বিশেষ করে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না অনেকেই। সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন প্রায়ই মানছেন না। কেননা, তাঁদের ধারণা, এটা বয়স্কদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রোগ। মনে রাখতে হবে, কেবল ষাটোর্ধ্ব বয়সই নয়, অন্তর্নিহিত কোনো রোগ বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় জটিলতার কারণে এই ভাইরাস যে কারও জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া শুধু বিদেশ ফেরত কারো সংস্পর্শে না গেলে যে করোনা হবেনা সে ভুলও আজ চট্টগ্রামে প্রমান হলো। আজ চট্টগ্রামে যে ৬৭ বছর বয়সের বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে তিনি কিন্তু কোন বিদেশ ফেরত ব্যাক্তির সংস্পর্শে যাননি বা ছিলেন না। তার মানেই হলো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন থেকে লোকটি আক্রান্ত হতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, চট্রগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার পর লোকটি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই আমরা। তাঁকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছি। তিনি কীভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তা আমরা বের করার চেষ্টা করছি।
অসুস্থ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার আক্রান্ত রোগী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর নমুনা পরীক্ষা হওয়ার পর করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে প্রকাশ, ওই রোগীর বয়স ৬৭ বছর। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় বিদেশফেরত কারওর সংস্পর্শে তিনি এসেছেন কিনা চিকিৎসকেরা জানতে চেয়েছিলেন। রোগী ‘না’ সূচক জবাব দিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ রোগীর বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন থেকে লোকটি আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু চট্টগ্রামের লোকজন এখনো ভয়াবহ ভাইরাসটি সম্পর্কে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বাইরে অবাধ বিচরণ করছে। মসজিদেও ভিড় কমছে না। এটাই চিন্তার বিষয়। সবাই সতর্ক না হলে বিপদ থেকে রক্ষা পাবে কীভাবে?
সচেতনতার অভাব কীভাবে ঘরে বাইরে বিপদ ডেকে আনে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স।
অভাব সচেতনতার। অভাব শিক্ষার। দু’ চারটে পুঁথি পড়লেই শিক্ষিত হওয়া যায় না। সামাজিক শিক্ষাও দরকার হয়। এই মুহূর্তে নিজেকে বিপদ থেকে রক্ষা করার অর্থ যে দেশকে সুরক্ষিত রাখা, এই বোধটাই তৈরি হয়নি। করোনার ভয়াবহতা এবং বিপদ উপলব্ধি করতে না পারার মাশুল গুনতে হচ্ছে ।
আমরা একটা কথা প্রায়ই বলে থাকি, অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু, তা যে কেবল মুখের কথা, মনের কথা নয়,
সব চেয়ে বড় কথা, বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীরা যে ভাইরাসের চরিত্র, গতিপ্রকৃতির নাগাল পাচ্ছেন না, তাকে মামুলি ফ্লু বলে অনেকেই পাণ্ডিত্য জাহির করার চেষ্টা করছেন। ভুল হচ্ছে। নিজেদের জাহির করার অনেক সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু, এটা সেই সময় নয়। এখন আমাদের সকলকে হতে হবে শৃঙ্খলাপরায়ণ সৈনিক। মেনে চলতে হবে চিকিৎসক এবং প্রশাসনের পরামর্শ। তবেই আমরা সুস্থ থাকব এবং রাখতে পারব।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।