বেশ কিছু দিন যাবৎ বিষয়টা নিয়ে লিখবো লিখবো বলে ভাবছিলাম। কিন্তু সময়াভাবে তা আর হয়ে উঠছিলোনা। সপ্তাহ দুয়েক আগে এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। সেখানে ক’জন ভাবীর সঙ্গে দেখা। তারা বেশ মজা করছিলেন। এমন সময় আমাকে দেখেই এক ভাবী দুষ্টুমি করে বলে উঠলেন, “ভাইয়া আবার কি যেনো কী লিখে বসেন কে জানে!” অদূরে দাড়িয়ে থাকা তার ছেলেটিকে দেখিয়ে বললাম, “ভয় নেই; আমি এবার ওকে নিয়ে লিখবো।” কথাটা শুনে মনে হলো তিনি যেনো হাজার ভোল্টের বিদ্যুত শকড খেলেন।
চেহারায় ফুটে উঠলো স্পষ্ট দুশ্চিন্তার ছাপ। ভাবছেন, বদলোকটা তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে না জানি কি লিখে বসেন!
বছর দুয়েক আগের কথা। আমি ও আমার স্ত্রী ফুটপাত ধরে AIB ব্যাংকের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম। দুজনের কানেই হঠাৎ একটি আওয়াজ ভেসে অসলো। উল্টো দিকে ঘার ফিরিয়ে তাকাতেই দেখি ওই ছেলেটি যাকে নিয়ে সেদিন ভাবীকে লিখবো বলেছিলাম। স্কুলবাসের জানালায় থাবরিয়ে শব্দ সৃষ্টি করার মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে সে। বাসটি রাস্তার এক পাশে থামানো ছিলো। এ দেশে বাসের জানালা যেহেতু খোলা যায়না তাই আমাদেরকে কাছে ডাকার তার এ অভিনব কৌশল।
ছেলেটির বয়স সম্ভবত ১০/১১ বছর হবে। আমরা বাসটির কাছে যেতেই ভেতর থেকে সে হা হা করে হাসতে লাগলো। তার এ প্রাণখোলা হাসি আমাদেরকে বিমোহিত করলো। বিমুগ্ধ হলাম। তার হাসি ও আচরণ ভঙ্গি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিলো, আমরা কেবল তার পরিচিতই নই বরং খুবই কাছের মানুষ। স্বজন। আত্মার আত্মীয়। তার এ উদার উল্লাস আমাদেরকে কেবল আবেগাপ্লুতই করেনি, হৃদয় থেকে তার প্রতি ভালোবাসা, মমতা ও শ্রদ্ধার সৃষ্টি করলো।
আমরা যাদেরকে স্বাভাবিক বলি, যেসব সন্তানাদি নিয়ে আমরা গর্ব করি, যাদের মেধার গল্প শুনে আমরা উল্লসিত হই সে রকম অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা পেছন থেকে ডাকবে তো দূরের কথা সামনাসামনি মুখোমুখি হলেও কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেও তাদের অনেক কষ্ট হয়। কেউ কেউ দেখেও না দেখার ভান করে উল্টো পথে হেঁটে চলে যায়। স্থানীয় বন্ধুবান্ধবের সাথে থাকলে তো কথাই নেই। ভাবটা এরকম যেনো চেনেইনা। এই যদি হয় কোনো স্বাভাবিক ছেলেমেয়ের শিক্ষাদীক্ষা কিংবা মৌলিক চরিত্রের অবকাঠামো তাহলে কী দরকার এমন স্বাভাবিক ছেলে মেয়ের! বরং ওই ছেলেটির মতো যাদেরকে আমরা প্রতিবন্ধী ভেবে হেয় করি, আড় চোখে দেখি তারাই কি অনেক উত্তম নয়? সত্যিকার প্রতিবন্ধী তো তারাই যারা স্বাভাবিক ভাবে জন্ম নিয়েও মানসিক ও চারিত্রিক ভাবে বিকলাঙ্গ। ওদের এ বিকলাঙ্গত্ব দূর করতে না পারলে সমাজে এরাই একদিন বিষপোড়া হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষপোড়ার প্রভাবে সমাজ হয়ে যাবে একসময় সত্যিকারের প্রতিবন্ধী।
অভিশপ্ত প্রতিবন্ধীত্ব থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদেরকে এখনি নড়েচড়ে বসতে হবে। প্রতিবন্ধীদেরকে শুধু হেয় প্রতিপন্ন করে বা করুণা দেখিয়ে নয় বরং সুস্থ স্বাভাবিক হওয়া সত্বেও যারা মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী তাদের প্রতিই আমাদের বেশি মনোযোগী হতে হবে। কিছু দিন আগে খবরে দেখলাম, আমাদের দেশে এক ভদ্রমহিলা হুইল চেয়ারে ট্রেনে উঠছিলেন। কোনো এক সাংবাদিক তাকে টিপ্পনী কেটে “মাল” আখ্যায়িত করে ট্রেনটিকে মালটানা গাড়ি বলে অভিহিত করে। টিকেট চেকার টিকেট চেক করতে এসে কিছুটা ঝাঁড়ি মিশ্রিত উপদেশ দিতে গিয়ে তাকে বললেন, “একা একা ভ্রমণ করা তো আপনার জন্য সমীচীন নয়। সাথে ককয়েকজন সহযোগী নিয়ে চলাচল করবেন।”
এই যে রাস্তাঘাটে অনভিপ্রেত হেনস্তা, স্বেচ্ছায় ছোট করার হীন মন মানসিকতা তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে লোকটি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্বেও মানসিক ভাবে সুস্থতার উর্ধ্বে তাকে নিয়ে কটাক্ষ করা শুধু অবিচারই নয়, অমানুষিকতাও বটে। সুস্থতার আড়ালে বরং নিজেদের প্রতিবন্ধী রুপটাই তুলে ধরার সামিল মাত্র।
কোনো মানুষই সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে নয়। সুস্থ, অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী সবারই কমবেশি সমস্যা থাকে। এসব সমস্যা চলার পথে মোটেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়না। কিন্তু কিছু কিছু ঠোঁটকাটা মানুষ যখন তিরস্কারের ভাষায় এসব সমস্যা বা সীমাবদ্ধতার কথা কাউকে মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখনই তা হৃদয়ে পীড়ন ঘটায়।
একজন মানুষ প্রতিবন্ধী হতেই পারে, শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। কিন্তু সে সীমাবদ্ধতা নিয়ে কেউ যখন দিব্যি ভালো মানুষের মতো হেসে খেলে আনন্দে জীবন যাপন করে, কারো মুখের দিকে চেয়ে না থেকে নিজেই নিজের মতো করে যাপিত জীবন কাটাতে সক্ষম হয় তখন তাদের কাজের স্বীকৃতি না দিয়ে, বাহবা না জানিয়ে উল্টো বাঁকা চোখে কথা বলি। বিদ্রুপ করি। সমালোচনা করি। এ বাঁকা চোখ, এ বিদ্রুপ, এ সমালোচনা সুস্থতার উপর দাঁড়িয়ে আমাদের প্রতিবন্ধী মনমানসিকতারই উলঙ্গ বহিপ্রর্কাশ। যারা আল্লাহর ইশারায় জন্মগত ভাবে প্রতিবন্ধী তারা আসলে প্রতিবন্ধী নয়, সেটা তাদের জীবনের একটা দিক বা অবস্থা মাত্র। তাদের দ্বারা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। সমাজের অবনতিও ঘটেনা। সুতরাং তারা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিয়েও প্রতিবন্ধী নয়। সুস্থতার বড়াই করে যারা প্রতিবন্ধীর গায়ে থুতু ছেটায় তারাই বরং প্রকৃত প্রতিবন্ধী। এসব প্রতিবন্ধীর ভারে সমাজ আজ ন্যুব্জ।
এমন প্রতিবন্ধী সমাজ আমাদের কাম্য নয়। এ ধরনের সমাজ কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনা। সুতরাং এ সমাজের বৃত্ত থেকে যতো দ্রুত বেরিয়ে আসা যাবে ততোই মঙ্গল। এর জন্য প্রয়োজন শুধু নিজের মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অসূর ও প্রতিবন্ধী সত্বাটাকে গলা টিপে হত্যা করা।
লেখক – আয়ারল্যান্ড প্রবাসী প্রাবন্ধিক ও কলামিসট ১৪/০৭/২০২০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment