বিভাগ মত-দ্বিমত

ভারত ও চিনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণ কি?

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

ম্যাকমেহন লাইনঃ ভারত ও চিনের সীমান্তকে এই নামে ডাকা হয়। এটি যখন টানা হয়েছিল তখন চিন ক্ষমতাহীন এবং ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গ। চিনের বক্তব্য, ওই সময় জবরদস্তি করে এমন বেশ কিছু এলাকা ভারতের অংশ বলে চাপিয়ে দেওয়া হয় যা আদতে চিনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শাসনাধীন ছিল। চিনে কমিউনিস্ট পার্টির শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই ওই দেশ চিনের ঐতিহাসিক সাম্রাজ্যের সীমারেখা ফিরে পেতে সচেষ্ট হয়। কিন্তু স্বাধীন ভারত এইভাবে সীমানা পুনর্নিধারণে আগ্রহী ছিল না। ফলে সম্পর্কটা খারাপ হয়।

তিব্বতঃ চিন বরাবর দাবি করেছে যে এই অঞ্চল বা রাজ্য চিনের অংশ। কিন্তু ভারত তিব্বতের স্বায়ত্তশাসনের সমর্থক ছিল। এই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে চিন তিব্বতে সেনা আক্রমণ চালায়। পশ্চিমের দেশগুলোর পাশাপাশি ভারতও এই একতরফা আক্রমণের বিরোধিতা করে। এতে চিন স্বাভাবিকভাবেই ভারতের ওপর রুষ্ট হয়। তারপর তিব্বতি জনসাধারণের ধর্মগুরু দলাই লামা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় পেলে চিন একে সরাসরি তার সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ বলে ধরে নেয়।

পাকিস্তানঃ ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি চিন-বিরোধী ফ্রন্ট খোলার প্রস্তাব অবধি দিয়ে রেখেছিলেন! কিন্তু পরে, যখন ১৯৪৮-এর আগ্রাসনের পর পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীর থেকে আকসাই চিন এলাকা চিন-কে হস্তান্তরিত করা হয়, তখন চিন ও পাকিস্তানের সীমান্ত নিয়ে বিবাদ, যা ম্যাকমেহন লাইনেরই উত্তরাধিকার ছিল, মিটে যায়। এর পর ১৯৬৫-র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় থেকেই চিন স্পষ্টভাবে “শত্রুর শত্রু আমার মিত্র” নীতি মেনে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলায়।

ঈর্ষাঃ গণপ্রজাতন্ত্রী ভারতের স্বাধীনতা আর কমিউনিস্ট চিনের উত্থান মোটামুটি একই সময়ে হয়। কিন্তু জোট-নিরপেক্ষ দেশগুলোর মধ্যে ভারতের যে সম্মানজনক অবস্থান ছিল, সেটা চিন পায়নি। এখনও পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্র চিনকে তার আর্থিক ক্ষমতার জন্য ভয় পায়। ভারত সেই তুলনায় দুর্বল হলেও তার স্বীকৃতি বরাবর অনেক বেশি ছিল, যার জন্য দায়ী তার গণতান্ত্রিক পরিবেশ, হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয়তা, ইত্যাদি। এই ব্যাপারটা হজম করা চিনের পক্ষে সহজ ছিল না।

পরমাণু শক্তিঃ আধুনিক পৃথিবীতে প্রথাগত সেনাবাহিনীর দাপট কমিয়ে একটা সমতা এনে দেয় এই জিনিস। যতদিন ভারতের কাছে এই হাতিয়ার ছিল না, ততদিন অবধি চিনের পক্ষে ১৯৬২-র যুদ্ধের উদাহরণ দিয়ে ভারতের ওপর সামরিক চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব ছিল। কিন্তু হিমালয়ের দু’দিক থেকেই যদি পরমাণু বোমা বহনকারী মিসাইল একে অপরের দিকে ধেয়ে যায়, তাহলে দু’টি দেশই ধ্বংস হবে। ফলে সরাসরি মিলিটারি পশ্চারিং করা অসম্ভব হয়, এবং দুই দেশই একে অপরকে চাপে ফেলার জন্য উপরোক্ত “শত্রুর শত্রু আমার মিত্র” নীতি মেনে যতভাবে পারা যায়, ততভাবে অন্য দেশের মাধ্যমে এই চাপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালু রাখে।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

রাওয়ালপিন্ডিতে বৈঠক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা

ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০২৫: পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফাইজুর…

August 24, 2025

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের…

April 24, 2025

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড"…

February 26, 2025

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের…

December 29, 2024

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024
Sponsored