বিভাগ মত-দ্বিমত

করোনা এবং জনগন, উভয়কে নিয়েই ভাবুন

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

দেশে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞগনের আশংকা সত্য পরিনত হচ্ছে। দেশ আজ মহাদুর্যোগ, মহাবিপর্যয় এবং মহামানবিক সংকটের দ্বার প্রান্তে।

এ সংক্রমন সংক্রান্ত রোগের প্রতিষেধক বা নিরাময়ের জন্য সুনির্দ্দিষ্ট কোন ঔষধ এখনও আবিষ্কৃত হয় নাই। চিকিৎসা যা চলছে সবই পরীক্ষামুলক। বিশ্বের উন্নত দেশ সমুহে এ রোগের চিকিৎসা সেবার যে দুরাবস্থা সেখানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা নিয়ে এই মুহুর্তে আলোচনা, সমালোচনা নিতান্তই অহেতুক।

তবে আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে দেশের মানুষ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তারপরেও আমাদের বাঁচতে হবে। দেশ, জাতি, জনগনকে বাঁচাতে হবে, এ সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হবে। এর একমাত্র পথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা অর্থ্যাৎ হাত ধোয়া, ঘরে থাকা, খুব বেশী প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়া, ঘরের বাহিরে মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক বা শারিরীক দুরত্ব মেনে চলা ইত্যাদি।

দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পর ঘরে থাকা স্লোগানের গুরুত্ব দুইটা কারনে কমে আসছে। এক, আমরা মানুষ তারপরে বাঙালী, আমাদের অভ্যাসগত কারনে দিনের একটা নির্দ্দিষ্ট সময় বন্ধুদের সংগে আড্ডা কিংবা চায়ের দোকানে আড্ডা এবং চা পান ব্যাতিরেকে আমাদের চলে না। দুই, জীবিকার প্রশ্ন। যদিও সরকারী এবং বেসরকারী উদ্যোগে ত্রান দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা দিয়ে একটি পরিবার বা জনগোষ্টির চাহিদা পুরন করা যায় না। তারপরেও ত্রান বিতরনের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। কথায় আছে, নিজের হাতে না হলে অন্যের হাতে খেয়ে পেট ভরে না।

সুতরাং মানুষকে তার জীবিকার জন্য নিজ পেশায় ফিরে যেতেই হবে সেই সংগে জাতীয় অর্থনীতির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বিধায় সে সুযোগও সৃষ্টি করতে হবে। বাড়ীতে ছাড়া হাট বাজার বা জন সমাগম স্থলে হাত ধোয়ার ব্যাবস্থা অপ্রতুল।

হাট বাজার, জনসমাগম এলাকা এবং কর্মস্থলে শারিরীক দুরত্ব বজায় রাখার বিকল্প নাই। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গনসচেতনতা। কিন্ত সচেতনতা সৃষ্টির জন্য টিভির ভাষন, খবরের কাগজ আর ফেসবুকে লেখালেখি যথেষ্ট নয়। তাই যদি হত তাহলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীগনের গ্রামগঞ্জ, পাড়া মহল্লা এবং ভোটাদের দ্বারে দ্বারে না যেয়ে গনমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি বা আবেদন করলেই হত।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানুষের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাকিস্থানী বাহিনীর প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং নয় মাসে ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবনদানের ঘটনা ছিল দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক কর্মসুচী আর কর্মযজ্ঞের ফসল।

সুতরাং করোনায় তিন মাসে পাঁচশো মানুষের মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষ ভীতু হবে, সচেতন হবে আর স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলবে তা ভাবার সুযোগ নেই।

সুতরাং মানুষকে সচেতন করার জন্য ব্যপক কর্মসুচী বা কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রতিটা এলাকায় ব্যপক লিফলেটিং, পোষ্টারিং, প্রয়োজনে গ্রামে, পাড়ায়, মহল্লায় গন সংযোগ এবং হাট বাজার ও জনসমাগম এলাকায় মাইকিং এর ব্যবস্থা করতে।

মাইকের স্থানে গনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠিত এবং গুরুত্বপুর্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে জনগনের সংগে কথা বলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সরকার এবং দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কর্মসুচীর ঘোষনা।

এই কাজগুলি হাস্যকর বা কঠিন মনে হলেও বর্তমান বাস্তবতায় এর কোন বিকল্প নাই। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদ্বুদ্ধকরন প্রক্রিয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ দেশের মানুষ অনেক দুঃসাধ্য সাধন করেছেন।

সুতরাং আন্তরিকতা থাকলে তাঁদের নেতৃত্বেই করোনা সংকট মোকাবেলা বা তা থেকে উত্তরন সম্ভব।

দেশে সবচেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবক্ষয়। দেশে চলমান গনতন্ত্রহীনতার সংস্কৃতির কারনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগনের প্রতি তাদের দায়বদ্বতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তাঁদের জনগনের কাছে যাওয়ার বদলে জনগনকেই যেন নেতৃবৃন্দের কাছে আসার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে কিনা জানি না তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনা মোকাবেলার জন্য অবাধ বাক স্বাধীনতা এবং বেশী বেশী করোনার টেষ্টকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

বাংলাদেশে এই দুইটার ক্ষেত্রেই সংকট বা সীমাবদ্ধতা আছে। সুতরাং সরকারী দলের গনসচেতনতা সৃষ্টির কর্মসুচী শুরুর সংগে সংগে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনকে এ ধরনের কর্মসুচী গ্রহন এবং প্রতিপালনের সুযোগ দেওয়া উচিত ( যদিও তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে তারপরও তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে)। কারন তাদেরও গনভীত এবং গ্রহনযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে। কারন বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ সম্মিলিত বা সমন্বিত ভাবে কাজ করার জন্য বারংবার আগ্রহ প্রকাশ এবং সুযোগ সৃষ্টির জন্য আহবান জানিয়ে আসছে। কিন্তু তাদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।

বর্তমানের বিশ্বব্যাপি এই সংকট মোকাবেলা কোন দেশেই একক ভাবে সরকার বা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক এবং পেশাজীবি সংগঠন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ ব্যাপক জনগনের অংশ গ্রহন দরকার এবং সে সুযোগ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারের।

সুতরাং জীবন জীবিকা অর্থ্যাৎ জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকার তাগিদে যেমন কর্মক্ষেত্র খুলে দেওয়া প্রয়োজন, তেমনি কর্মক্ষেত্রে করোনা থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য সচেনতা সৃষ্টির উদ্বুদ্ধকরন প্রক্রিয়া জোরদার এবং সেখানে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার সুযোগ সৃষ্টির প্যাকেজ কর্মসুচীর ঘোষনা জরুরী।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored