কোয়ারেন্টিন কী-কিভাবে থাকবেন- করণীয়- বর্জনীয়ঃমোহাম্মদ হাসান
কথাটা এসেছে “কোয়ারান্টাগাইরন” থেকে, যার অর্থ ফরটি ডে (৪০ দিন)। প্লেগের সময় জাহাজের মাল খালাস করার আগে ৪০ দিন তীরে ভিড়ে থাকতে হতো। সম্প্রতি চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের কারণে কোয়ারেন্টিনের আগে কুষ্ঠ রোগ, পীতজ্বর বা ইয়েলো ফিভার, কলেরার মতো রোগের বিস্তার ঠেকানোর জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ের ইবোলাও এর একটা উদাহরণ।
কোয়ারেন্টিন মানে সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যক্তির চলাফেরাকে সীমাবদ্ধ করা। কোয়ারেন্টিন তাঁদের জন্যই প্রযোজ্য, যাঁরা রোগে আক্রান্ত হননি কিন্তু রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, রোগের প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকায় থেকেছেন, অর্থাৎ যাঁরা রোগ ছড়াতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
কোয়ারেন্টিনঃকরোনা ভাইরাসের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পরপরই তার উপসর্গ দেখা দেয় না। তাই করোনা আক্রান্ত দেশ ঘুরে আসার পর বা আক্রান্ত রোগী সংস্পর্শে আসার পর হতে পারে সংক্রমণ। আসলেই কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত কি-না তা পরিষ্কার হতেই সময় লাগে সপ্তাহ খানেক। আর এজন্যই রাখা হয় কোয়ারেন্টিনে। অন্য রোগীদের কথা ভেবে এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্য হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয় না। এখানেও সময়সীমা ১৪ দিন। এসময় বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়, রোগীর সঙ্গে কম যোগাযোগ করতে বলা হয়। মেনে চলতে হয় স্বাস্থ্যবিধি।
হোম কোয়ারেন্টিনঃকোনো ব্যক্তি যখন নিজের বাড়িতেই কোয়ারেন্টিনের সব নিয়ম মেনে, বাইরের লোকজনের যোগাযোগ বন্ধ রাখেন সেটিই হোম কোয়ারেন্টিন। সাধারণত, সম্প্রতি আক্রান্ত দেশ থেকে ঘুরে এলে রোগীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এর মেয়াদও ১৪ দিন। এটা মূলত করা হয় শরীরে কভিড-১৯ রোগ বাসা বেঁধেছে কি-না তা জানার জন্য।
এসময়ের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে এবং সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
যারা বিদেশ থেকে আসছেন, তাদের “হোম কোয়ারেন্টিনে” থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তা না মানায় অনেককে জরিমানাও করা হচ্ছে। কিন্তু হোম কোয়ারেন্টিনে কীভাবে থাকতে হয়?
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার পর উপসর্গ দেখা দিতে পারে ১৪ দিনের মধ্যে। প্রথমে জ্বর, কাশি, হাঁচি, গলাব্যথা এবং পরে শ্বাসকষ্টের মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে আক্রান্ত হলে।
যারা বিদেশ থেকে আসছেন, তাদের কেউ সংক্রমিত হয়ে থাকলে এখনই কোনো উপসর্গ দেখা নাও যেতে পারে। কিন্তু কয়েকদিন পর লক্ষ্মণগুলো যখন স্পষ্ট হতে শুরু করবে, ততদিনে তার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যসহ বহু মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি হবে।
এই ঝুঁকি এড়াতে চিকিৎসকরা তাকে আলাদা করে রেখে পর্যবেক্ষণের কথা বলছেন, এটাই কোয়ারেন্টিনে।
বিদেশফেরত অনেককে তাদের বাড়িতে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে, যাকে বলা হচ্ছে হোম কোয়ারেন্টিন। আর যাদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় আশকোনা হজক্যাম্পে বা অন্য কোথাও কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে, সেটাকে বলা হচ্ছে “প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন” ।
হোম কোয়ারেন্টিনে কীভাবে থাকতে হবে, সে বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন ।
কোয়ারেন্টিনের প্রথম ও অত্যাবর্শকীয় শর্ত হচ্ছে- হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেওয়া ছাড়া কোনোভাবে বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। বাড়ির বাইরে কাজে, স্কুল, কলেজ অথবা জনসমাগমে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আইডিসিআর বলছেন, চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে একেক জনের কোয়ারেন্টিনের সময় একেকরকম হতে পারে। তবে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আপাতত ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।
ঘরে থাকতে হবে যেভাবেঃ
★আলো বাতাসের সুব্যবস্থা সম্পন্ন আলাদা ঘরে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদাভাবে থাকতে হবে। তা সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত এক মিটার বা ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে।
★ ঘুমানোর জন্য রাখতে হবে আলাদা বিছানা
★ যদি সম্ভব হয় তাহলে আলাদা গোসলখানা বা টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব না হলে অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমাতে হবে এবং ওেই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
★ বুকের দুধ খাওয়ান- এমন মা তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। তবে শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার এবং ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
★সঙ্গে পোষা পশু বা পাখি রাখা যাবে না।
মাস্কের ব্যবহার কীভাবেঃ
★বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার সময় কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তি মাস্ক ব্যবহার করবেন।
★অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
★ মাস্ক পরে থাকার সময় হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।
★মাস্কের সঙ্গে সর্দি, থুতু, কাশি, বমি লেগে গেছে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলতে হবে এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
★ব্যবহাহৃত মাস্ক ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলতে হবে এবং সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
বিকল্প নেই হাত ধোয়ারঃ
★ সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
★ অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না।
★ সাবান-পানি ব্যবহারের পর টিস্যু দিয়ে হাত শুকিয়ে নিতে হবে। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে বা গামছা ব্যবহার করা যাবে। সেটি ভিজে গেলে বদলে ফেলতে হবে। আর কেউ তা ব্যবহার করবেন না।
মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশিঃ
★কাশি শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু পেপার, মেডিকেল মাস্ক, কাপড়ের মাস্ক বা বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে এবং ২০ সেকেন্ডের নিয়ম মেনে হাত ধুতে হবে।
ব্যবহার্য সামগ্রীঃ
★ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করা যাবে না।
★কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তি তার ঘরেই খাবেন। তার বাসনপত্র, থালা, গ্লাস, কাপ, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যাবে না।
★এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
যা যা করতে পারেন কোয়ারেন্টিনেঃ
★ পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ফোন,মোবাইল বা ইন্টারনেটে যোগাযোগ রাখতে পারেন
★কোনো শিশুকে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হলে তার জন্য প্রযোজ্যভাবে বোঝাতে হবে। পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী দিতে হবে এবং খেলনাগুলো খেলার পরে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
★ খাওয়া, হালকা ব্যায়ামের মতো দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলতে হবে।
★বড় কোনো অসুস্থতা না থাকলে বাসায় বসে অফিসের কাজ করতে বাধা নেই।
★বইপড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখার পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনের নিয়মের সঙ্গে পরিপন্থি নয় এমন যে কোনো বিনোদনমূলক কাজে কোনো সমস্যা নেই।
যা মেনে চলবেন পরিবারের সদস্যরাঃ
★ যিনি কোয়ারেন্টিনে আছেন, তিনি যাতে নিজের ঘরেই থাকেন, তা নিশ্চিত করতে হবে পরিবারের সদস্যদের।
★বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, অ্যাজমার মত দীর্ঘমেয়াদী রোগ যাদের নেই, এমন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির পরিচর্যার দায়িত্ব নিতে পারেন। তবে তকেও নিরাপত্তার নিয়ম মানতে হবে এবং ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন, অবস্থান বদল করবেন না।
★কোয়ারেন্টিনে আছেন এমন ব্যক্তির সঙ্গে কোন অতিথিকে দেখা করতে দেওয়া যাবে না।
★কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে; খাবার তৈরির আগে ও পরে; খাবার আগে; টয়লেট ব্যবহারের পরে, গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে এবং যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হবে তখন পরিচর্যাকারীকে নিয়ম মেনে হাত ধুতে হবে।
★খালি হাতে ওই ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করা যাবে না।
★ কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু প্রভৃতি অথবা অন্য আবর্জনা ওই ঘরে ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখতে হবে। পরে সেসব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
★ঘরের মেঝে, আসবাবপত্রের উপরিভাগ, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কারের জন্য ১ লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম বা দুই টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে সেটি দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। তৈরি করা দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে।
★কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহৃত কাপড় গুঁড়া সাবান বা কাপড় কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং পরে ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলতে হবে।
★নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখতে হবে। মল-মূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকানো যাবে না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে তা খেয়াল রাখতে হবে।
তথ্য সূত্রঃ সমসাময়িক প্রাসঙ্গিক প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment