ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা করা হয়েছে খোদ ডাকসু ভবনে। নুরুল হক ইতোমধ্যেও মার খেয়েছেন, তাতে তেমন একটা শোরগোল বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল সেসব ঘটনাকে তেমন পাত্তা দেয়নি। বলতে গেলে পাওা দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে এবার আর পাত্তা না দিয়ে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এবার কেন পাত্তা না দিয়ে পারলো না আওয়ামী লীগ? এর জবাবে বলা যায়, আগে যতোবারই নুর বা তার সহযোগীদের ওপর হামলা হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবই ছিল ডাকসু ভবনের বাইরে। এবারের হামলা হয়েছে ডাকসু ভবনের ভেতরে। এমনকি ভাঙচুর করা হয়েছে ডাকসু ভিপির কার্যালয়ও। ডাকসু ভবনে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ তৈরি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কোটা আন্দোলনের সেই সময়ের মতো আবারও যাতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্যই হয়তো ক্ষমতাসীনদের এমন নমনীয়তা।
তবে এর আগের হামলার ঘটনায় সংঘর্ষের কারণ গণমাধ্যমে আসতো। এবার সেটা তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। ডাকসু ভবনে হামলার ঘটনায় সেই কারণ হয়তো চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু এটা আসা দরকার ছিল। যেমন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, কেন নুরের ওপর হামলা হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। তবে যে কারণেই হামলা হোক, হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি। তিনি সাংবাদিকদের এও বলেছেন যে, নুরের ওপর বারবার কেন হামলা হয়, সেটা জানা নেই। আপনারা যদি জেনে থাকেন, তাহলে আমাদের জানান, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এটা সত্য যে, নুর ও তার সহযোগীদের ওপর যতোবার হামলা হয়েছে এর মধ্যে এবারের হামলা ভয়াবহ। নুরদের সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ২৫-৩০ জন নেতা গুরুতর মারধরের শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ আবার লাইফ সাপোর্ট কিংবা আইসিইউ’তেও ছিলেন। মারধরের ঘটনা অস্বীকার, পাল্টা দোষারোপ যাই করা হোক না কেন, জনগণ যে এটা ভালো ভাবে নেবে না এটা সহজেই বুঝা যায়। এজন্যই মারধরের শিকারদের ঢাকা মেডিক্যালে দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকও স্বীকার করেছেন, ‘বিষয়টা বর্বর ও পৈশাচিক হয়েছে।’
ডাকসু ভবনে হামলা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ বলেছেন: ‘আজ দুর্ভাগ্য এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আমি দুঃখিত, বিব্রত এবং লজ্জিত। আমার এ প্রসঙ্গে বলার কিছুই নেই।’ তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এ সদস্য স্মরণ করে দিয়েছেন: ‘যারা ডাকসুর ভিপি হয় তাদেরও সতর্কতার সঙ্গে চলা উচিত, কথা বলা উচিত। এমন কিছু করা উচিত নয়, যেটাতে প্রতিপক্ষের মনে আঘাত লাগতে পারে৷ ডাকসুর মানে সকলের। আমাকে কেন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়েছিল? কারণ ডাকসু মানে সকলের।’
ডাকসু নেতৃবৃন্দসহ সকল ছাত্রনেতাদের এ পরামর্শ মেনে চলা উচিৎ। প্রতিপক্ষ আহত নাকি মারা গেছে ‘ডাজ নট ম্যাটার’ বলা কখনোই কোনো ছাত্রনেতাদের মুখে শোভা পায় না। এটা অপরিপক্কদের কথা হতে পারে। তোফায়েল আহমেদের পরামর্শ এসব আবোল-তাবোল বলা ছাত্রনেতাদের জন্যও প্রযোজ্য।
নুরের ওপর হামলার ঘটনার সূত্রপাতে গেলে দেখা যায়, এই হামলার মূল কারণ ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। দিল্লির জামিয়া মিলিয়াসহ ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ, হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে দাঁড়িয়েছিল ভিপি নুরের নেতৃত্বে তার সংগঠন। সেখানেই মূলত হামলার শুরু। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি, নুর ডাকসুর ভিপি হয়ে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলতে পারেন না। সরকারের একজন মন্ত্রীও হামলার নিন্দা জানিয়ে একই প্রশ্ন তুলেছেন।
ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলা ডাকসু ভিপির কাজ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিপি নুর আলোচনায় থাকার জন্য অতীতেও এ ধরনের কাজ করেছেন। এখন তাই বলে কি ভিপি নুরকে আরও আলোচনায় রাখতে হবে? যুক্তির খাতিরে মন্ত্রীর কথা মেনে নিলেও বলতে হয়, ভিপি নুর যতোটা না আলোচনায় থাকতে চান, ছাত্রলীগ আর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ তার চেয়েও হাজার গুণ বেশি আলোচনায় নিয়ে এসেছে নুরুল হককে।
এছাড়া ভারতের শিক্ষার্থীদের কথা বলে রাস্তায় দাঁড়ানো ডাকসু ভিপির জন্য অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড হলেও এ বিষয়ে কথা বলা যাবে না, এটা কোন ধরনের নীতি? সরকার কি এ ধরনের কোনো নীতিমালা গ্রহণ করেছে? না নিয়ে থাকলে দায়িত্বশীল একজন মন্ত্রী এসব কথা কীভাবে বলেন?
ভারত ঐতিহাসিকভাবে আমাদের বন্ধু দেশ, এটাই চিরন্তন সত্য। প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে তাদের সঙ্গে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিতর্কিত নাগরিকত্ব ইস্যু এখন আর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় যে নয়, সেটা দিবালোকের মতো প্রকাশ্য। খোদ ভারতে এ বিলের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের মুখে বিজিপি পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের একাধিক মন্ত্রীও ইতোমধ্যে ভারত সফর বাতিল করেছেন। তারা এর কারণ হিসেবে অন্যকিছু বললেও বিশেষজ্ঞরা নাগরিকত্ব বিলকেই সফর বাতিলের কারণ হিসেবে দেখছেন। এসব ঘটনার পর ডাকসু ভিপি অতি উৎসাহী হতে পারেন না। আর দাঁড়ালেও রাজনীতি দিয়ে রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে হবে। ঠাণ্ডা মাথায় এসব মোকাবিলাও করতে হবে। কারণ রাজনীতি শুধু মারপিট আর পেশি শক্তির প্রদর্শন নয়।
এটা মনে রাখতে হবে যে, পাকিস্তানপন্থীরা এদেশে ভারত বিরোধিতা উস্কে দিতে চাইবে। তারা সুযোগ পেলেই বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের এই সম্পর্কে ছোবল মারতে চাইবে। তাই দু’দেশের সম্পর্কের বিষয়টি খুব ভালোভাবে এগিয়ে নিতে হবে। তাই বলে বাংলাদেশের নাগরিকরা বিভিন্ন ইস্যুতে কথাই বলতে পারবেন না, এটা কোনো নীতি হতে পারে না। তাছাড়া বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে যেমন, ফিলিস্তিন-ইরাকে যুদ্ধ বা বর্বরতার প্রতিবাদে নানা সময় দেশের ছাত্রসমাজের বিক্ষোভ ও মিছিল কিন্তু নতুন কিছু না। সাম্প্রতিক এই বিষয়ে প্রতিবেশির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায় একা শুধু বাংলাদেশের নয়, ভারতেরও। কারণ, পাকিস্তানপ্রীতি উস্কে গেলে ক্ষতিটা বাংলাদেশের একার হবে না, এর কঠিন দায় শোধ করতে হবে ভারতকেও।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment