আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা টেকনলজি বিপ্লবের জন্য যেমন সাপোর্ট দরকার সেটা দিতে অক্ষম। তাহলে উপায় কি?
আজ একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এটি নিয়ে আলোচনা করব।
ভিয়েতনাম যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি গরীব দেশ থেকে আজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ন্যানো টেক থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স, টেকনলজিতে বিষ্ময়কর অগ্রগতির পথে চলে এসেছে। কিন্তু কিভাবে সেটা সম্ভব হল?
আমাদের দেশে নয়ন চ্যাটার্জির মুরিদ সাগরেদের অভাব নেই। তাদের কোন এক পোস্টে দেখেছিলাম নানা রকম কনস্পাইরেসি থিওরি দিয়ে সুন্দর মত ব্যাখ্যা করেছে বিদেশি বিনিয়োগ হল বাংলাদেশের ক্ষতি করার বিদেশিদের চক্রান্ত। কর্পোরেটক্রেসির মত আজব আজব থিওরি আওড়ায়ে বিশাল ব্যাখ্যা করল। কমেন্ট সেকশনে যেয়ে অবাক হলাম। হাজার হাজার মুরিদ সহমত ভাই দের আতঙ্ক। তারা সত্যি সেগুলা বিশ্বাস ও করেছে।
এখনেই আমাদের প্রধান সমস্যা। আমাদের মানসিকতা। সত্য জিনিসটার কিছু প্রকারভেদ আছে। কিছু চিরন্তন সত্য। আর কিছু আপেক্ষিক সত্য। আপনার জানার পরিধি যদি কম হয় তবে আপনার কাছে একটি জিনিস সত্য হবে। আবার যদি আপনার জানার পরিধি অনেক বেড়ে যায় তবে আপনি নিজেই আগে যেটাকে সত্য ভাবতেন সেটাকে ছুড়ে ফেলে দিবেন। এটাই হল সত্যের আপেক্ষিকতা যেটা আমাদের জ্ঞ্যানের আর উপলব্ধির উপর নতুন আকার ধারন করতে পারে।
বাংলাদেশ এখনো টেকনলজি খাতে বিপ্লব দেখেনি। টেকনলজি খাতের জন্য দক্ষ জনবল ও নেই। কিন্তু যদি এখানে বিদেশি কোন কোম্পানি টেক ইনটেনসিভ খাতে বিনিয়োগ করে তাহলে সেটার সব থেকে বড় বেনিফিট কি জানেন? কর্মসংস্থান সৃষ্টি নয়। বরং দক্ষ কর্মী সৃষ্টি। ভিয়েতনামে স্যামসাং যখন মোবাইল উৎপাদন কারখানা করল তার আগে হেভি টেকনলজি সম্পর্কিত দক্ষ জনসম্পদ ভিয়েতনামের ও পর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু বিনিয়োগ হলে যেটা হয় সেটা হল কোন কোম্পানি আজীবন বিদেশি কর্মী দিয়ে কারখানা চালায় না। খরচ কমানোর স্বার্থেই তারা স্থানীয় মানুষকে বা কর্মীকে প্রশিক্ষিত করে তোলে। ভিয়েতনামের ন্যানো টেকনলজির বিপ্লবের পেছনে স্যামসাং এর মত কোম্পানির বিনিয়োগ এভাবেই অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিল।
মনে রাখা দরকার যখন নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ হতে থাকে তখন সেই সেক্টরের চাকুরীর বাজার সৃষ্টি হয়। সেই বাজারের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ এর জন্য শিক্ষা ব্যাবস্থায় নতুন সাবজেক্ট ঢুকে, ট্রেনিং ইন্সটিটিউট গড়ে উঠে। আর এভাবেই শিক্ষা বা দক্ষ মানব সম্পদ্ সৃষ্টির পেছনে বৈদেশিক বিনিয়োগ এর বিশাল ভুমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশের কথায় ধরি। গার্মেন্টস ব্যাবসা যখন ছিলনা তখন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট ছিল না। থাকলেও সেখানে পড়ার মত বা ক্যারিয়ার করার মত বিকশিত ছিলনা। গার্মেন্টস যেহেতু বিশাল চাকুরীর বাজার সৃষ্টি করেছে তাই সেখানে প্রয়োজন মেটাতে দক্ষ কর্মীর যোগান দিতেই দেশে সরকারী বেসরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সহ এই সম্পর্কিত অনেক সাবজেক্ট যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার আগে পরমানু বিজ্ঞানী অনেকেই ছিলেন। তখন সেটা নিয়ে কাজের ক্ষেত্র ছিল। কিন্তু এরপর স্বাধীন হবার পর এই বিষয়ে কাজের ক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই সম্পর্কিত বিশেষায়িত শিক্ষা নেয়ার সুযোগ ও ছিল না। কিন্তু রুপপুর পরমানু প্রকল্প নেয়ার পর এখানে পরমানু নিয়ে গভীর জ্ঞ্যান আছে এমন জন সম্পদের প্রয়োজন পড়ে। ফলে নিউক্লিয়ার সায়েন্স নিয়ে আলাদা সাবজেক্ট চালু করা হয়েছে।
ফার্মেসির ক্ষেত্রেও একি উদাহরন। স্বাধীনতার পর আমাদের ঔষধ কারখানা ছিলনা। এই ফিল্ডে দক্ষ লোক ও ছিলনা। কিন্তু আজ প্রায় প্রতিটি ভার্সিটি ফার্মেসির উপর উচ্চ শিক্ষা অফার করছে। এই ফিল্ডে বাংলাদেশিরাই এখন অধিকাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে। এটাও কিন্তু হাই টেক ইন্ডাস্ট্রি।
বাংলাদেশে স্যামসাং, অপ্পো, টেকনো, সিম্ফনি, ওয়ালটন এর মত অনেক কোম্পানি এসেম্বল এবং ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা করেছে। যদিও এখনো এসব কারখানায় জব করার মত দক্ষ জনসম্পদ্ আমাদের পর্যাপ্ত হয়নি। কিন্তু এই বিনিয়োগ যত বৃদ্ধি পাবে, আমাদের দেশে এবং দেশের বাইরে এসকল পণ্যের বাজার যত বৃদ্ধি পাবে তত রি রিলেটেড শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের চাহিদা বাড়বে। সেই সাথে গড়ে উঠবে প্রশিক্ষক ইন্সটিটিউট। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সম্পর্কিত সাবজেক্ট চালু হবে।
বিদেশি অপ্রচলিত এবং টেকনলজি খাতে বিনিয়োগ এভাবেই গড়ে তুলতে পারে টেক স্যাভি একটা জেনারেশন। আমি বোঝাতে চেয়েছি শিক্ষা ব্যাবস্থার উপর বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রভাব রয়েছে যেটা আমরা অনেকেই বুঝিনা। অথবা না বুঝেই বিরোধিতা করি। আমাদের মত ভিয়েতনামে যদি সন্দেহ করত যে বিদেশি কোম্পানি তাদের দেশে বিনিয়োগ করতে আসছে তাদের দেশীয় শিল্প ধ্বংস করার চক্রান্ত করার জন্য তাহলে ভিয়েতনামে কখনো বিপ্লব হত না। বিদেশি কোম্পানি নিতে যেমন আসে। দিতেও আসে। আর প্রতিযোগিতা না থাকলে দেশীয় কোম্পানি শুধু ভ্যাজাল দিয়েও ব্যাবসা করা শিখবে। ব্যাবসা আবেগের জায়গা না। বৈদেশিক বিনিয়োগ এর সাথে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রাকটিস এবং দায়বদ্ধতার একটা কালচার ও গড়ে উঠে। এগুলা বুঝতে হবে। একারনেই আমি বলি আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।
যেহেতু বাংলাদেশে এখন মোটরসাইকেল সেক্টরে ব্যাপক বিনিয়োগ হচ্ছে। অটো ইন্ডাস্ট্রি গুলিতেও বিনিয়োগ হচ্ছে। পিএইচপি, প্রগতি, চীনের একটি কোম্পানি সহ বেশ কিছু কোম্পানি এখাতে বিনিয়োগ করবে। যদি সেটা হয় তবে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টি হবে।
আবার আমাদের বিগত দশকে সব থেকে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে। FSRU চালু হয়েছে। এলএনজি, কোল ফায়ারড বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হচ্ছে। এগুলাতেও দক্ষ জনসম্পদ প্রয়োজন পড়বে। আর সেটা মেটাতেই অন্তত অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস করি। এটা বলতেছি এ কারনে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বেশ স্লো।
সব শেষে এটা বলতে চাই, টেকনলজি বিপ্লব আনতে গেলে আমাদেরকে টেকনলজি খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। টেকনলজির জায়ান্ট কোম্পানি গুলিকে দেশে আনতে হবে। হুয়াওয়ের মত বড় বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করলে এমনিতেই এর প্রভাবে বিপ্লব আসবে। ন্যানো টেকনলজি থেকে শুরু করে অনেক বিষয়ে দেশে বিপ্লবের পথ সুগম হবে।
লেখকঃ ওয়াসিম শাহিন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment