জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ সমূহের নন-এমপিও অর্নাস-মাস্টার্স কোর্সে এনটিআরসি সনদধারী শিক্ষকেরা বেতন বঞ্চনার শিকার হয়ে তাদের ঈদ আনন্দ কষ্টে পরিণত হতে চলেছে।
দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বেতন বঞ্চিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ সমূহের অর্নাস-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকেরা প্রতিবারের ন্যায় এবারো তাদের ঈদ আনন্দ কষ্টে পরিণত হতে চলেছে। করোনা মহামারির কারণে তাদের কষ্ট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি হলেও উচ্চ শিক্ষাদানে নিয়োজিত এসকল শিক্ষকদের নেই কোন আনন্দ, নেই কোন খুশি । ১৯৯৩ সাল হতে চালু হওয়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়োগকৃত শিক্ষকেরা শুরু থেকেই বেতন বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। শুধু মাত্র সরকারি জনবল কাঠামো না থাকার কারণে এসকল শিক্ষকেরা বারবার সরকারি বেতন ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে পরিশ্রম করার পর তার ন্যায্য মজুরী দেয়া হয় না, সেটাও আবার শিক্ষা শ্রম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালার ভিত্তিতে ও সরকারি বিধি মোতাবেক এই সকল শিক্ষকেরা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। বিধি মোতাবেক একজন শিক্ষকের নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় এবং নিয়োগ ও মৌখিক পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহাদয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। নিয়োগ নীতিমালায় অধিভুক্ত কলেজকে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ সুবিধা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সম পরিমাণ প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও সারাদেশে মোট বেসরকারি কলেজ সমূহের অর্নাস-মাস্টার্স কোর্সে পাঠদানকারী নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা অধিকাংশই বঞ্চিত।
কলেজ কর্তৃক নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বেতন ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে দিয়ে থাকেন যা বর্তমান বাজার মূল্যে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে জীবিকা নির্বাহ করা কখনোই সম্ভব নয়। যেখানে একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার টাকা নির্ধারিত সেখানে একজন উচ্চশ্রেণির শিক্ষকের নামমাত্র বেতন ও মানবেতর জীবন-যাত্রা পরিহাস ছাড়া আর কি হতে পারে?
১৯৯৩ সাল থেকে আজ ২৮ বছর হলো শুধুমাত্র জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত না করার কারণে এসকল শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হতে পারছে না। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। অথচ একই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রী (পাশ) শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হতে পারেন অন্যদিকে মাদ্রাসা পর্যায়ে ফাজিল (স্নাতক) ও কামেল (স্নাতকোত্তর) শ্রেণির শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হতে পারেন, তাহলে অর্নাস-মাস্টার্স শ্রেণির শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি না করার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারেনা।
এছাড়া একই যোগ্যতা ও নিয়মে চাকরি নিয়ে জাতীয়করণকৃত ৩০২টি কলেজের অনার্স মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকেরা যদি নন ক্যাডার হিসাবে সরকারি বেতন সুবিধা পায় তবে বেসরকারি শিক্ষকেরা ন্যূনতম ন্যায্য মজুরি এমপিও সুবিধা না পাওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। তাদের এই দুর্ভোগের কারণে শুধুমাত্র শিক্ষক বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়, সুষ্ঠু পাঠদানের অভাবে শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছে এবং মান হারাচ্ছে উচ্চশিক্ষার। যার দায়ভার সরকার ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোন ভাবেই এড়াতে পারেনা।
এসকল শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভুক্তি প্রদানের জন্য একাধিকবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের সুপারিশসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের তিনটি নির্দেশনা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয় নি।
একটি দেশের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয় শিক্ষকদের কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় উচ্চশিক্ষাদানে নিয়োজিত এসকল শিক্ষকেরাই আজ চরম অবহেলার শিকার। এসকল শিক্ষকদের জীবনে আনন্দের ঈদ আজ কষ্টে পরিণত হতে চলেছে।
তাই উচ্চ শিক্ষাদানে নিয়োজিত এই সকল শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে ও শিক্ষকদের কষ্টের কথা উপলব্ধি করে তাদের কে দ্রুত জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভুক্তি প্রদান করা এখন সময়ের দাবি।
লেখক: শাহ মো. রকিবুল ইসলাম
প্রভাষক ও প্রচার সম্পাদক, বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদ।