বিভাগ মত-দ্বিমত

পার্বত্য চট্টগ্রাম কি স্বাধীন হবে?

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

দুটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কিছু ভুল ধারনার বিষয়ে মতামত দিব বলে ঠিক করে রেখেছি। একটি হল বর্ডার ম্যানেজমেন্ট এবং অন্যটি পার্বত্য চট্টগ্রাম।

যারা যুক্তি দিবেন তাদের স্বাগত জানায়। কিন্তু যদি গালিগালাজ করেন তবে ডেফ্রেস আপনার জন্য না।

আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কথিত জুম্মল্যান্ড নিয়ে কিছু বক্তব্য তুলে ধরব।

কোন ইস্যু শেষ হলেই নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে গরম মসলা মিশৃত করে প্রচার প্রচারনার দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নিয়ে আমরা দেশ, সরকার, সেনাবাহিনী সহ সুবিধামত সবাইকে আমরা গালিগালাজ করে অভ্যস্ত। এই লেখার পরো যে এগুলা নিয়ে মানুষের চিন্তাধারা পরিবর্তিত হবে না সেটা জেনে বুঝেই ঝুকি নিয়ে এই লেখা লিখছি।

জুম্মল্যান্ড এবং শান্তি চুক্তি

জুম্মল্যান্ড ধারনা নতুন কিছু না। আশি এবং নব্বই এর দশকে পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম ছিল সব থেকে বেশি। জুম্মল্যান্ড এর কথিত জাতির পিতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ১৯৮৩ সালের নিজ দলের বিদ্রোহী সশস্ত্র শাখার গুলিতে নিহত হয়েছিলেন।

নিজেদের মধ্যে বিভেদের ফলে ইউপিডিএফ এবং জেএসএস আজো একে অপরকে গুলি করে মারে। যাইহোক, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির আগে এই অঞ্চলে নিয়মিত লাশের বন্যা বয়ে যেত। দেশের সেনাবাহিনী যেমন প্রাণ দিয়েছে ঠিক তেমনি সন্ত্রাসীরাও মরেছে। এক প্রকার গৃহ যুদ্ধের মত পরিস্থিতি ছিল দেশে ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল দূর্বল। বিদেশি বিনিয়োগ এক প্রকার বন্ধ ছিল।

সেই পরিস্থিতির আমুল পরিবর্তন আসে ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পর। দেশে স্থিতিশীলতা চলে আসে। কিন্তু সমস্যা হল আমরা ইদানিং আবার সেই জুম্মল্যান্ড নিয়ে চিৎকার শুরু করেছি। কল্পনা করে নিয়েছি যে দেশ মনে হয় ভাগ হয়ে গেল। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে?

জুম্মল্যান্ড এর কথা বলতে গিয়ে আমরা সকল উপজাতি ভাই বোনদের সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে দেশের মধ্যেই বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টাই লিপ্ত। কিন্তু বাস্তবতা হল উপজাতি ভাই বোনেরাও এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নির্মম শিকার।

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে অনেক বার পাহাড়ে গিয়েছি। উপজাতিদের বাসায় রাত্রিযাপন করেছি। তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। আমার কি মনে হয়েছে সেটাই তুলে ধরছি।

পাহাড়ে শহরের আশেপাশে যেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে সেসব এলাকার মানুষের ভেতরেও ইন্টারনেট পেনিট্রেশন অনেক কম। সব মিলিয়ে উপজাতিতের ৮০% মানুষ হয়ত ফেসবুক ব্যাবহার করেন না বা ফেসবুক কি জিনিস তা জানেন ই না। অধিকাংশ উপজাতিদের জীবন খুবি সরল। জুম্মল্যান্ড কি জিনিস এই ধারনার সাথেই তারা পরিচিত না। তারা পরিচিত শান্তি বাহিনীর সাথে। বাঙ্গালিরা যেভাবে শান্তির কথা শুনলে ভয় পায় ঠিক একি ভাবে তারাও শান্তির কথা শুনলে ভয় পায়।

আর চাঁদা দিতে দিতে তারা নিজেরাও অতিস্ট এবং এর থেকে মুক্তি চায়। এই সহজ সরল মানুষ গুলিকে আমরা যারা সন্ত্রাসী সংগঠন করে তাদের সাথে গুলিয়ে ফেলি। এবং তাদেরকেও সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে দেশের ভেতরেই বিভেদ সৃষ্টি করছি। যেটা অবিচার।

আপনারা যারা ফেসবুকে রিপাবলিক অব জুম্মল্যান্ড, জুম্মল্যান্ড পতাকা, জাতীয় সংগিত শুনে সকল উপজাতিকে সন্ত্রাসী বলতেছেন তারা হয়ত জানেন না এসব পেজের একটিও দেশের ভেতর থেকে পরিচালিত হয়না। বিদেশে বসে কিছু সন্ত্রাসী এগুলা করে যাদের দেশে আসার সাহস নেই।

এম এন লারমার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে ভারতে বসে। সম্মেলন করে নেপাল বা যুক্তরাজ্যে। তারা ফেসবুকে যেসব প্রচারনা চালায় উপজাতিদের ৯৫% মানুষ এগুলা নিয়ে কোন ধারনায় রাখে না।

ইউপিডিএফ এর মত সন্ত্রাসী গোষ্ঠি যতটা হুমকি সৃষ্টি করে রেখেছে তার থেকে বড় হুমকি হল আরাকান আর্মি। বান্দরবানের গহীনে তাদের অবাধ বিচরন।

এখন এখানে সমস্যা কোথায়?

শুরুতে আসি বিজিবি এর বর্ডার আউটপোস্ট নিয়ে। পার্বত্য অঞ্চলে এমন অনেক বর্ডার আউটপোস্ট আছে যেখানে বিজিবি কে পায়ে হেটে দুই দিন বা তিন দিন পর পৌছাতে হয়। আর এই দুই দিন বা তিন দিন বিজিবি সদস্যরা হয়ত কোন উপজাতি পাড়ায় রাত্রিযাপন করে। ভেবে দেখুন যদি সকল উপজাতি সন্ত্রাসী হত তাহলে আমাদের বিজিবি কি তাদের পাড়ায় বিশ্রাম নিতে পারত? খাওয়াদাওয়া করতে পারত? শান্তিতে ঘুমতে পারত?

সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে এমন দেখেছি যে সেনাবাহিনীর গাড়িতে একি সাথে উপজাতি অথবা বাঙ্গালীদের তুলে নিয়ে তাদের বাড়ির কাছাকাছি পৌছে দিতে। এমন সসম্প্রীতি আপনারা কেন চিল্লায় চিল্লায় নষ্ট করার পায়তারা করেন?

আর আপনাদের ধারনা যে সেনাবাহিনীর সেখানে কন্ট্রোল নেই। কথা আংশিক সত্য। সীমান্তের দুর্গম প্রান্তে সহজে পৌছানো সম্ভব হয়না। এজন্য সেখানে নজরদারি করাও কঠিন। কিন্তু সেনাবাহিনী কি সেখানে বসে আছে? সারা বছর দূর্গম পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ চলছে। পার্বত্য জেলায় পাহাড় কেটে রাস্তা করার জন্য প্রায় ৯০০০ কোটি টাকার প্রকল্প বিগত কয়েক বছর ধরেই চলছে। পুরো সীমানা জুড়েই এই রাস্তা নির্মাণ চলবে। আর রাস্তা যখন শেষ হবে তবে নিশ্চিত ভাবেই এখানে আরাকান আর্মির ঘাটি কল্পনাতীত হবে। কারন পুরো সীমানা তখন আমাদের নজরদারিতে।

আরেকটি ছোট্ট বিষয় বলে রাখি। এই ধরুন সেনাবাহিনী হাতে কতজন পাহাড়ী সন্ত্রাসী মারা যায় চিন্তা করুন। দেখবেন সেনাবাহিনীর হাতে যত সন্ত্রাসী জীবন দেয় তার থেকে বেশি জীবন দেয় ইউপিডিএফ এবং জেএসএস এর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। একদল আরেকদলকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। ( এখানে আমি স্যাবোট্যাজের কথা বলব না। বুঝে নেন আপনারা)

বিগত কয়েক বছরে রাস্তা অনেকদুর হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রনে এসেছে এসব এলাকা। বিজিবি আউটপোস্ট বাড়ানো হচ্ছে। হেলিকপ্টার যুক্ত হচ্ছে। পর্যটন বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে খুব ভাল ভাবেই এখন আমাদের নিয়ন্ত্রনে। বিদেশে বসে কিছু পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের ফেসবুকের কর্মকাণ্ড দেখে আপনারা ভয়ে অজ্ঞ্যান হয়ে ধারনা করেন যে সেনাবাহিনী হয়ত বসে আছে। কিছুই করছে না। তাই যদি হত তাহলে প্রতিবছর লাখো মানুষের পার্বত্য চট্টগ্রাম ট্যুর অথবা ট্রেকিং অসম্ভব হত। অবশ্য সেনাবাহিনী নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে সিভিল কাজে যুক্ত হওয়া বহির্বিশ্বে ভাল দেখায় না। তাই এখন সেই স্থান রিপ্লেস হয়েছে র‍্যাব দিয়ে। কিন্তু কেন? কি উদ্দেশ্যে? এর উত্তর নিজেরা খোজার চেষ্টা করুন।

মতামতঃ ওয়াসিম

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored