বিভাগ মত-দ্বিমত

ভারতের পক্ষে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক কি আদৌ সম্ভব?

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

অনেকেই হাল্কা চালে বলে থাকেন ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোতে খোঁজাখুঁজি করলে আলপিন থেকে হাতি – সবই পাওয়া যায়।

হাতি না পাওয়া গেলেও ই-কমার্স সাইটগুলোতে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি কিংবা মুসলমানদের বাহারি জায়নামাজ থেকে শুরু করে খেলনা, মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ – কী না পাওয়া যায় সেখানে। খবর বিবিসি বাংলার

আর ওই পণ্যসম্ভারের একটা বড় অংশই চীনের উৎপাদন।

শুধু যে খেলনা বা মোবাইল নয়, গাড়ি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লার বা পরমাণু বিদ্যুতের রিঅ্যাক্টর – সব ক্ষেত্রেই চীনের পণ্য।

কিন্তু ভারতে চীনা পণ্য বয়কট করার দাবী জোরালোভাবে উঠছে।

করোনাভাইরাস চীন থেকেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে, এরকম একটা ধারণা তৈরি হওয়ার পর থেকেই নানা দেশের সঙ্গেই ভারতেও জোরালো হচ্ছিল চীনা পণ্য বয়কটের আওয়াজ।

আর গত মাসে লাদাখে সীমান্ত সংঘাত এবং চীনা ফৌজের ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর থেকে তা আরও গতি পেয়েছে।

কিন্তু সোমবার রাতে চীনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হওয়ার পর কলকাতাসহ ভারতের নানা শহরেই চলছে চীন-বিরোধী বিক্ষোভ আর সঙ্গে চীনা পণ্য বয়কটের দাবী।

ভারতের বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারাও এবার চীনা পণ্য বিক্রি বন্ধ করবে।

খুচরো পণ্যের ব্যবসা করেন, এমন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ব্যাপার মন্ডলের সাধারণ সম্পাদক ভিপিন বনসাল বলছিলেন,ভারতীয় সৈনিকদের মৃত্যুতে সারা দেশেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে। আমরাও ভারতেরই নাগরিক। তাই এই পরিস্থিতিতে আমরা কেউই চীন থেকে পণ্য আমদানি করে সেদেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করতে রাজী নই।

তিনি জানাচ্ছিলেন, চীন থেকে বছরে ৭৪০০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করে খুচরো ব্যবসায়ীরা।

ভিপিন বনসাল বলেন, ভারতীয়দের কাছ থেকে এই অর্থ নিয়েই চীন আমাদের সৈন্যদের মারছে সীমান্তে, আমাদের জমি দখল করে নিচ্ছে। এটা হতে দেওয়া যায় না। আপাতত চীনা পণ্য যা মজুত আছে, সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হবে – কিন্তু নতুন করে কোনও অর্ডার দেওয়া হবে না। এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের খুচরো ব্যবসায়ীদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেডার্স এসোসিয়েশনও চীনা পণ্য না বিক্রি করার একই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে তারা বলছেন, অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি এখনই বন্ধ করা হয়ত যাবে না।

সংগঠনটির সভাপতি সুশীল পোদ্দার জানালেন, যেগুলো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, আর যেগুলো দেশেই তৈরী করা যাবে, সেগুলো ছাড়া বাকি কোনও চীনা পণ্য বিক্রি করব না আমরা। সবকিছু তো আমরা একবারে বন্ধ করতে পারব না। তবে দেশে তৈরী হতে পারে, এমন জিনিষ আমরা চীন থেকে আর আনব না। আর শুধু আমরা বিক্রি বন্ধ করলে তো হবে না। ইকমার্স যেসব সাইট আছে, তাদেরও বন্ধ করতে হবে। আমরা এই অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছি।

এই খুচরো ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, প্রসাধন সামগ্রী, মোবাইল, খেলনা, টি ভি, ফ্রিজ – এধরনের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করেন।

কিন্তু ভারতীয় রেল আর রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিকম সংস্থা বিএসএনএলও বলছে চীনের কয়েকটি নির্দিষ্ট সংস্থার বরাত তারা হয় বাতিল করছে, বা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে।

কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বয়লার থেকে শুরু করে ওষুধ শিল্পের অধিকাংশ কাঁচা মাল, গাড়ি শিল্প, বা অন্যান্য ভারী শিল্পও চীন নির্ভর হয়ে পড়েছে বহুলাংশে আর সেই অবস্থার পরিবর্তন করতে চাওয়া বাস্তবিক অসম্ভব। বলছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ।

তার কথায়, চীনা পণ্য মানে কি চীনা খাবারের রেস্তোরাঁ যে বললাম আর বন্ধ হয়ে গেল? না কি শুধু খেলনা আর মোবাইল! আমাদের দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গাড়ি শিল্প, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, সার, কৃষিযন্ত্র – সবক্ষেত্রেই তো চীনা পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা অনেকদিন ধরেই বলার চেষ্টা করছিলাম যে নানা ক্ষেত্রে, যেমন ওষুধ শিল্পে, একটা দেশের ওপরে বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়া অনুচিত।

২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত একটা কমিটি তার রিপোর্ট দিয়েছিল। সরকার তো কিছুই করে নি! আগে দেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলুক সরকার, দেশীয় শিল্পকে প্রোৎসাহন দিন – যেটা চীন করে থাকে। তারপরে চীন থেকে আমদানি বন্ধ করার কথা বলবেন, না হলে বিষয়টা হাস্যকর হয়ে যাবে।

চীনা পণ্য বয়কট করে দেশীয় ভাবেই যাতে পণ্য উৎপাদন করা যায়, সেই ব্যবস্থা করার কথা বলা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতকে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার কথা বলছেন বারে বারে।

কিন্তু চীন থেকে যা যা আমদানি করা হয় ভারতে সেইসব বন্ধ করে দিয়ে দেশীয়ভাবে সবকিছু উৎপাদন করা অসম্ভব বলে মন্তব্য করছিলেন অর্থনৈতিক বিষয়ের বিশ্লেষক কুনাল বোস।

তিনি বলেন, যে ক্যাম্পেইনটা হচ্ছে, সেটাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। বললেই যে চীন থেকে আমরা নিজেদের পৃথক করে নিতে পারব, সেটা বোধহয় সম্ভব হবে না। আর চীন যে উন্নত মানের জিনিষ, যে দামে দেয়, তা অন্য অনেক দেশই দিতে পারে না।

তার আরও ব্যাখ্যা, চীনা পণ্য বয়কট করতে হলে চীনের যে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে গাড়ি থেকে শুরু করে নানা শিল্পে, সেগুলোর কী হবে? ওগুলো বন্ধ করতে গেলে তো ওইসব শিল্প বা পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তো কাজ হারাবেন ভারতীয়রাই।

যেসব ব্যবসায়ী চীনা পণ্য বিক্রি না করার কথা বলছেন, তারাও এই আশা করছেন না যে সব চীনা পণ্য আমদানি এখনই বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। আর খুব দ্রুত চীনের মত কম দামে আর উন্নত মানের পণ্য ভারতেই তৈরি করাও যাবে না।

সেই প্রচেষ্টা যদি করতে হয়, তাহলে সরকারকে অতি সক্রিয় হয়ে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

রাওয়ালপিন্ডিতে বৈঠক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা

ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০২৫: পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফাইজুর…

August 24, 2025

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের…

April 24, 2025

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড"…

February 26, 2025

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের…

December 29, 2024

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024
Sponsored