ছবি কথা বলে, কর্ক থেকে রফিক ভাই কয়েকদিন আগে একটি ছবি পাঠালেন। ছবিটি সম্ভবত ২০০৯ সালে তোলা। ড সাইদুর রহমান সাহেব যখন লন্ডনস্থ হাইকমিশনার ছিলেন তখন তাকে লিমরিকের একদল উৎসাহী ও উদ্যমী তরুণ সংবর্ধনা জানানোর জন্য বিশেষ আমন্ত্রণের মাধ্যমে লিমরিকে আনেন। অনুষ্ঠানটি ইউনিভার্সিটি অফ লিমরিকে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। যতদূর মনে পড়ে এ জমকালো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সর্ব জনাব শাহীন রেজা, তৌহিদূল ইসলাম টম (বর্তমানে লন্ডনে বসবাসরত), রফিক খান, জাহাঙ্গীর আলম, আমীরুল ইসলাম তপন, বাদল রহমান( সুইডেনে বসবাসরত), মিজানুর রহমান, আনোয়ারুল হক, আজাদ তালুকদার, আবদুর রহমান, মনিরুল ইসলাম ও আমি সহ অনেকেই। ওই অনুষ্ঠানে কে কি কথা বলেছিলেন এতো দিন পর আমার ঠিক সেইভাবে মনে নেই। তবে রফিক ভাই ছবিটি পাঠানোর সাথে সাথে দু একজন লোকের উদ্বৃত্তি তুলে ধরে কে কি বলেছিলেন তাও আমাকে মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
তার স্মৃতি থেকে দেয়া উদ্বৃত্তি অনুযায়ী, তিনি সহ টম ভাই, বাদল রহমান ও আরও কয়েকজন আয়ারল্যান্ডে একটি দূতাবাস বা কনসুলার অফিস গড়ে তোলার দাবি জানান। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের ছাত্রদের মতো চীনের শিক্ষার্থীরা যেভাবে কম ফি দিয়ে এ দেশে লেখাপড়া করতে আসে ঠিক তেমনি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও যাতে একইভাবে স্বল্প ফি দিয়ে পড়ালেখার সুযোগ পায় তা নিয়ে তিনি যেনো আইরিশ সরকারের সাথে আলোচনা করেন সে বিষয়েও তারা তাঁকে অনুরোধ জানান। বাঙ্গালি ছেলেমেয়েদেরকে বাংলা ভাষা শিক্ষা দানের জন্য আলাদা স্কুল ও বাংলা বইয়ের প্রয়োজন। সে বিষয়ে আমি যে তার পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেছিলাম তাও রফিক ভাই তার উদ্বৃত্তিতে তুলে ধরেন।
বস্তুত ওইদিন আমরা যে যতো কথাই বলিনা কেনো সব কথার মূল স্পিরিট ছিলো একটাই যেনো আয়ারল্যান্ডে একটি দূতাবাস গড়ে ওঠে। আল্লাহর অশেষ রহমতে এতো বছর পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের খবর যখন শুনলাম, বেশ ভালো লাগলো। তবে ক্রেডিবিলিটি নিয়ে যে কামড়াকামড়ি লক্ষ্য করা গেলো তা বেশ হতাশাজনক ও পীড়াদায়ক।
সমাজে যে কোনো গঠনমূলক কাজ একক প্রচেষ্টায় সাফল্যের চূড়ান্ত সীমায় পৌছাতে পারেনা। সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টাই তাকে সফলতা দান করে। ইতিহাস কি বলে? তুর্কিরা একসময় যাযাবর ছিলো। বাংলাদেশের বেদে শ্রেণীর মতো তারা আজ এখানে তো কাল ওখানে বসবাস করতো। অথচ তারাই পরবর্তীতে অটোমান সাম্রাজ্যের অধিকারী হন। একজন সাহসী যুদ্ধা ছিলেন। আর্তুগ্রুল। যেমন ন্যয়পরায়ন তেমনি নির্ভীক ও প্রজ্ঞাবান। তার নেতৃত্বে বছরের পর বছর হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধ করেছে, শহীদ হয়েছে। একসময় তারা যুদ্ধের ফসল হিসেবে, শহীদানদের ফসল হিসেবে পেয়েছে সাম্রাজ্য। এ সাম্রাজ্য প্রাপ্তির পেছনে কি শুধুই আর্তুগ্রুলের ক্রেডিবিলিটি? যারা শহীদ হয়েছেন, যারা আর্তুগ্রুলকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন কিংবা তার সহযোদ্ধাদের কি কোনোই ক্রেডিট নেই?
আমাদের বঙ্গবন্ধুর কথা ধরা যাক। তিনি কি কেবল একক প্রচেষ্টায় একদিনে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন? তাঁর বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার পেছনে যে কতো লোকের আত্মত্যাগ ও সহযোগিতা রয়েছে তাতো তিনি নিজেই তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বিশদ ভাবে লিখে গিয়েছেন। তাছাড়া তাঁর নেতৃত্বে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীনতা পেলাম তাও কি কেবল তার একারই ক্রেডিট? জাতীয় চার নেতা সহ লক্ষ লক্ষ শহীদ, বীরাঙ্গনা ও অগণিত মুক্তিযোদ্ধাদের কি কোনোই ক্রেডিট নেই?
আইরিশদের সেইন্ট পেট্রিকস ডে বলতে গেলে সারা বিশ্বে এখন সমান ভাবে পালিত হয়। তারা যখন প্রথম আমেরিকায় দিনটি উদযাপন করতে দল বেঁধে রাস্থায় বেরুল স্থানীয় পত্রিকা গুলো তখন তাদেরকে মাতাল ও উশৃঙ্খল বানরের সাথে তুলনা করে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করে। স্থানীয়দের এ ব্যঙ্গ উপলব্ধি করে বিষয়টা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নেয় আইরিশ সাহায্যকারী সামাজিক সংগঠন গুলো। তারা নিজেদেরকে সংঘবদ্ধ করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। এ সংঘবদ্ধ করার কাজটি করেছিলেন হাতেগুনা মাত্র দু একজন। আজ সারা বিশ্ব ব্যাপী দিনটি যেভাবে উদযাপিত হয় তার পেছনে কি কেবল ওই দু একজনের ক্রেডিবিলিটিই লুকিয়ে আছে?
এসব উদাহরণের কোনো অভাব নেই। খুঁজলে ভুরি ভুরি পাওয়া যাবে। আয়ারল্যান্ডে দূতাবাস গড়ে উঠার যে সুসংবাদটি সম্প্রতি ভাইরাল হয়ে মানুষের হৃদয়ে রেখাপাত করেছে তাও কোনো ব্যক্তির একক প্রচেষ্টার একদিনের ফসল নয়। জানি বর্তমান সাংসদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না সাহেবের একজন সাবেক আয়ারল্যান্ড প্রবাসী হিসেবে আয়ারল্যান্ডের প্রতি তার একটু বাড়তি সহানুভূতি রয়েছে। তিনি যেহেতু এ দেশে থেকে গেছেন তাই তিনি নিজেও আয়ারল্যান্ডে দূতাবাসের প্রয়োজনীয়তা বেশ ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। যার ফলে দূতাবাস স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। সন্দেহাতীত ভাবে তার কৃতিত্ব রয়েছে। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু এর অর্থ তো এই নয় যে একাই তিনি সব ক্রেডিবিলিটির মালিক।
আমরা আয়ারল্যান্ডে বসবাস করছি প্রায় ১৮/২০ বছর যাবৎ। শুরু থেকেই সবাই একটি দূতাবাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সে প্রেক্ষাপটে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ স্ব স্ব অবস্থান থেকে এ দাবিটি সরকারের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মান সফরে এলে আয়ারল্যান্ড থেকে মোনায়েম খন্দকার রানা সেখানে যান এবং তিনি এ দাবিটি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন বলে আমাকে জানান।কর্কের রফিক খান বিভিন্ন সময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক সফর গুলোতে সুযোগ পেলেই এ দাবিটি নেতাদের সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। এমনকি বাংলাদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালেও তিনি প্রথম দূতাবাসের প্রয়োজনীয়তার কথাটি মন্ত্রীকে জানান। পরবর্তীতে তিনি ও লিমরিকের আনোয়ারুল হক (আনোয়ার) একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে আলাদা আলাদা ভাবে টক শোতে যোগদান করলে সেখানেও তারা দূতাবাসের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ও তা বাস্তবায়নের জন্য জোরালো দাবি জানান।
এই অধম টুকটাক লেখালেখি ছাড়া কোনো কাজেরই নই। তাই লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দাবিটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। এ বিষয়ে ২০১২ সালে আমার লেখা বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো। সুহৃদ পাঠকদের সদয় অবগতির জন্য দুটো লিংক তুলে ধরলাম।
Deshe Bideshe
Banglanews24
ডাবলিনের মোঃ ফিরোজ, অলক, সমীর ধর, রিয়াজ খন্দকার, জসীম উদ্দিন, হাফিজুর রহমান লিঙ্কন সহ আরো কয়েকজনের সময়োপযোগী প্রচেষ্টাও এ যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। আয়ারল্যান্ডে দূতাবাস স্থাপিত হলে জনগণের কি সুযোগ সুবিধা বা সরকারের লাভ লোকসান কতোটুকু এ বিষয়ে একটি এসেসমেন্ট জমা দেয়ার কাজটি তারা বেশ দক্ষতার সাথে করতে সচেষ্ট হয়। যার ফলে সরকার অফিসিয়ালি বিষয়টি নিয়ে কিছুটা তাগিদ অনুভব করে।
আমরা যদি আরেকটু পেছনের দিকে তাকাই দেখা যাবে আমাদের আগে যারা এ দেশে বসতি স্থাপন করেছিলেন তারাও আয়ারল্যান্ডে যেনো একটি দূতাবাস কিংবা নিদেনপক্ষে একটা কনসুলার অফিস গড়ে ওঠে সে ব্যাপারে শুরু থেকেই চেষ্টা তদবির চালিয়ে গেছেন। কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব জনাব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সর্ব প্রথম জনাব শাহনেওয়াজ টুটুলের হাত ধরেই আয়ারল্যান্ডে কনসুলেট সার্ভিসের সূচনা পর্ব শুরু হয়। তারপর মোস্তাফিজ ভাই সহ ডাবলিন ভিত্তিক একটি সামাজিক সংগঠনের অনেক সদস্যই তার সাথে যুক্ত হন। ওই সময় তারা কেবল কনসুলেট সার্ভিসের ব্যবস্থা করার মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং তখন থেকেই যেনো আয়ারল্যান্ডে একটি দূতাবাস বা কনসুলার অফিস গড়ে ওঠে সে ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। লন্ডন থেকে যখনই কোনো হাইকমিশনার আয়ারল্যান্ডে এসেছেন তখনই তারা এ দাবিটি তাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
মূলত কমিউনিটি বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত সকল বাঙ্গালিরই সরকারের কাছে একটি দাবি ছিলো, যে কোনো মূল্যে আয়ারল্যান্ডে একটি দূতাবাস গড়ে তোলা। সুখের বিষয়, সবার সার্বিক প্রচেষ্টায় তা বাস্তবায়নের মুখ দেখতে যাচ্ছে। এখানে কারো কৃতিত্ব কম নয়। কারো অবদানকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। “শুধু আয়ারল্যান্ডের অধিবাসী” এ কারণটার জন্যই যে কেউ এ কৃতিত্বের দাবি রাখে। তাই বলবো, কার ক্রেডিট বেশি বা কম এ নিয়ে কোনো মন কষাকষি নয়, বরং গৃহীত সিদ্ধান্তকে কিভাবে দ্রুত কার্যকরী করা যায় সে লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। সরকার মাত্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমাদেরকে থেমে থাকলে চলবেনা। দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে সম্মিলিত ভাবে চাপে রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক- আয়ারল্যান্ড প্রবাসী প্রাবন্ধিক ও কলামিসট
shajed70@yahoo.com।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment