বিভাগ মত-দ্বিমত

মুজিব বর্ষের অঙ্গীকারঃ মুজিব আদর্শে হয়ে উঠুন বলীয়ান: সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored


রাজনীতিবিদরা জাতির বাপ মা। একটি পরিবারে সন্তান সন্ততির উপর যেমন মা বাবার প্রভাব পড়ে তেমনি একটি দেশ বা জাতির উপর রাজনীতিবিদদের প্রভাব পড়ে। মা বাবা ভালো হলে ছেলে মেয়েরাও সাধারণত ভালো হয়। কথায় আছে, “বাপ ভালো তো ছেলে ভালোমা ভালো তো মেয়ে”তাই রাজনীতিবিদরা ভালো হলে জনগন ভালো হবে, জনগন ভালো হলে একটি দেশ বা জাতি আদর্শ হবে, বেগবান হবে, বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সুতরাং একটি দেশ বা জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে রাজনীতিবিদদের সঠিক নেতৃত্ব ও ভূমিকার বিকল্প নেই।


তবে রাজনীতিবিদ বলতে আমি পাপিয়া বা সম্রাট মার্কা রাজনীতিকের কথা বলছিনা। রাজনীতিবিদ তো তারাই যাদের নাম শুনলেই শ্রদ্ধায় মন ভরে ওঠে। এ ক্ষেত্রে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো।


ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলার আদিবাসীদেরকে বলা হতো অস্ট্রিক, অস্ট্রালয়েড কিংবা ডেড্ডিভ। এই ডেড্ডিডরাই নাকি বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য তথা বাঙ্গালি সংস্কৃতির ধারক-বাহক। এরপর এ অঞ্চলে আসে নানান জাতির নানান জন। বাংলার উপর ছিলো সবারই শ্যান দৃষ্টি। আর্য থেকে শুরু করে সেন, পাল, মোগল, সুলতান তারপর ব্রিটিশ , পাকি এমন কেউ বাকি নেই যারা বাংলাকে লুটেপুটে খায়নি। দুঃখিনী বাংলা মা কখনো বাঙ্গালির হয়ে উঠতে পারেনি। তার দুর্ভাগা সন্তানরা কখনো মায়ের কোলে মাথা রেখে স্বাধীন ভাবে শ্বাস ফেলতে পারেনি।


এভাবেই একের পর এক বিদেশী শাসনের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয়েছে বাংলার মানুষকে। অবশেষে ১৭৫৭ সালে পলাশীর পরাজয়ের মাধ্যমে মুসলিম সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়। প্রায় ২০০ বছর বাংলাকে ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহার করে। তবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এ উপমহাদেশে সর্ব প্রথম আন্দোলনের ডাক বাংগালিরাই দেয়। কংগ্রেস, মুসলিম লীগ বাঙ্গালিদেরই সৃষ্টি। আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশরা যখন মুখ থুবড়ে পড়ছিলো তখন শেষ মূহুর্তে ওরা কূট কৌশলের মাধ্যমে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা ও দ্বিধা বিভক্তি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।


এমনি এক চরম মূহুর্তে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির আবির্ভাব ঘটে এ বাংলার মাটিতে। কে জানতো এই ভোলাবালা শিশুই একদিন বাঙ্গালির আশা আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে।হ্যাঁ তিনিই। বাল্যকাল থেকেই ছিলেন ডানপিটে স্বভাবের দুরন্ত প্রকৃতির। কিশোর বয়সেই তিনি হয়ে ওঠেন বিপ্লবী বাঙ্গালির সূর্য সন্তান। পরের ইতিহাস কারো অজানা নয়। পাকিস্তানের উপনিবেশ থেকে বাংলাকে মুক্ত করে এনে স্বাধীন স্বদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার যে ত্যাগ তিতিক্ষা, অক্লান্ত পরিশ্রম, দূরদর্শী নেতৃত্ব তা বিশ্বে বিরল। তার নেতৃত্ব ও নামের উপর ভিত্তি করে ১৯৭১ সালে সংগঠিত হয় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের। সে যুদ্ধে পাকিদের হঠিয়ে ছিনিয়ে আনা হয় স্বাধীনতার লাল সূর্য। হাজার বছরের শৃংখলিত বাংলা হলো মুক্ত। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের সংযুক্তি ঘটে।মাথা উচু করে হাঁটতে আর অসুবিধে নেই বাঙ্গালির। আজ তাদের দেশে তারাই শাসক, রাজা, হর্তাকর্তা, নেতা। এ হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রামশীল জীবনের অসংখ্য ত্যাগ তিতিক্ষার সফল পরিনতি।


বঙ্গবন্ধু যে কতো বড়ো মাপের নেতা ছিলেন তা প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর একটি সাক্ষাতকার থেকে আচ করা যায়। ঐ সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় জোট নিরপেক্ষ (ন্যাম) সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনে কিউবার ফিদেল কাস্ট্রো ছুটে এসে বঙ্গবন্ধুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, আপনাকে দেখেছি। আমার আর হিমালয় দেখার দরকার নেই’। সৌদি আরবের কিং ফয়সাল যে কিনা একাত্তরে পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল গণহত্যার জন্য। তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে এসে বারবার বলেন, ‘আমি লজ্জ্বিত, আমি লজ্জ্বিত। এ থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় বঙ্গবন্ধু কেবল এ উপমহাদেশীয় নেতাই ছিলেননা বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশাল বড়ো মাপের নেতা।
এ মহান নেতার দল আজ ক্ষমতায়।

তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি কন্যা শেখ হাসিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বাবার মতো তিনিও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাবা পেয়েছিলেন চুরের খনি, তিনি পেয়েছেন দুর্নীতিবাজ, চাটার দল ও মোসাহেবের খনি। তাই যেখানেই তাকানো যায় সেখানেই দেখা যায় সম্রাট পাপিয়াদের রাজত্ব। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে এক দল অতি উৎসাহী চাটার দলের বেশ বাড়াবাড়িও আজকাল পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বাড়াবাড়িকে ভালো ভাবে নেননি এবং শক্ত ভাবে তা দমন করার চেষ্টা করেছেন। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বকে আতংকিত করে তোলা করোনা ভাইরাসের ছোবলের কথা বিবেচনায় এনে তিনি মুজিব বর্ষ সীমিত আকারে পালনের যে মানবিক ঘোষণা দিয়েছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার।


যে কথাটি বলে শেষ করতে চাই তা হলো, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শুধু অতি উৎসাহী হয়ে উঠা নয়, চাটামি নয় কিংবা তাকে দলীয় সীমাবদ্ধতার মধ্যে রেখে মাথায় নিয়ে নাচানাচি নয় বরং তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে তার মতো ত্যাগী হতে হবে। হৃদয়ে লালন করতে হবে তাঁর আদর্শকে। মহান নেতার জন্ম শতবার্ষিকীতে এই হোক প্রদীপ্ত অঙ্গীকার।

লেখক- আয়ারল্যান্ড প্রবাসী প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored