সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে আসাদ সরকারকে সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে রাশিয়া সরাসরি এ যুদ্ধে নিজেকে নজিরবিহীনভাবে সম্পৃক্ত করে ফেলে। আর যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়া তাদের নিজস্ব উৎপাদিত উচ্চ প্রযুক্তির প্রায় দুই শতাধিক ধরণের সম্পূর্ণ নতুন অস্ত্রের ব্যাপক পরীক্ষা চালিয়েছে এবং তার মধ্যে ৮৯% পর্যন্ত নতুন প্রযুক্তির যুদ্ধাস্ত্রের কার্যকারিতা ও গুনগত মান বেশ সন্তোষজনক এবং উচ্চ মানের বলে দবি করেছে রাশিয়া।
তাছাড়া রাশিয়ার তার সামরিক বহরে থাকা পুরনো আমলের কৌশলগত দূর পাল্লার বোমারু বিমান ব্যাবহার করে রাশিয়ায় অবস্থিত গোপন বিমান ঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে সরাসরি সিরিয়ায় বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক বোমা বর্ষণ করে আবার নিজ ঘাঁটিতে ফিরে গেছে এবং ভুমধ্যসাগরে থাকা তাদের এট্যাক সাবমেরিন থেকে ১৫০০ কিলোমিটারের ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র দ্বারা অসংখ্য বার একাধিক আইএস এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠির আস্তানায় হামলা পরিচালনা করেছে। তবে রাশিয়ার পুতিন প্রশাসন তাদের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ সিরিয়ায় মোতায়েন করে রাখলেও তা কোন এক অদৃশ্য কারণে আজ অবধি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকছে। আবার ঠিক একই ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ও ইরাকে আইএস এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠি দমনে তাদের সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির দের শতাধিকের উপর উচ্চ ক্ষমতার অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জানের প্রযুক্তিগত মান ও সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে এর কার্যকারিতার পরীক্ষা সুসম্পন্ন করেছে।
এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু তাদের নতুন অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে কোন না কোন ভাবেই মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে বারবার ব্যবহার করে যাচ্ছে এবং দীর্ঘ মেয়াদে এসব দেশে অবস্থান করে নিজের মতো করে প্রভাব বিস্তার এবং আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে ক্রেতা দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছে বলে মনে হয় না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার এ ধরণের অস্ত্রের নির্বিচারে ব্যাবহার কার্যত তাদের নিজস্ব অস্ত্রের সক্ষমতা যাচাইয়ের এক রকম কৌশলগত পরীক্ষা ও ভবিষ্যত যুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া, রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার আসাদ সরকারকে সামরিক সহায়তার আড়ালে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের নিজস্ব কৌশলগত প্রভাব বিস্তার ও বিশ্ববাসির কাছে প্রথম শ্রেণির পরাশক্তি হিসেবে তাদের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরতে চায়। পাশাপাশি তাদের অতি লাভজনক অস্ত্র ব্যবসা যে যার নিজের মতো করে নিজ দখলে নিতে অতি উৎসাহী বলেই প্রতিয়মান হয়। আর এহেন একেবারে ঘৃন অপকর্মে ইউরোপীয় বেশ কিছু দেশও কিন্তু মোটেও পিছিয়ে নেই।
আসলে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ও অস্থিতিশীল ভয়ঙ্কর পরিবেশে সৃষ্টির আড়ালে যে কোন মূল্যে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের কৌশলগত প্রভাব বিস্তার এবং পাশাপাশি অতি লাভজনক অস্ত্র রপ্তানি ও বানিজ্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর তা কিন্তু এক রকম নিশ্চিত। আর এক্ষেত্রে আমি মনে করি রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হীন ও কলুসিত উদ্দেশ্য খুবই সফল হয়েছে বলা চলে। আবার বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলতে ব্যাপক হারে অস্ত্র রপ্তানি করে যাচ্ছে ও নতুন নতুন অস্ত্র বাজার সৃষ্টিতে নিজেদের মধ্যে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বানিজ্য ও রপ্তানিতে এখনো পর্যন্ত অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আসলে ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোটভুক্ত ইউরোপীয় দেশ যেমন ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালী, জার্মান ও স্পেনের মতো দেশগুলো কার্যত মধ্যপ্রাচ্যের বাদশা আমীর শাসিত দেশগুলোতে আনুমানিক ২০০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমানের ক্ষুদ্র অস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ট্যাংক, যুদ্ধ জাহাজ, সাবমেরিন, ড্রোন, হেলকপ্টার এবং অন্যান্য সামরিক সাজ সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে এবং ঠিক একই সময়ে রাশিয়া অনেকটা কম হলেও একাই ২৮ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমান অস্ত্র বানিজ্য করতে সক্ষম হয়েছে।
আর সবচেয়ে হতাশার বিষয়, টানা কয়েক বছর ধরে আন্তজার্তিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম অত্যন্ত নিম্নমুখী থাকা এবং বৈশ্বিক অর্থনোইতিক মহামন্দা চলা সত্ত্বেও, মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ আরব দেশগুলো তাদের জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে হলেও অস্ত্র আমদানি ও সংগ্রহের পিছনে নির্বিচারে শত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র সৌদি আরব একাই ২০১১-২০১৯ সালে তাদের অস্ত্র আমদানি ৩০০% বৃদ্ধি করেছে, আরেক ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কাতার ২৫০%, আরব আমিরাত ১৪৮% এবং অন্যান্য দেশগুলো ঠিক একই পথ অনুসরণ করে যাচ্ছে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে অপেক্ষাকৃত দূর্বল অর্থনীতির দেশ মিশরের সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয়ের বিষয়টি বিশ্বকে একেবারেই হতবাক করে দেয়। আবার মধ্যপ্রাচ্যের একেবারে ক্ষুদ্র দেশ কাতার মাত্র তিন বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধ শতাধিক বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে এবং তাদের যুদ্ধাস্ত্র ক্রয়ের তালিকা বা ডিফেন্স ইকিউপমেন্ট মার্কেটিং লিস্ট দেখলে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না।
অন্যদিকে ২০১৭ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় এসেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশ সফরের প্রথম দেশ হিসেবে বেছে নেয় সৌদি আরবকে। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম সফরের প্রক্কালে বিশাল আকারের ১১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করে ফেলে সৌদি আরব। তাছাড়া আগামী ১০ বছরে আরো ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জামাদি সংগ্রহের বিশেষ সুযোগ পাবে প্রিন্স ক্রাউন মোহাম্মদ বিন সালমান শাসিত সৌদি সরকার। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যন্ত তাদের সামরিক অস্ত্র উৎপাদনের মোট প্রায় ২০% অত্যন্ত চড়া মূল্যে রপ্তানি বা সরবরাহ করেছে সৌদি আরবের কাছে। যার আনুমানিক মূল্য হতে পারে ২৩০ বিলিয়ন ডলারের অধিক। তাছাড়া সৌদি আরব সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সংগ্রহের জন্য খুব সম্ভবত ইতোমধ্যেই অত্যন্ত গোপনেই পুতিন সরকারের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তিতে উপনীত হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হয়।
অস্ত্র আমদানির তালিকায় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব। বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধ পরিচালনায় সৌদি নির্বিচের সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই প্রতিয়মান হয়। বাদশা শাসিত সৌদি সরকার মুলত ২০০৮-১৯ সাল পর্যন্ত একাই দুই শত বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের অস্ত্র আমদানি করেছে এবং ঠিক একই সময়ে আরও নুন্যতম ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে সামরিক সাজ সরঞ্জামের রিপিয়ার, ম্যান্টন্যান্স, সার্ভিসিং এবং অপারেটিং কস্ট হিসেবে। আর মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোকে ৮০% অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী ইউরোপীয়ান দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ইত্যাদি।
তবে অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সারা বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তা বছরের পর বছর লাগামহীনভাবে চলমান রাখা এবং সারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধভাব বা নিজস্ব প্রভাব বজায় রাখাতে বিশ্বের অন্যতম প্রধান সামরিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশগুলো অতি উৎসাহী বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বৈশ্বিক অস্ত্র বাণিজ্যের মূল সুবিধাভোগী কিন্তু এসব অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশগুলো। আর বিশ্বব্যাপী সামরিক উত্তেজনা বা যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ না করলে বিশ্বের ধনী আরব দেশসহ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো ব্যাপকভাবে অস্ত্র আমদানি করবে না বা অপ্রয়োজনে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বিপুল পরিমাণ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অস্ত্র কিনতে উৎসাহিত হবার কোন সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে পারে না।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সিরিয়া ও ইরাকে আনুমানিক পাঁচ লক্ষ নিরীহ ও সাধারণ মানুষ মারা গেছে এবং আরও ৮০ লক্ষ সাধারণ মানুষ গৃহহীন হয়ে আন্যদেশে মানবেতর জীবণ যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর যাদের অধিকাংশই কিন্তু নারী, প্রবীন ও শিশু। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত বিশ্বের দুই বৃহৎ পরাশক্তি তাদের নিজেদের মতো করে মধ্যপ্রাচ্যে কেউ আসাদ দমন আবার কেউ বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠি দমনে ব্যাপক হামলা ও গোটা দেশ জুড়ে ধ্বংসলীলা চালালেও যুদ্ধ বন্ধ বা চুড়ান্ত শান্তির কোন চিহ্ন বা আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে না।
আর এসব পরিকল্পিত এবং অনেকটা সাজানো যুদ্ধে হাজার হাজার লোক নিহত কিম্বা নির্যাতিত বা গৃহহীন হলেও আমার মনে হয় বিশ্বের দুই বৃহৎ সামরিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার তেমন কিছু যায় আসে না বা তারা এতে বিন্দুমাত্র দুঃখিত এবং অনুশচিত বলে মনে হয় না। তারা কার্যত মধ্যপ্রাচ্যে যে কোন মূল্যে নিজস্ব কৌশলগত প্রভাব বিস্তার ও অতি লাভজনক অস্ত্র বানিজ্য ও রপ্তানির বাজার দখল করতে এক রকম ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। আবার হতাশার সাথে লক্ষ্য করা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের নতুন অস্ত্রের পরীক্ষা ও সক্ষমতা যাচাইয়ের উত্তম ক্ষেত্র হিসেবে তিন দশক ধরে কৌশলে কোন না কোন ভাবে বারবার মুসলিম দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করে যাচ্ছে, যা নিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার কেউ আছে বলে মনে হয় না।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারি শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলেদেশ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment