দেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য হাসপাতাল। উচ্চবিত্ত ছাড়া এই হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা খুব কঠিন। এখানে ৭টা আলাদা ভিআইপি কেবিনই আছে যা মন্ত্রী, সাংসদ, শিল্পপতি আর সিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সামান্য সর্দি, জ্বর, কাশি হলেও উনারা এখানে সেবা নিতে আসেন। কারাগার থেকেও ধর্ণাঢ্যরা বিনা অসুখে মাসের পর মাস ভিআইপি কেবিন দখল করে থাকেন।
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা, একটা ব্যক্তিগত এম্বুলেন্স এসে থামল হাসপাতালের সামনে। পিছনে দুইটা পাজেরো, একটা প্রাডো, পাঁচটা প্রাইভেট কার আর বত্রিশটা মোটরসাইকেল।
পাজেরো হতে দুজন লোক গটগট করে নামলেন, কোমরে অস্ত্র। রিসেপশনে গিয়ে ভদ্রলোকের ভর্তির ব্যাপারে কথা বললেন। একজন ডিউটি ডাক্তার এসে এম্বুলেন্স হতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রোগীর সব সিম্পটম জানতে চাইলেন।
গলাব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, হালকা জ্বর আর সর্দি-কাশি শুনে বললেন, সরি স্যার, আমাদের হাসপাতালে আপনাকে ভর্তি করা যাবে না। আমাদের ডাক্তার- নার্সদের কোন পিপিই নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ আপনার চিকিৎসা করবে না। তাছাড়া আপনার যেহেতু করোনার সিম্পটম মিলছে, আপনাকে আগে ABCDE হতে করোনা টেস্ট করে রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। নেগেটিভ হলে চিকিৎসা দিতে আমাদের আপত্তি নেই। তাছাড়া আপনাকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হতে পারে, এখন সবই ফুল। নো ভ্যাকেন্সি।
ভদ্রলোকের পিএস ABCDE এর ২১ টা হটলাইনে কল করেও যোগাযোগ করতে পারলেন না। হয় এঙ্গেজ টোন আসে নইলে বন্ধ।
বাধ্য হয়ে এম্বুলেন্স ২য় বিখ্যাত হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হলেন। এদিকে ডাক্তারের সাথে হওয়া কথাবার্তার সময় রোগীর সিম্পটম শুনেছে অনেকেই। ২য় হাসপাতালে যেতে যেতে একটা পাজেরো আর দুইটা প্রাইভেট কার ও কয়েকটা মোটর সাইকেলছাড়া বাকি সব যানবাহন ধীরে ধীরে গায়েব হয়ে গেল। রয়ে যাওয়াগুলোতে উনার বউ, ছেলে-মেয়ে আর ঘনিষ্ঠ কজন আত্মীয় আছেন। আর এম্বুলেন্সে উনার পিএস আর দুইজন বডিগার্ড। বাকি কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।
ভোর ৬ টা পর্যন্ত ৮ টা হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করলেও কোথাও উনাকে ভর্তি করানো গেল না। ইতিমধ্যে নিজের পরিবার আর সাথের ৩ জন ছাড়া সবাই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়েছে। এই ৩ জনও ভীতসন্ত্রস্ত চোখে দাঁড়িয়ে আছে, পালাতে পারলে বাঁচে।
পিএসকে দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কল দেয়া হল, কেউ ধরলো না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিএস জানালো, স্যার এখন কোয়ারেন্টাইনে। উনার ব্রিফিং এর সময়কার পিছনে দাঁড়ানো ৪৩ জনের ১ জন করোনা পজিটিভ। পরামর্শ দিলেন, বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করতে।
ভদ্রলোক পিএসকে বললেন,
- সিঙ্গাপুর হতে এয়ার এম্বুলেন্স আনার ব্যবস্থা কর।
- স্যার ফ্লাইট বন্ধ, ভিসাও বন্ধ।
- আই ডোন্ট কেয়ার। তুমি আমেরিকা হতে আনাও, কানাডা হতে আনাও… যত কোটি টাকা লাগে আমি দিবো।
একঘন্টা চেষ্টা করে পিএস জানালো,
- সরি স্যার, এই নাজুক সময় কোনো দেশই এরকম রোগী নিতে রাজি না। অনেক দেশ স্যার এয়ারপোর্টই বন্ধ করে দিয়েছে। দশগুণ টাকা দিলেও রাজি না স্যার। আপনার ব্যক্তিগত ডাক্তারও আসতে পারবেন না বলেছেন। টেলিফোনে পরামর্শ দিবেন বলেছেন স্যার।
ভদ্রলোককে নিয়ে যাওয়া হল উনার ফার্ম হাউজে। এখানে উনার সব টাকার সিন্দুক, ফ্ল্যাট আর জমির দলিল, স্বর্ণ ইত্যাদি রাখা। উনার স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তার জন্য পরিবারের সবাই উনাকে নিজ বাড়িতে রাখবেন না জানিয়ে দিয়েছেন।
পিএস কাঁচুমাচু হয়ে বললো,
- স্যার আমরাও রিস্কে আছি। আমাদের বিদায় দেন। কোয়ারেন্টাইনে যাবো। নিজের বউ বাচ্চাদের তো আর বিপদে ফেলতে পারি না।
পিএস আর বডিগার্ড দুজনও বিদায় নিলো।উনার মৃত্যু পর্যন্ত পরের ৬ দিন দুজন বিশ্বস্ত লোক শুধু উনার সাথে ছিলো।ওরা শুধু দরজা খুলে তিনবেলা খাবার পৌঁছে দিতো।
মৃত্যুর পর দেখতে উনার বউ, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয় স্বজন কেউ আসেনি। ABCDE হতে ৪ জন এসে লাশ একটা এয়ারটাইট ব্যাগে ঢুকিয়ে জানাজা পড়ে নিতান্ত অবহেলায় দাফন করলো।
মৃত্যুর সময় উনি সুইস ব্যাংক, সেকেন্ড হোম আমেরিকা- অস্ট্রেলিয়ার বাড়ি ইত্যাদি ছাড়াও ৫৭৩ কোটি টাকা, ৫৭টা ফ্ল্যাট, ১৫৪৩ শতক জমি, ৩২৬৫ ভরি স্বর্ণ ইত্যাদি রেখে গেছেন৷