তিন চার জন আইরিশ বালকের গল্প শুনছিলাম। তাদের মধ্যে একজন তার মা সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্যটি করে বসে। তার এ কথা শুনে আমি রীতিমতো ভড়কে গেলাম। কোন সন্তান নিজ মা সম্পর্কে এমন কুৎসীত মন্তব্য করতে পারে তা আমার জানা ছিলনা। পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থা বেশ আধুনিক ও সভ্যতার দাবীদার। কিন্তু এর অর্থ তো এই নয় যে, আধুনিকতা মানেই নোংরামি। আদিম বন্যতা পেরিয়ে পৃথিবী যখন ডিজিটাল সভ্যতার উপর ভাসছে এমন এক সময়ে সভ্য সমাজের কেউ এ হেন ঘৃণিত অসভ্যতার সাথে গলাগলি করতে পারে তা আমার ধারণারও বাইরে। তবে কি আমরা সত্যিকার সভ্যতার সন্ধান এখনো পাইনি? পেয়ে থাকলে সমাজে এখনো কেন এতো অসভ্যতার ছড়াছড়ি?
Morality বা নৈতিকতা সভ্যতার পূর্ব শর্ত। ব্যক্তিগত বা সামাজিক ভাবে সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আগে নৈতিক শিক্ষার ভিতকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। যে দেশ, অঞ্চল বা জাতি নৈতিক শিক্ষায় যতো বেশি উন্নত সে দেশ বা জাতি ততো বেশি আধুনিক ও সভ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরা আজকাল সভ্যতা ও আধুনিকতাকে অন্য কিছুর সাথে ঘুড়িয়ে ফেলি। যে যতো বেশি খোলামেলা পোশাক আশাক পড়বে, নগ্ন আচার আচরন করবে, যতো বেশি এলকোহল বা ড্রাগে আসক্ত হবে কিংবা সমজাতীয় লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারবে সে ততো বেশি আধুনিক। আর আধুনিক মানেই সভ্য। আফসোস, আধুনিক ও সভ্যতার সংজ্ঞাটাকে পাল্টে দিয়ে আমরা কেবল এ শব্দ দুটোর সঙ্গে প্রতারণাই করছিনা বরং শব্দ দুটো মেকী সভ্যতার দাপটের মুখে মারাত্নক ভাবে অসহায় ও অবহেলিত। এ জন্য দায়ী কে?
যে কিশোরটি তার মা সম্পর্কে বন্ধুদের কাছে এমন জঘন্যতম মন্তব্য করে মজা পেলো তার জন্য দায়ী কে? শধু কি ওই কিশোরটিই এর জন্য দায়ী? নাকি তার মা বাবা সহ পরিবার পরিজন, সমাজ, মিডিয়া, রাষ্ট্র সবাই এর জন্য দায়ী?
একজন কিশোর বা কিশোরী যা দেখে তাই শেখে। তাই অনুসরণ করে। এ বয়সের ছেলেমেয়েরা বেশ প্রাণবন্ত থাকে। তাদের মধ্যে ডিপ্লমেসি (Diplomacy) কাজ করেনা। সত্যকে সত্য, মিথ্যেকে মিথ্যে বলার সৎসাহস তারা রাখে। ব্যক্তিত্বের জাগরণ ঘটার এ বয়ঃসন্ধি কালে তারা কোনো অন্যায় অপবাদকে ছাপিয়ে চলতে পারেনা। তাইতো ওই কিশোর কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে অতি সহজেই কঠিন সত্যটি তার বন্ধুদের কাছে বলে ফেললো। সে যা দেখেছে তা সত্যি। আর এ সত্যি কথাটা কোনো বাহানা ছাড়াই প্রকাশ করলো। এ প্রকাশ সুন্দরের প্রকাশ। এ প্রকাশ সত্যের প্রকাশ। সত্য যতো কুৎসীত, জঘন্য, কুরুচিপূর্ণ বা কঠিনই হোকনা কেনো তা অকপটে প্রকাশ করাই একজন কিশোরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
কিশোররা যেহেতু অনুকরণ ও অনুসরণশীল এবং সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতে মোটেও দ্বিধাগ্রস্ত নয় সেহেতু বয়োজ্যেষ্ঠদেরই উচিত সাবধানতা অবলম্বন করা। তাদের এমন কিছু করা বা এমন ভাবে চলা সমীচীন নয় যা কিশোরদের কচি মনে কালো মেঘের মতো রেখাপাত করে। উঠতি বয়সের যে ছেলেটি মা সম্পর্কে রসালো মন্তব্য করে বন্ধুদের সাথে মজা লুটলো তার জন্য ওই ছেলেটি মোটেও দায়ী নয়। বরং তার মা’র অশালীন চলাফেরা, আপত্তিকর পোষাক-পরিচ্চদ সর্বোপরি বেলেল্লাপনাই এর জন্য দায়ী।
আইরিশ সমাজে এ ধরণের বেলেল্লাপনা বেশ স্বাভাবিক। খোলামেলা চলাফেরা বলতে গেলে তাদের সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যের একটা অংশ। তবে সবাই যে এ সংস্কৃতির ভক্ত তা কিন্তু নয়। তাদের মধ্যেই অনেকে আছে যারা এ সংস্কৃতিকে বাঁকা চোখে দেখে। অবশ্যি তাদের এ আচার, সংস্কার বা সংস্কৃতি নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিশোর ছেলেটির কথা শুনে আমি ভড়কে গিয়েছিলাম বটে কিন্তু শংকিত হইনি। আমি শংকিত হই তখন যখন দেখি তাদের এ সংস্কার, আচার, রীতি আমাদের মাঝেও ভূত হয়ে বাসা বাঁধে।
আমাদের দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানেও এ সংস্কৃতি পাড়ি জমিয়েছে। দেশীয় সংস্কৃতিকে পরাস্ত করে বেশ দাপটের সঙ্গে এ সংস্কৃতি আজকাল রাজত্ব করছে। রাস্তাঘাটে ছেলেমেয়েদের ইচ্ছেমাফিক চলাফেরা, কলেজ ইউনিভার্সিটি গুলোতে গাঁজা ইয়াবার ছড়াছড়ি, মেয়েদের সিগারেটে ফুকটান দেয়ার পশ্চিমা ভঙ্গি, চলচ্চিত্র ও ছোট পর্দায় অভিনেতা অভিনেত্রী এবং উপস্থাপিকাদের বেশভূষার খোলামেলা ঢং দেখে মনে হয় আমরা আর আগের সংস্কৃতিতে নেই। হাজার হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ভুলে গিয়ে, ভিনদেশি বিজাতীয় সংস্কৃতির আজ্ঞাবহ হয়ে উঠে নিজেদেরকে নগ্ন আধুনিক করে তোলার যুদ্ধে লিপ্ত। এ যুদ্ধ যুগ যুগ ধরেই ছিলো। কিন্তু ইদানিং তা সীমা অতিক্রম করে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে। যার ফলে বাংগালি স্বকীয়তা ও সংস্কৃতির আকাশে দেখা যাচ্ছে দুর্যোগের ঘনঘটা। অপসংস্কৃতির মরণ কামড়ে জাতি আজ বিদগ্ধ। তাই আমার ভয় হয়, শংকা হয়, আইরিশ বালকটির মতো আমার দেশের সোনার ছেলেরাও কখন যেনো বলে উঠে, ” মাই মম ইজ ভেরী হট এন্ড সেক্সি, হার ক্লিভেজ আর জাস্ট ওয়াও।”
লেখক: আয়ারল্যান্ড প্রবাসী প্রাবন্ধিক ও কলামিসট।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment