৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবস।
আর এই দিন আসার ঠিক আগে থেকে অবধারিতভাবে বিভিন্ন বক্তৃতায় বিভিন্ন পত্রিকার কলামে বিভিন্ন আলাপে ঘরোয়া আড্ডায় বলতে শোনা যাবে, নারী দিবসের প্রয়োজন কী। নারীরা এখন খুব মিনি স্কার্টিয় খুব চ্যাটাং চ্যাটাং বিয়েবিহীন অভিভাবকবিহীন ইংরেজি অপশিক্ষাময় ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’ মার্কা স্বেচ্ছাচারী স্বাধীন। পৃথিবীতে এখন নারীর চাইতে বেশি পুরুষ নির্যাতন হয়, নারীরা এখন আর প্রেমের বাটিতে আহ্লাদের রসে চোবানো রসগোল্লা কালোজাম পান্তোয়া এনে পুরুষ প্রভুর ঠোঁটে আলতো ছোঁওয়ান না, তাম্বুলীনে মুখ রাঙ্গিয়ে স্বামী দেবতার ঠ্যাঙ্গ তলদেশে বসে মৃদুস্বরে মিউমিউ করেন না, বরং রক্ষিতাসমেত উনাদের বাগানবাড়ির নিশিযাপন নিয়ে মহা হাঙ্গামা করেন, দিনশেষে পরিশ্রান্ত পতিকে রাজহংসের পাংখা দিয়ে বাতাস করার বদলে উনাকে দিয়েই বাসন ধোওয়ান, লুঙ্গি কাচান, বাচ্চা কোলে নিতে বলেন- কী আস্কারা! আর তাই- এই এই এই নারী স্বাধীনতা নারী মুক্তি বলে চ্যাঁচিয়ে ঘরকন্না বাদ দিয়ে সমাজসংস্কারের নামে সমাজধ্বংসের পায়তারা করে ধ্বর্মনাশ করে নারী দিবস পালন করে নারী পুরুষের বিভাজনের দরকার কী, দিনশেষে আমরা সকলেই মানুষ কিনা- আসুন আমরা নারী পুরুষের বিভেদ ভুলে মানুষ দিবস পালন করি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি হ্যানত্যান সর্বত্রই ভাঙ্গা রেডিওর মত বাজতে শোনা যায়।
নারী দিবস নিয়ে পুরুষতন্ত্র, পিতৃতন্ত্রের এই চুলকানি আজকের নয়। পৃথিবীতে শোক দিবস হয়, স্তন ক্যান্সার দিবস হয়, স্বাধীনতা বা ভাষা দিবস হয়, পুরুষ দিবস হয়, শিশু দিবস, আদিবাসী দিবস, চাইলে পাতলা পায়খানা দিবসও হয়, কিন্তু নারী দিবস- নৈবঃ নৈবঃ চ- নহে নহে প্রিয়।
নারীবাদ, নারীমুক্তি, নারীস্বাধীনতা, নারীশিক্ষা, এবং সর্বোপরি- ‘নারী’ এই শব্দে পুরুষতন্ত্রের এত এত এত ভয় ক্যানো- কখনো কি নিজেকে জিজ্ঞেস করেছেন? এই যে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে উদ্বৃত্ত সম্পদ নির্ভর অর্থনীতির শুরুর সাথে সাথে যে পিতৃতন্ত্রের জন্ম, ঠিক একই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ঈশ্বরের মুখ দিয়ে মহান বাণী প্রসব করে নারীর যোনীকে নারীর গর্ভকে পিতৃতন্ত্রের সম্পত্তি আর সন্তান জন্ম দেবার ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে ডমিস্টিকেটেড করে ফেলে তাকে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে শ্রমিক তৈরির কারখানা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চাতুরি, তা নারীবাদ ধরে ফেলেছে বলেই কি এত হায়হায় মাতম উঠেছে? নারীশক্তি অবদমনের এই যে এতযুগের সংস্কৃতি, এই যে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানো শিক্ষিত নারীকে বিশ্ববখারূপে শ্যাওড়া গাছের ডাইনী আখ্যা দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারার ইতিহাস, এই যে এতযুগের পুরুষের কচি কচি ফ্রক পরা দোলনায় দোলা গণ্ডাখানেক মেয়ে বিয়ে করবার, বলিষ্ট দুই উরুর ফাঁকে বাঈজি নাচানোর কামাতুর ‘লোলিটা সিনড্রোম’- তাতে নারীবাদ বাধ সেধেছে বলেই কি নারীবাদীদের নিয়ে পুরুষতন্ত্র- পিতৃতন্ত্রের এত ভয়?
পুরুষতন্ত্র ব্যক্তি পুরুষ কেন্দ্রিক নয়। পুরুষতন্ত্র মূলতঃ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক সামাজিক এবং ধর্মীয় ব্যবস্থারূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। পুরুষতন্ত্রের প্রধান উদ্দেশ্য স্বল্প (বা এইক্ষেত্রে বিনা) মূল্যে গণ্ডায় গণ্ডায় শ্রমিক তৈরি করা, কারণ যত বেশি শ্রমিক, তত বেশি সম্পদ। এবং তাই পুরুষতন্ত্র নারী পুরুষের সর্বোচ্চ উপযোগিতা তৈরি করে তার লিঙ্গনির্ভর দায়িত্বের মাধ্যমে। অর্থাৎ নারীর কাজ সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিকের জন্ম দেওয়া এবং পুরুষের কাজ সর্বোচ্চ অর্থ উপার্জন করা। পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারী পুরুষ উভয়ই লিঙ্গনির্ভর অবদমনের শিকার। কিন্তু যেহেতু সন্তান জন্ম দেওয়ার দায়িত্বের মাধ্যমে নারীর চলৎশক্তি, শিক্ষার স্বাধীনতা, স্বাধীন জীবনের স্বাধীনতা, নিজ শরীরের স্বাধীনতা সর্বোতঃভাবে খর্ব করা হয়, তাই পুরুষতন্ত্রের এই অবদমন প্রকটভাবে নারীজীবনেই ধরা পড়ে। এবং সেই কারণে ব্যক্তি পুরুষ পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লিঙ্গ নির্ভর রাজনীতির নিপীড়ণের শিকার হলেও পুরুষতন্ত্রের বিরোধিতা করেন না। কারণ আপাতঃ দৃষ্টিতে এই ব্যবস্থা থেকে তিনিই তুলনামূলক ভালো ‘অফার’ পাচ্ছেন! তাই কলেজ পাশ করে বা না করে তেরো বছর বয়সে আসানসোনে ময়দা আটা মথে চাকরি বা ব্যবসা বা রিক্সা চালানোর নামে গাধার খাটুনি খেটে পুঁজিবাদের একনিষ্ঠ শ্রমিক হিসাবে সমস্ত পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার, নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্ত্রী সন্তানের সমস্ত আর্থিক ভরণপোষন দেওয়ার আয়ুক্ষয়কারী যন্ত্রে পরিণত হওয়ার, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা স্বার্থে যুদ্ধে গিয়ে লাশ হয়ে যাওয়ার এই ব্যবস্থাকেই তারা ‘মন্দের ভালো’ হিসাবে গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু ব্যক্তি পুরুষ এই নির্যাতন মেনে নিলেও ব্যক্তি নারী তা মেনে নিতে নারাজ। অন্ততঃ আজকের দিনে।
২
পুরুষতন্ত্রের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা যে সস্তায় শ্রমিক উৎপাদন তা বোঝার জন্য পৃথিবীর গর্ভপাত আইনগুলির দিকে তাকালেই হয়। পৃথিবীর সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম দিয়ে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ধর্মের পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিকভাবেও পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্রে গর্ভপাত অবৈধ। যেই নারী বেঁচে আছেন, তার অধিকার চুলায় যাক- যেই ভ্রুণ এখনো মায়ের পেটে গাঢ় অন্ধকারে- তার বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে পুরুষতন্ত্র নাকের পানি চোখের পানি নিম্নাঙ্গের পানি এক করে ফেলছে, যেই জীবকোষ এখনও মানুষ হয়ে ওঠে নাই, তার জীবনের বৈধতা নিয়ে পুরুষতন্ত্র ঢাকঢোল পিটিয়ে গর্ভপাতের স্বাধীনতা চাওয়া নারীকে ‘খুনী’ ‘নরপিশাচ’ ‘রক্তপিপাসু’ ‘রাক্ষসী’ আখ্যা দিয়ে ফেলছে! সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে নারী রক্তপাতে মরে যাক, ধর্ষণের কারণে গর্ভধারণ হোক, নারী আর সন্তান চাক বা না চাক, কোনো কিছুতেই গর্ভপাতকে নারীর অধিকার বলে মেনে নেওয়া হয় না, আজকের দিনেও না।
গর্ভপাত আধুনিক বিষয় না, অবশ্যই। খ্রিস্টের জন্মের আড়াই হাজার বছর আগে থেকেই মিশর এবং চিন সহ সমগ্র পৃথিবীতেই গর্ভপাতের অস্তিত্ব ছিলো। কিন্তু অতি অবশ্যই তা গোপনে সম্পাদিত হতো, কারণ গর্ভপাতকে বরাবরই পুঁজিবাদ বিরোধী শয়তানি শক্তি হিসাবে দেখা হতো। মজার বিষয় হচ্ছে, এমনকি বামপন্থী মার্ক্সবাদীদের একাংশ বলশেভিস্টরাও গর্ভপাতকে ‘খুন’ বা ‘নরহত্যা’ বলে চিহ্নিত করতেন। কিন্তু তারপরেও এই অঞ্চলে নিয়মিতই গোপনে ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে গর্ভপাত অব্যহত থাকলে লেনিন শাসনামলে সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯২০ সালে তা বিশেষ বিবেচনায় সাময়িক সময়ের জন্য আইনতঃ বৈধ করা হয়। যদিও ১৯৩৬ সালেই তা স্তালিন শাসনামলে আবার অবৈধ ঘোষনা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীতে জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ দেখিয়ে।
প্রো-চয়েস বা প্রো-লাইফ অর্থাৎ গর্ভপাতের পক্ষে বা বিপক্ষে যেদিকেই আপনি অবস্থান করুন না ক্যানো, আপনাকে মানতেই হবে, গর্ভপাত এবং গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত একজন নারীর মৌলিক স্বাধীনতা। সমাজের প্রতি একজন নারীর দায়বদ্ধতা অবশ্যই থাকবে, কিন্তু সেই দায়বদ্ধতা কোনোভাবেই নিজের শরীরের উপর নিজের অধিকার রক্ষার ক্ষমতাকে খর্ব করতে পারে না। একজন নারী যেভাবে প্রথমে মানুষ, পরে সামাজিক জীব; ঠিক একইভাবে তার প্রথম অধিকার তার নিজ শরীরের স্বাধীনতা, পরবর্তীতে সেই শরীর সামাজিক দায়িত্ব পালনের ভূমিকায় আসতে পারে। চাইলে নাও আসতে পারে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ব্যক্তিস্বাধীনতা বা এই চাওয়া না চাওয়ার উপর যদি মানবসভ্যতা নির্ভর করে, তাহলে কি আদৌ পৃথিবীতে মানুষের বংশরক্ষা হতে পারে? এইক্ষেত্রে দুইটা মৌলিক প্রশ্ন আসতে পারে; প্রথমতঃ ব্যক্তিস্বাধীন হওয়ার অর্থ কি এই যে পৃথিবীর তাবৎ নারী গর্ভধারণের বিপক্ষে অবস্থান করে শিশু জন্ম দেওয়া বন্ধ করে, যাবতীয় পুরুষকে খেংড়াপেটা করে ঢিস্টিং ঢিস্টিং স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন করে নীতিবর্জ্জিত ইংরেজীশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মনপ্রাণ জীবনযৌবন বহুপুরুষের কনডোমিয় লিঙ্গে স্থাপন করে মানবসভ্যতা ধ্বংস করে ফেলবেন? এবং দ্বিতীয়তঃ- মানবসভ্যতা রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা আদতে কোথায়। অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্স যদি সত্য সত্যই বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে সমস্যা কী।
চিন্তা করে বলুন, সমস্যা কী।
আমি নিশ্চিতভাবি বলতে পারি, পুরুষতন্ত্র এই দুই প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ। ষাটের দশকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আইনতঃ বৈধ এবং সহজলভ্য হবার পর থেকে পরিবারপ্রতি শিশু জন্মহার কমেছে, অবশ্যই। পশ্চিমা বিশ্বে নারী শিক্ষার হার বাড়ার ফলে, নারীর ওয়ার্কিং ফোর্সে যুক্ত হওয়ার ফলে তুলনামূলক নিচু পার ক্যাপিটা জিডিপির উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তুলনায় তাদের শিশুজন্মের হার কম, অবশ্যই। কিন্তু একইসাথে চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নয়ন, বাল্যবিবাহরোধ এবং নারী শিক্ষিত হওয়ার দরুণ মাতৃগর্ভে এবং জন্মপরবর্তী শিশুমৃত্যুর হার কমেছে এবং শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেড়েছে। যেকারণে ৭ বিলিয়ন মানুষের পৃথিবী আজকের দিনেও এইসব ঘোড়ায় চড়া চাঁদে যাওয়া স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা গর্ভপাতের স্বাধীনতার জন্য রাস্তা অবরোধ করা নারীবাদীদের নারীবাদের উত্থানের পরও বিলুপ্ত হয়ে যাবার কোনো সম্ভাবনা দেখতে পারছে না।
বিলুপ্ত হয়ে গেলে অবশ্য খারাপ হতো না।
৩
নারীজাগরণ নিয়ে তাই এই ধোঁয়াসা এই ভয় এই অপপ্রচার বন্ধ করার এখন সময়। বলা হয়, women are the last line of defense- নারীই প্রতিরোধের সর্বশেষ দূর্গ। যখন সমস্ত আন্দোলন ব্যর্থ হয়, যখন সমস্ত বিপ্লব ভেঙ্গে পড়ে, তখন নারীই শেষ প্রতিরক্ষা হিসাবে দাঁড়ায়। ১৯৭১ এ আর কেউ বুঝতে না পারলেও নারীরা বুঝেছিলেন বাঙালি জাতি একটা সশস্ত্র যুদ্ধ মোকাবেলা করতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণের নেতৃত্ব দেয়া প্রীতিলতার বীরত্ব, ৪৬ এর তেভাগা আন্দোলনে নারী কৃষকদের ভূমিকা বা ৭১ এর নারীদের প্রথম সশস্ত্র মিছিল, মুক্তিযুদ্ধে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে আজকের দিনে সেকুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দাবীতে ভারতের পার্ক সার্কাস আর শাহীনবাগে এন-আর-সি আর ক্যাবের বিরোধিতায় ঘর থেকে বের হওয়া হাজার হাজার সাধারণ মুসলিম নারীর প্রতিবাদ- এইসবই প্রমাণ করে নারীর ভূমিকা শুধু সন্তান জন্ম দেওয়ায় না, এইসবই প্রমাণ করে, শুধু পুরুষের পেশীবলে এই পৃথিবী তৈরি হয়নি, স্নেহ আর মমতাই নারীর একমাত্র বৈশিষ্ট্য না, পেশীশক্তি নারীরও আছে, নারীও বিথিকা বিশ্বাসের মত গ্রেনেড ছুঁড়ে গানবোট উড়িয়ে দিতে পারেন, রাণী ভবানি বা এলিজাবেথ দা ফার্স্টের মত একলাই রাজ্যশাসন করতে পারেন, হাইপেশিয়া, মেরি কুরি, রোজালিন্ড ফ্রাংকলিন, ভেরা রুবিন, রাজেশ্বরী চ্যাটার্জি আর আনন্দীবাঈ যোশীর মত বিজ্ঞান গবেষণায় অবদান রাখতে পারেন। আর এইসবই প্রমাণ করে, লিঙ্গ দিয়ে নারীকে আলাদা করা সম্ভব না, এইসবই প্রমাণ করে নারীকে কম খেতে দিয়ে, কম দৌড়াতে দিয়ে, কম পড়তে দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল বানানোর রাজনীতি পুরুষতন্ত্রের, প্রাকৃতিকভাবে নারী পুরুষের চাইতে কোনো অংশে কম সবল নন।
না, নারীবাদ নিশ্চয়ই পুরুষশাসিত সমাজ থেকে পুরুষ প্রভুকে উৎখাত করে নারী শাসনের প্রতিষ্ঠা চায় না। নারীবাদ নারী পুরুষ ইন্টারসেক্স সকল মানুষের সমান অধিকারের সাম্যের পৃথিবীর কথাই শুধু বলে। ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার নারীবাদের লক্ষ্য নয়। নারীবাদের নির্মীয়মান ইতিহাসে ব্যক্তি নারী ব্যক্তি পুরুষের সহমর্মিতা আর ভালোবাসার- স্নেহের- মমতার হাত ছাড়া কিছুই দাবী করে না। তাই নারী দিবস পালনে, নিজেকে নারীবাদী বলতে, নারীর এই হাজার বছরের অবদমিত হবার পুরুষতান্ত্রিক কলংকের ইতিহাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে লজ্জা পাবার কিছু নাই। ভয় পেতে পারেন, কিন্তু লজ্জা পাবার কিছু নাই।
ভয় পাবেন, কারণ, অজানা সবসময়েই ভয়ের। নতুন সবসময়েই ভয়ের। ভয় পাবেন কারণ আপনার চিরচেনা পৃথিবী পালটে যাচ্ছে একটু একটু করে। ভয় পাবেন কারণ, যেই নারীকে এতদিন মুখ বুজে অত্যাচারিত হতে দেখে এসেছেন, বিনা পারিশ্রমিকে আপনার জন্য মুরগ মুসল্লম আর সর্ষে ইলিশ আর ঝিঙ্গে পোস্ত আর মুড়িঘণ্ট আর চিংড়ি মাছের মালাইকারি আর কই পালং আর নারকেল দিয়ে শোল মাছ আর রুই মাছের কালিয়া আর পেস্তা বাদাম জাফরান দিয়ে রূপার থালায় সাজানো শাহী টুকরা রেঁধে, বাচ্চা ঘুম পাড়িয়ে আপনার লুঙ্গি গামছা জাঙ্গিয়া সাধের সিল্কের রুমাল কাঁচতে বসে যেতে দেখতেন, সেই বোরখা পরা নাজ বেগমরাই যখন রাস্তায় নেমে মোদির বিরুদ্ধে “আমরা সবাই ভারতীয়, কিন্তু হঠাৎ করে কোনো তুঘলকের কাছে আমাদের ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে রাজি নই। কারো যদি দরকার থাকে, তবে তিনি প্রমাণ করুন আমি ভারতীয় নই” বলে স্লোগান দেন, স্বৈরাচারি রাষ্ট্রযন্ত্রের অস্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, তখন ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক। তাই আপনাদের নারী দিবস আসলেই ঝকমাড়ি ঘ্যানঘ্যান করাই স্বাভাবিক। নারী দিবসের বদলে মানুষ দিবস পালনের রকমারি কুযুক্তি বের করাই স্বাভাবিক। নারীবাদ নিয়ে, নারীবাদী নিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়ানো, ব্যঙ্গ করা, প্রহসন লেখাই স্বাভাবিক।
তাই গান্ধী আন্দোলন হোক, ৫২ বা ৬৯ এর আন্দোলন হোক, ৭১ এর যুদ্ধ হোক, অথবা আজকের, এই ২০২০ এর ভারতের নাগরিত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনই হোক, বা সারা পৃথিবী জুড়ে ইরান- সৌদি আরব- ইউক্রেন- পোলান্ড- মেক্সিকো ধরে কালপুরুষের নক্ষত্রের মত জ্বলে ওঠা নারীবাদী আন্দোলন হোক, মি-টু মুভমেন্ট হোক, ‘তুই ধর্ষক’ বলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে গান গাওয়া হোক- এসব দেখে আপনার অনভ্যস্ত চোখের ভয়ার্ত দৃষ্টির আরো ভয় পাওয়া স্বাভাবিক।
Rকিন্তু ভয় কেটে গেলেই জানবেন, এসমস্তই দেশ কাল পাত্রের ভেদ ভুলে অভেদ ধর্মজাতির আপনার আমার সবার সাম্যের প্রেমের স্নেহের মমতার পৃথিবী তৈরিরই পথ। আপনার উপর আমার প্রভুত্বর, একনায়কত্বর, স্বৈরশাসনের পথ নয়। যে পথে আপনি এতদিন হেঁটে এসেছেন, যা এতদিন আপনি আমার উপর করে এসেছেন, তা আমি আপনার সাথে করবো না। যে অত্যাচারের শিকার আমি হয়েছি, সেই অত্যাচার আমি আপনাকে করে, আপনাকে দিয়ে আমার মাসিকের রক্তের কাপড় কাঁচিয়ে, আমার মনঃরঞ্জনে আপনাকে ঝুমঝুমি আর আলতা পড়িয়ে নাচিয়ে, আপনার কপালে আমার প্রভুত্বের সিঁদুরের দাগ দিয়ে, আপনার শরীরকে আমার বলে দাবী করে বস্তায় ঢেকে, আপনাকে কম খেতে দিয়ে, আপনাকে আমার যৌনদাস বানিয়ে, আপনার প্রেমকে দুর্বলতা বলে দেখিয়ে আমি নারীবাদ কায়েম করবো না।
আমি বিপ্লব করেছি আমার নায্য দাবীতে, আমি বিপ্লব করবো আমাদের নায্য দাবীতে, আমাদের ভালোবাসার পৃথিবী তৈরিতে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment