আজ কাল “ফ্রিল্যান্সিং পেশা” বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যাপক সহজলভ্যতা এবং ব্যবহারের ফলে মানুষ এইসব আধুনিক ধারার মাধ্যমের সাথে সহজেই মিশে যাচ্ছে, যা আগে অনেকের কল্পনার বাহিরেই ছিল। এই বিষয়টিতে অনেক কথা আপনি আগেও শুনেছেন হয়ত। আমার আগের দুটি ধারাবাহিক আলোচনায় যে বিষয়গুলো ছিল তা হলো- এই ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে বাংলাদেশী নারীদের অংশগ্রহণ, কেন তারা পুরুষদের তুলনায় ভালো ফ্রিল্যান্সার।আজ থাকছে কিভাবে কাজ শুরু করবেন এবং নিজেকে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কিছু কথা।
যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত ও স্বাধীন পেশা এবং এখানে একজন কোন কাজ করবে ও কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করবে তা বাছাই করার সুযোগ পায় তাই স্বাধীনচেতা নারী পুরুষ উভয়েই বেশ আগ্রহের সাথে এই পেশাকে গ্রহণ করছেন। তাছাড়া বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে ঘরের বাহিরে কাজ করা অনেক সময় নিরাপত্তার অভাব ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে বলে তাদের নিজস্ব ক্যারিয়ার তৈরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ‘ফ্রিল্যান্স’ পেশা নারীদের এসব সমস্যার হাত থেকে বের হয়ে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সাহায্য করে। ঘরে বসে বা যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় এই কাজগুলো করা যায়। এই ধরনের বিভিন্ন সুবিধার ফলে বাংলাদেশী নারীদের ফ্রিল্যান্স পেশায় আগ্রহ ও অংশগ্রহণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
কিভাবে আরম্ভ করবেন ফ্রিল্যান্সিং?
প্রথমে সহজ কাজ দিয়েই শুরু করতে পারেন অর্থাৎ আপনি যা জানেন তা দিয়েই ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজটি শুরু করতে পারেন। অনেক ধরনের কাজ আছে যেমন-লেখা লিখি, প্রোগ্রামিং, মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইনিং, ইমেজ এডিটিং, ডেভেলপমেন্টসহ আরো অনেক কিছু। আপনাকে খুঁজে নিতে হবে আপনি কি করতে চান। অর্থাৎ নিজের আগ্রহ খুঁজে বের করুন। যে কাজটি আপনি পারেন বা যে কাজে আগ্রহ আছে সেটা শিখে নিতে পারেন। শিখতে বেশি সময় লাগবে না। আর কোনো কাজ করতে করতে একদিন শিখেই যায় মানুষ। আমি নারী- এসব আমাকে দিয়ে হবে না, আমি কি পারবো প্রযুক্তিনির্ভর এসব কাজ ইত্যাদি ঠুনকো প্রশ্নগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। ভয় ও সংকোচ বাদ দিয়ে আজই কাজে নেমে পড়ুন।
মনে রাখতে হবে পুরুষ হোক বা নারী-কেউই একদিনে সফল হয়ে যায় না। ধৈর্য্য, একাগ্রতা থাকলে আপনি একদিন ঠিকই সাফল্য অর্জন করবেন। ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য কিছু টিপস থাকলো আপনাদের জন্যঃ-
আপনি যদি ফ্রিল্যান্স জগতে নতুন হয়ে থাকেন তবে আমি অনুরোধ করবো কিছু সময় দিন এই বিষয় ভালোভাবে জানতে। গুগল থেকে জেনে নিন, ঘাটাঘাটি করুন।
যারা অনেক দিন থেকে কাজ করছে তাদের প্রোফাইল দেখুন। কি কি বিষয়কে হাইলাইট করছে এবং কিভাবে তা উপস্থাপন করেছে-তাদের মতো করে নিজের প্রোফাইলকে সাজান। ইংরেজিতে একটু দক্ষতা থাকতে হবে। অন্তত মক্কেলরা (Clients) কোন কাজ করতে বলছে, কেমন কাজ চান, সেই কাজে আপনার দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে বলার মতো ইংরেজিতে জ্ঞান রাখবেন।
কাজ পাওয়ার জন্য বিড করতে থাকুন। যে কাজটি পারবেন বলে মনে হয় তাতে বিড করুন।
আপনি সব কাজ জানবেন এমন কোনো কথা নেই। কোন কাজ না জানলে হাল ছেড়ে দিবেন না, শিখে নিন।
কোনো কাজের জন্য আবেদন করার সময় তা সুন্দর এবং তথ্যপূর্ণ ভাবে করার চেষ্টা করবেন।
কাজ পাওয়ার পর মক্কেলদের বিভিন্ন প্রশ্নের সুন্দর করে উত্তর করবেন, বুঝিয়ে দিবেন। এটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে আপনার কাজে।
আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখতে হয়। যেমন- আগেই ভেবে নিন আপনি ফ্রিল্যান্সিং কাজটি ফুল টাইম করবেন নাকি পার্ট টাইম। আমার মতে প্রথমেই ফুল টাইমের জন্য কাজ করা উচিত নয়। কোনো জব থাকলে বা পড়াশোনার পাশাপাশি কাজটি চালিয়ে যেতে পারেন। যদি নিজের উন্নতিতে সন্তুষ্ট হন তাহলে ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত নিন। যেসব কাজে ভালো পেমেন্ট আছে আর পাশাপাশি আপনি আগ্রহবোধ করেন এমন কাজ খুঁজে বের করুন।
সব কৌশল অবলম্বন করার পরও দুইটি জিনিস থাকা খুবই দরকার।
১। একটি কম্পিউটার।
২। ইন্টারনেট সংযোগ।
এই দুটি জিনিস বাসায় থাকা একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য খুবই জরুরি। অনলাইনে কাজ করতে চাইলে যেমন ভালো মানের ইন্টারনেট সংযোগ থাকা আবশ্যক তেমনি ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটার থাকাও প্রয়োজন। এগুলো আপনার কাজের গতি ঠিক রাখতে ও সময় বাঁচাতে সাহায্য করবে।
কাজ শেখাঃ
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ বেশিরভাগই অনলাইনে ফ্রিতে শেখা সম্ভব। গুগলে খুঁজলেই কাজ শেখার মতো প্রচুর ওয়েবসাইট, ব্লগ পেয়ে যাবেন।
আপনারা ট্রেনিং সেন্টার গুলোতে কাজ শিখতে যান কোন সমস্যা নেই। ট্রেনিং সেন্টারের যে শিক্ষক আপনাকে কাজ শেখাবে।
আগে তাকে ভালো ভাবে চেক করুন।কাজ কিভাবে শিখাবে,কিভাবে সাপোর্ট দিবে ওইগুলো বুঝে-শুনে করবেন।।
*পরামর্শঃ
*তাবিজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কোর্স না কিনে। সেই টাকা দিয়ে বাসায় ওয়াইফাই লাইন নিন বা আপনার ব্যবহৃত সিম কার্ডের ডাটা প্যাক কিনুন।
*তার পর গুগল এবং ইউটিউব এ দুটি সোর্স ভালো ভাবে কাজে লাগান।
*ট্রেনিং সেন্টার থেকে দূরে থাকুন, নিজে শেখার চেষ্টা করুন।
*ট্রেনিং সেন্টারে যদি যেতেই হয়, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, ট্রেক রেকর্ড চেক করুন। প্রয়োজনে এই খাতে সফল কারও পরামর্শ নিন।
অল্প দিনে অনেক টাকা আয় করার কথা যারা বলে তাদের থেকে দূরে থাকুন।
আশা করি, ফ্রিল্যান্সিং এ আগ্রহী সকলের (বিশেষত নতুন ফ্রিল্যান্সার নারীদের) এই টিপস গুলো কাজে লাগবে। সাহস করে নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস রেখে কাজে নেমে পড়ুন। সফলতা আপনার অপেক্ষায়।
লেখকঃ শান্তা ইসলাম, প্রফেশনাল আইটি এক্সপার্ট,
Mail@shantaislam.com, Shantaislam.com