নাম জাকির রিক্সা চালায়, বয়স ১৭ বাবা মারা যাওয়ার পর কপালে জুটেনি পরাশুনা। প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে ও আমার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দোকানে লাগানো খাবার এর ছবি গুলো দেখে আর কি যেন ভাবে। আমি প্রতিদিন ই লক্ষ করি।
আজও রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ভিতর থেকে ডাক দিয়ে ভিতরে আসতে বললাম, ও হতবম্ব হয়ে ভয় পেয়ে বলল,” যাইতাছি মামা” আমি বললাম ভিতরে আসো কথা আছে। সামান্য ভয়ে ভয়েই ভিতরে আসল। সামনে টেবিলে বসতে বললাম। বললাম কিছু খাবা?
ও বলল ঢাকা মানুষ আহে নাই গ্রাম দিয়া একটা ক্ষ্যাপ দিছি মামা, খাইতে গেলে বাসায় চাল ও নিতে পারমু না। বাসার কথা বলতেই বলল বাসায় কে কে আছে? বলল ছোট বোন আর মা। যাই হোক বুঝেছিলাম ওর ক্ষুদা লেগেছে আকাশ চুম্বি। বললাম কি খাবা বল সমস্যা নাই আমি খাওয়াবো ভাই হিসেবে আজকে। সে খাবে না, বলল না মামা খামু না। আমি জোর করেই বসালাম বললাম কি খাবা বল না খেলে জাইতে দিব না।
বলল মামা ওইকে গোল গোল রুটির মত যে বিক্রি করে ওইটা, আমি বুঝেছি সে পিজ্জার কথা বলতেছে। যাই হোক ওকে পিজ্জা দিলাম আর বললাম পিজ্জা চিন? বলল একবার মিরপুর দুই এ রাতে এক প্যাকেট ফালানো পিজ্জা ওকে দিছিল কেউ একজন খাইয়া নাকি অনেক মজা পাইছে। বললাম প্রতিদিন কি দেখ আমার দোকানের পোস্টারে? বলল ওইজে গোল রুটির ছবি ম্যালা দাম তাই দেখি। ছোট বইন ডারে গল্প বলছিলাম এই গোল রুটির। ওরে খাওয়ামু খাওয়ামু কইরা হয় না।
ছোট বোনের ভালবাসা আর ক্ষুদার য’ন্ত্রনা এই দুইয়ে কম্বিনেশন এর ব্যাখ্যা আমার থেকে বেশি কেউ জানে না! ওকে ছোট একটা পিজ্জা দি খাওয়ার জন্য দাম আসলে বেশি না ও মনে করত অনেক বেশি। খেতে খেতে একটা চকচকা হাসি দিল। অর্ধেক খাওয়ার পর বলল মামা বাকি টা নিয়া যাওয়া যাইব? মা আর ছোট বইন টার জন্য নিয়া জামু।
আমিও একটা চকচকে হাসি দিয়ে বললাম ওটা তুমি খাও তোমার মা আর ছোট বোন এর জন্য আমি ওই গোল রুটি (পিজ্জা) দিয়ে দিচ্ছি আলাদা করে। সে মহা খুশি। তারপর? তারপর সে তার পকেট থেকে যে কয়টাকা ইনকাম ছিল ৮০ টাকা হবে। আমাকে দিতে চাইল।
আমি বললাম মাইর দিয়া সোজা কইরা দিমু জাও এটা বড় ভাই হিসেবে খাওয়াইলাম। অবশেষ এ এক পরিতৃপ্তির আমাকে আকড়ে ধরলো। বুক ভরে একটা নিশ্বাস নিতে পারলাম।
মতামতঃ লেখক- ব্লু-স্কাই