শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট চলাকালীন অবস্থায় এবং বিশেষ করে শিশুর বয়ঃসন্ধী কালীন সময়ে তাকে আবাসিক বা হোস্টেল ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অর্জন করতে পাঠানো শিশুর মানসিক ও শারিরীক বিকাশের জন্য চরম হুমকী এবং উচ্চ মাত্রায় বিপদজনকও বটে। আবাসিক এবং হোস্টেল নির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণত কোমলমতি শিশুরা অপেক্ষাকৃত সিনিয়র শিক্ষার্থী এবং অন্যদের দ্বারা শারিরীক বা মানসিকভাবে নির্যাতিত বা লাঞ্ছিত হওয়ার সমুহ সম্ভবনা থেকেই যায়। আবার এ জাতীয় আধুনিক ও মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতি ও ধরণ অনেক উন্নত, প্রযুক্তি নির্ভর, শিশু বান্ধব এবং নিরাপদ বলে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হলেও বাস্তবে দেশের কিছু সংখ্যক মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যাতিত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুর বয়স যোগ্যতা, এবং সামর্থ্য বিবেচনায় না এনেই মাত্রাতিরিক্ত বা তুলনামুলক কঠিন শিক্ষা কারিকুলাম অনুসরণ, কড়া অনুশাসন এবং জটিল নিয়মের মাধম্যে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করা হয়। বিশেষ করে কথিত এই আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ অল্প বয়স্ক শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
যেখানে সারা দেশব্যাপী সমান ও মান সম্মত প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার স্বার্থে আমাদের সম্মানিত সরকার এবং সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয়ে বিভিন্ন স্তরে শিশুর বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা কারিকুলাম চালু করেছেন। আবার সরকারিভাবে সারা দেশব্যাপী তা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব স্তরেই অনুসরণ এবং বাস্তবায়ন আবশ্যিকভাবে বাধ্যতামুলক করা হলেও বাস্তবে অনেক আবাসিক/ অনাবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, ক্যাডেট মাদ্রাসা, কেজি একাডেমি কিম্বা ব্যক্তি চালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার প্রদত্ত এই শিক্ষা কারিকুলাম বা গাইড লাইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করেই নিজেদের ইচ্ছেমতো শিক্ষা কারিকুলম ও পদ্ধতি পরিচালনা করে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে বিশেষ করে শহর পর্যায়ের এমনকী মফস্বল এলাকার ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতি নিয়ত মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর পরীক্ষ বা প্রশ্ন ভিত্তিক ক্লাস টেস্ট বা সিটি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপক প্রবণতা শিশুর মানসি বিকাশ এবং সৃজনশীলকে মারাত্বকভাবে ব্যাহত করছে। এ রকম ত্রুটিপূর্ণ এবং অতি মাত্রায় পরীক্ষা নির্ভর পরিবেশ শিশুর মনে সার্বক্ষণিক পরীক্ষা ভীতি এবং এক রকম অজানা আতঙ্ক কাজ করে থাকে। এমনকী শিশুর ঘুমের মধ্যেও মধ্যেও পরীক্ষা বা এক্সাম টেস্ট ভীতি চরমভাবে কাজ করে। তাই এক বিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা কোন ভাবেই এই ভয়াবহ পরীক্ষা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রচলন পরিহার করতে পারছি না। যা একটি গৌরবময় বাঙালী জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক।
আসলে ইউরোপের উন্নত দেশ ফিনল্যাণ্ডে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা শতভাগ সরকারি এবং একমুখী। অর্থ্যাৎ ফিনল্যান্ডে সরকার নির্ধারিত শিক্ষা কারিকুলাম ও পদ্ধতি ব্যাতিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন কিছু শিখানোর বা ব্যবহারের আদৌ কোন সুযোগ নেই বললেই চলে। আবার যুক্তরাজ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১১ বছরের আগে কোন আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা বা টেস্ট নেওয়া হয় না এবং জাপানে আইন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোতে শিশুর ১০ বছরের আগে কোন আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা বা টেস্টে নেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।
এভাবে শিশুর বয়স এবং যোগ্যতা যথাযথভাবে নিরুপণ না করেই নিজের ইচ্ছামতো প্রশ্ন করে শিশুকে এক ভয়ঙ্কর মানসিক চাপে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। অনেক শিশু এসব অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষায় বেশ ভালো ফলাফল অর্জন করলেও মনে রাখতে হবে ৪০% পর্যন্ত এমনকী তার বেশি শিশুর জীবনেই নেমে আসতে পারে মানসিক বিপর্যয়। অনেকে শিক্ষা জীবনের পরবর্তী বিভিন্ন স্তরে বেশ ভালো ফলাফল লাভ করলেও তাদের মধ্যে চরম মাত্রায় বিষন্নতা, জেদীভাব এবং এমনকী পরিবারের সদস্যের প্রতি বিরুপ হয়ে শেষ পর্যন্ত মাদকাশক্ত কিম্বা সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত যে হয়ে পড়বে না তা কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না।
অন্যদিকে, আমাদের দেশের শিশুরা এহেন অপেক্ষাকৃত কঠিন শিক্ষা কারিকুলাম, প্রতি নিয়ত পরীক্ষা বা টেস্টের চাপ, আবদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এসব পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে এক রকম একগুয়েমী এবং জেদী আচরণ প্রবলভাবে লক্ষ্যনীয়। তাছাড়া মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর এহেন পরিবেশে বেড়ে ওঠা ৯০% শিশু ভবিষ্যতে সম্মানজনক এবং বেশ ভালো মানের ফলাফল নিয়ে নিজ পরিবারে ফিরে আসলেও তাদের মধ্যে নুন্যতম ৪০% পর্যন্ত শিশুরা দীর্ঘ কালীন সময়ে নিজেকে একাকিত্ব বোধ করে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে কিম্বা বাস্তব সমাজের সাথে নিজেকে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে না। আবার মাত্রাতিরিক্ত কঠিন শিক্ষা কারিকুলমান নির্ভর এহেন কঠোর পরিবেশে বেড়ে ওঠা এবং হতাশায় ভোগা শিশুর ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ভয়াবহ মাদকাসক্ত কিম্বা সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার হার ও প্রবণরা বিপদজনক পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছে। যা আমাদের দেশ এবং সর্বোপরি শিশুর নিজ পরিবারের জন্য মোটেও কাম্য হতে পারে না। তবে এটা ঠিক সকল শিশুর ক্ষেত্রে যে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে তা কিন্তু নয়।
শুধু ভালো ফলাফলের আশায় অল্প বয়সেই শিশুকে অহেতুক আবাসিক বিদ্যালয়ে প্রেরণ করার অর্থই হচ্ছে শিশুকে তার পিতা মাতার স্নেহ এবং মায়া-মমতা থেকে বঞ্চিত করা ও শিশুর আনন্দঘন শৈশবকে এক কথায় হত্যা করা। আবার ছেলে কিম্বা মেয়ে শিশু হোক উভয়ের ক্ষেত্রেই দীর্ঘ কালীন সময়ে আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালীন সময়ে অন্যের দ্বারা ভয়াবহ যৌন নির্যাতন এবং হয়রানি যে হবে না তা কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যাবে বা। তাই সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা এই অতি মাত্রায় স্পর্শকাতর এবং জটিল ইস্যুটিকে কোন ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না। বিশেষ করে বিগত এক দশকে আমাদের দেশের অপেক্ষাকৃত উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিমুলক অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা এবং এমনকি মানসিক হতাশায় শিশুর অত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক এবং ভয়াবহ চিত্র মিডিয়ার সামনে বার বার উঠে আসলেও এ সমস্যা সমাধানে আমরা কার্যত উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পেরেছি বলে মনে হয় না।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment