ফেসবুকে সক্রিয় হয়ে থাকলে এই ডায়লগ সংবলিত ভিডিওটা এতক্ষণে আপনার চোখে পড়েছে নিশ্চিত। না পড়লে আপনি বরং ফেসবুকটা ডিয়্যাক্টিভেট করে রাখুন, আর একজন বাঙালি ফেসবুক ইউজার হিসেবে এই ভিডিও না দেখার অপরাধে দশবার কানে ধরে উঠবস করুন।
দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পয়সাওয়ালা, বেলগ্রেড। আইফোনের মালিক। দেখা হয়েছিল আমার সাথে। আমার কাছে মনে হয়েছে টিকটিকি…”
ফেসবুকে সক্রিয় হয়ে থাকলে এই ডায়লগ সংবলিত ভিডিওটা এতক্ষণে আপনার চোখে পড়েছে নিশ্চিত। না পড়লে আপনি বরং ফেসবুকটা ডিয়্যাক্টিভেট করে রাখুন, আর একজন বাঙালি ফেসবুক ইউজার হিসেবে এই ভিডিও না দেখার অপরাধে দশবার কানে ধরে উঠবস করুন।
কথাগুলো পড়ালেখা না জানা কোন অশিক্ষিত বা মানসিক বিকারগ্রস্ত কোন বদ্ধ উন্মাদের নয়, যে লোক এসব আজগুবি প্রলাপ বকেছে, তার হাজার হাজার ভক্ত আছে দেশজুড়ে, সংখ্যাটা লাখের অংকে যাওয়াটাও অসম্ভব নয়। এদেশে পাগল আর ধর্মব্যবসায়ীদের ভক্তের সংখ্যা এমনিতেই বেশি থাকে। তারেক মুনাওয়ার নামের এক তথাকথিত ‘মাওলানা’র মুখনিঃসৃত অমৃত বাণী এগুলো। স্টিভ জবস এই বেলগ্রেড নামের আইফোনের মালিকের কথা শুনলে কবর থেকে উঠে আসতেন নিশ্চিত, তারপর কচু গাছে ফাঁস দিয়ে আবার মরে যেতে ইচ্ছে হতো তার। ভাগ্যিস, স্টিভ জবস বাংলাদেশের কেউ নন!
মাওলানা আজহারির সঙ্গে দাঁড়ি-টুপিওয়ালা এক জোব্বাধারী হুজুরের চুম্মাচাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে কয়েকদিন আগে। আজহারিকে চুমু খাওয়া সেই লোকটার নামই তারিক মুনাওয়ার। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন এক সময়, এখন ভোল পাল্টে মাওলানা সেজেছেন, ওয়াজ-মাহফিল করে বেড়াচ্ছেন দেশজুড়ে। তার ওয়াজে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়, তার নামে স্লোগান দেয়া হয়, তারিক মুনাওয়ারের সঙ্গে একটা সেলফি তোলার জন্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডকে আইফোনের মালিক বানিয়ে ফেলা এই লোকের এতটাই জনপ্রিয়তা!
এর আগে তিনি দাবী করেছেন কোন এক সৌদি মাওলানা নাকি তাকে বলেছে, সে(সৌদি) চাঁদে রাজাকার সাঈদীর চেহারা দেখেছে! সাঈদীর নূরানী খোমাখানা যে বাংলার আকাশ থেকে সৌদিতেও ট্রান্সফার হয়েছে, সেটা তারিক মুনাওয়ার না থাকলে আমরা কী করে জানতাম? নাসার বিজ্ঞানীদের সঙ্গে তার ওঠা-বসা, বিজ্ঞানীরা নাকি তাকে জানিয়েছেন, কিছুদিন পরেই সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠা শুরু করবে। এসব গাঁজাখুরি কথাবার্তা শুনে সজ্ঞানে থাকা কোন বিবেকবান মানুষটার মেজাজ সপ্তমে চড়বে না?
তারিক মুনাওয়ারের আরেকটা বক্তৃতা ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি, সেখানে তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে- আফগানিস্তানে আমেরিকান বা বৃটিশ সেনারা যতো বোম্বিং করেছে, একটাও নাকি ফাটে নাই! কারন সেটা মুসলমানের দেশ, আর মুসলমানের দেশের ওপর যতোই আক্রমণ করা হোক, সেগুলো নাকি সব ব্যর্থ হয়! উপস্থিত মাথামোটা জনতা তখন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ফেলছে, একটা ডাহা মিথ্যার পরে যে আল্লাহর নাম নেয়া যায়, সেটা আমার জানা ছিল না। এই ভিডিও দেখেই জানলাম।
বক্তব্যের সপক্ষে এক বৃটিশ মেজরের রেফারেন্স টানলেন তিনি, যদিও কোন পত্রিকায় বা টিভি চ্যানেলে সেই তথাকথিত মেজর সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, কিংবা কবে তারিক মনোয়ারের স্বপ্নে এসে বলে গিয়েছিলেন, সেটা তিনি জানালেন না। বাংলা আর ইংরেজী দুই ভাষার জগাখিচুড়ি মিশ্রণে তারিক মুনাওয়ারের ভাষ্যমতে যা শুনলাম, সেটা এরকম-
বৃটিশ মেজর বললেন, আফগানিস্তানে আমি আল্লাহকে দেখেছি। টেলিভিশনে ওই সাংবাদিক বলছে, কিভাবে তুমি আল্লাহকে দেখতে পেলে? মেজর বললেন, রাত তিনটা, আমি তখন আকাশ থেকে বোম্বিং করছি। আমি দেখলাম, কিছু পাগড়িওয়ালা সাদা জোব্বা পরা লোক বোমগুলো ক্যাচ ধরে ধরে নদীতে ফেলে দিচ্ছে। আমি আকাশ থেকে নেমে আসলাম, সকাল বেলা চলে গেলাম সেই গ্রামে, গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের সেই ওলিগুলো কোথায়, রাতের অন্ধকারে যারা তোমাদেরকে পাহারা দেয়, বোমগুলো ধরে ধরে পানিতে চুবায়া দেয় তারা কোথায়? একজন ইমাম এসে আমাকে বললেন, তারা হলো আল্লাহ’র ফেরেশতা!
ছাগলামির একটা লিমিট থাকে, তারিক মুনাওয়ার সেটা অতিক্রম করে গেছেন বিপুল বিক্রমে। এসব ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানুষকে উজবুক ভাবে, আর এই দেশের লোকজন আসলেও উজবুক, তাতে কোন সন্দেহ নেই। নইলে কি আর এরকম গাঁজাখুরি কথাবার্তার মাঝখানে তারা ‘আল্লাহু আকবর!’, ‘সুবহানাল্লাহ!’ বলে চিৎকার করে? এদের মাথা ভেঙে কাঁঠাল খেয়েই তো ফুলেফেঁপে উঠেছে তারিক মুনাওয়ারের মতো ওয়াজের বক্তারা, ছাত্রশিবিরের অতীত ঢাকার জন্যে যারা ইসলামী পণ্ডিতের বেশ চড়িয়েছে গায়ের ওপরে। কিন্ত শরীরের পেছনে কাস্টোমাইজ করা বাহারী পেখম লাগালেই যে কাক কখনও ময়ূর হয়ে যায় না, সেটা তারিক মুনাওয়ারদের কে বোঝাবে?
বেলগ্রেড তত্ত্ব বা বোমাতত্ত্বের পর তারিক মুনাওয়ার আরেক ভিডিওতে দাবী করলেন, তিনি নাকি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন তিনবার সেরা শিক্ষক হবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন! যেটা আবার তার পরিবারের সদস্যরাও জানে না! এই ডায়লগবাজী শুনে দেড় মাস পাগল থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। কোন একদিন হয়তো আমিও দাবী করে বসবো যে আমি তিন তিনবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছি, কিন্ত সেটা দুনিয়ার কেউই জানেনা!
এইসব মাথামোটা উজবুকের দলের মুরিদ হয়েছে একপাল ছাগল, একপক্ষ যা তা বলে, দ্বিতীয় পক্ষ তাতে সায় দিয়ে মাথা নাড়ায়, আল্লাহ-রাসূলের নাম নিয়ে চিৎকার করে। টাঙ্গাইলের শরীয়ত বয়াতি ‘গান-বাজনা হারাম নয়’ দাবী করলে তার বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলা হয়, তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়, ক্রমাগত হুমকির কারণে তার সন্তানেরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
আর তারিক মুনাওয়ার বা এরকম বক্তারা যে ওয়াজ মাহফিলে এসব বুজরুকি কথাবার্তা বলে পুরো ব্যাপারটাকে কমেডি শো বানিয়ে ফেলেছে, তখন কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত আসে না, তখন কারো ঈমানী জোশ গায়ে চড়ে না। আফসোসটা এখানেই। ইসলামের ক্ষতি শরীয়ত বয়াতিরা করেন না, ইসলামের বারোটা বাজায় তারিক মনোয়ারের মতো ভন্ড বক্তারা। বাঙালি মুসলমান সেটা বোঝে না বলেই তাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার মহোৎসব চলছে, চলবে।
(মতামত কলামে লেখাগুলো লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত, তার জন্য সংবাদ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment