করোনা সংক্রমনের প্রতিরোধে গৃহিত ব্যাবস্থাদির কারনে দেশের দিন মজুর, দিন আনে দিন খাওয়া মানুষ, মধ্যবিত্ত শ্রেনী সহ দেশের জনসংখ্যার বৃহত্তর একটি অংশ খাদ্যাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এটা বিবেচনা করেই সামর্থ অনুযায়ী সরকার ত্রান বিতরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রগনের নামে বরাদ্ধ দিয়ে বিতরনের ব্যাবস্থা করেছেন। যথারীতি বিতরনও হচ্ছে।
কিন্তু কিছু কিছু ইউ পি চেয়ারম্যান মেম্বর / পৌর মেয়র কাউন্সিলর স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা কর্মীদের যোগসাজসে বরাদ্ধের অধিকাংশই আত্মসাৎ করছেন। আবার আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছেন। যারা ধরা পড়ছেন তারা প্রায় সবাই সরকার দলীয় ব্যাক্তি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সরকারী দল এর দায় নিতে চাচ্ছেন না। আমার প্রশ্ন কেন নিবেন না? অনেকে বলছেন চোরের কোন দল নেই। আসলে কি তাই। ব্যংক, বীমা, শেয়ার মার্কেট লুট এবং ত্রান চুরির ঘটনা কি দল ছাড়া সম্ভব। শুধু দল নয় রীতিমত সরকারী দল হতে হয়।
ইদানিং প্রায়ই নজরে আসে, ত্রান বিতরন, রাস্তায় পানি ছিটানো, বিশ ছিটানো সহ সব কাজই দলীয় সভানেত্রী বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হচ্ছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। শুধু মৌখিক প্রচার নয়, সোশাল মিডিয়ায় প্রচার সহ অনুষ্ঠান স্থলের পিছনে অনুরুপ নির্দেশনা সম্বলিত ব্যানারও লাগানো হয়। তাহলে তাদের ভাল কাজের সুবিধা নিবেন আবার তাদেরই খারাপ কাজের দায় নিবেন না তা হয় না, আবার ইচ্ছা করলে দায় এড়ানোও যায় না।
আমি কিন্তু এই বক্তব্য দিয়ে দায় নিতে বলছি না বা তা বাঞ্চনীয়ও নয়। কিন্তু আপনি দায় নিলেন না বা আমি দিলাম না তা দিয়ে কিন্তু দায় বন্ধ হবে না। দায় বন্ধ করতে হলে ত্রান বিতরন এবং চুরির ঘটনা সমুহের একটি গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা থাকা জরুরী। আমার বিবেচনায় ব্যাখ্যাটা এ ভাবে করা যায় কিনা (১) একজন ব্যাক্তি আইনানুগ ভাবে যোগ্য এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েই তিনি সরকারের বরাদ্ধকৃত ত্রানের বরাদ্ধ প্রাপ্ত হন। আইনের বিধি বিধানের মাধ্যমেই তিনি ত্রানের মালামাল উত্তোলন এবং বিতরন করে থাকেন। এখানে বিশেষ কোন ব্যাক্তির বা গোষ্টির কোন বিশেষ নির্দেশনার অবকাশ নাই।
আবার (২) কোন ব্যাক্তি আইনানুগ ভাবে ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েই মালামাল উত্তোলন করেন বটে তবে তিনি আইনের বিধান অমান্য এবং ক্ষমতার অপব্যাবহার করে ত্রানের মালামাল বিতরন না করে আত্মসাৎ করেন। এর দায় পরিপুর্ন তার কোন ভাবেই দল বা অন্য কারও নয়।
আসলে রাজনৈতিক দল সমুহে গনতান্ত্রিক মুল্যবোধ ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা না থাকায় আদর্শিক রাজনীতি অনুশীলনের জায়গাটা ক্ষীন হয়ে আসছে বিধায় দেশ ও মানব প্রেমিক, শিক্ষিত, ত্যাগী, মেধাবী ও মননশীল রাজনৈতিক কর্মি দল থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন।
সেখানে জায়গা করে নিচ্ছেন পেশী শক্তিতে শক্তিমান রাজনৈতিক কর্মি। তাদের একমাত্র পুঁজি কালো টাকা, চাটুকারিতা আর তোষামোদি দিয়ে দলে অবস্থান শক্তিশালী করছেন, পদ পদবী লাভ করেছেন এবং তা দিয়ে সরকারে থাকলে কিংবা সরকারে গেলে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করে স্বার্থসিদ্ধি করছেন। এটাকে অপরাজনৈতিক চর্চাও বলতে পারেন। এ ব্যাধি শুধু বর্তমান সরকারী দল নয় বিএনপি সহ অন্যান্য দলেও বেশ ভালভাবেই সংক্রমিত হয়েছে। বিধায় ভবিষ্যৎ রাজনীতিতেও আশাপ্রদ কিছু আছে বলে মনে করার কোন সুযোগ নাই।
লেখকঃ সমিত জামান, কলামিস্ট।