আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এ সময় মাসব্যাপী নানা কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি।
আজ রবিবার সকাল আটটার দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সময় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গঠিত হয় দলটি। এরপর জাতি গঠনের সোপান স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে আওয়ামী লীগ। আনুষ্ঠানিকভাবে সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি।
দীর্ঘ ৭০ বছরের পথ পরিক্রমায় দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উত্রাই পেরুতে হয়েছে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ। ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফিরতে সক্ষম হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার হাত ধরেই দলটির পুনর্জাগরণ হয়। এরপর তাঁর নেতৃত্বে প্রথমে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বর্তমানে টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এই প্রাচীন দলটি।
সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭০ বছর পূর্তিসহ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে সংগঠনের অগণিত নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত করবে। বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ, শুভ ও কল্যাণকর অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠালগ্নে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নাম থাকলেও ১৯৫৫ সালে এ দলটি ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। এর পুনঃ নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে ছেষট্টির ছয় দফা এবং উনসত্তরের গণ-আন্দোলনসহ দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি লাভ করে স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। দলটির নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।
১৯৪৭ সালে সম্পূর্ণ দুটি পৃথক ভুখণ্ড, স্বতন্ত্র ভাষা ও সংস্কৃতির অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র চার মাস ২০ দিনের মধ্যে তখনকার তরুণ য
ুব নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন ‘পাকিস্তান মুসলীম ছাত্রলীগ’। এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগে কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, প্রখ্যাত ভাষাসৈনিক টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং তরুণ যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে (কারাবন্দি) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রথম কমিটি।
আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। সেই ৬ দফা গণ-আন্দোলনের পথ বেয়েই আসে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। সত্তরের নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ ছিল তারই ধারাবাহিকতা। অবশেষে আসে সেই ঐতিহাসিক মহেন্দ্রক্ষণ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার তৎকালীন সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ২৬ মার্চ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।