সাম্প্রতিক শিরোনাম

অপরাজনীতি যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে,তখন অস্থিরতা সৃষ্টি হয়-মোহাম্মদ হাসান

দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে রাজনীতি থাকবে, রাজনৈতিক দল থাকবে, রাজনীতির চর্চা থাকবে, তার অনুশীলন থাকবে— এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক বিষয়টা অনেকটা অস্বাভাবিক হয়ে যায় তখনই, যখন রাজনৈতিক কোন্দল, দলের ভেতর দলাদলি, নেতৃত্বের কোন্দল, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দলের ভাবাদর্শবিরোধী বা চরিত্র স্খলনজনিত স্বার্থবাদী ক্রিয়াকলাপ পরিলক্ষিত হওয়ার কারণে অথবা কেবল কোনো না কোনো কারণে দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে বা দলের মধ্যকার বিশেষ কোনো ব্যক্তির দলনেতা হতে আর তর সয়না, এমতাবস্থায় দলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে কোনো কোনো দল কয়েকটি দল বা উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়। আবার দলের মধ্যে কেবল দলাদলিই নয়, মারামারি থেকে শুরু করে হানাহানি খুনাখুনি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এতে কেবল যে দলের ক্ষতি হয় তা-ই নয়, দলের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দেশের সব নাগরিকের সমঅধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মানুষের আশা পূরণের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সেদিক থেকে যদি আশা ভঙ্গের কারণ হয়, তাহলে সেটা দুঃখজনক। জনগণের স্বার্থরক্ষার মধ্য দিয়েই দেশে সুশাসনও নিশ্চিত হবে, এও অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হোক এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই নয় বাঞ্ছনীয়। গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব সর্বাগ্রে পালন করতে হবে সরকারকে। তবে এ ক্ষেত্রে যে কোনো দেশেই দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়দায়িত্বও কম নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই গণতন্ত্র সুসংহত হতে পারে।

রাজনীতিসচেতন নির্দলীয় মানুষরা কেবল যে এ ধরনের রাজনৈতিক দল বা তাদের নেতৃবৃন্দের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠে তা-ই নয়, কোন্দলীয় রাজনীতির প্রতি আস্থাই হারিয়ে ফেলে। এ ধরনের রাজনীতি ও রাজনৈতিক চর্চাকে অপরাজনীতি বলাই যায়। সাধারণত রাজনীতির ক্রিয়াকর্ম দুই ধরনের। একটা হলো সরকার দলীয় রাজনীতি, অন্যটি হলো বিরোধী দলীয় রাজনীতি। যে দল সরকারে থাকে, তখন সরকার দলীয় রাজনীতিটা হয়ে পড়ে সরকারি রাজনীতি, আর বিরোধীদলীয় রাজনীতি হয়ে যায় জনগণের রাজনীতি। এর কারণটা হলো— সরকারের ক্ষমতায় আসা দলটিও কিন্তু ক্ষমতায় আসার আগে জনগণের রাজনীতি করেই ক্ষমতায় আরোহণ করে। গণতান্ত্র্রিক দেশে এই ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়াটা হচ্ছে রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী জনগণের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে। বিধিমতো নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে থাকে।

তবে ক্ষমতায় আসা সরকারি দল ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনকালে কেন জনগণ তাদের দলকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে, অন্যান্য দলের মতো তারাও তার সপক্ষে একটা ম্যানিফেস্টো প্রকাশসহ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে থাকে। তবে ক্ষমতা গ্রহণের পর যদি তারা ওই ম্যানিফেস্টো মোতাবেক সঠিকভাবে প্রদত্ত অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণই তাদের ভোটের মাধ্যমে সমুচিত জবাব দেবে। এটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি বিরোধী দলগুলোরও কাজ হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে সহনশীল গঠনমূলক সমালোচনাপূর্বক সরকারের যাবতীয় মন্দ কাজের সঠিক তথ্য-উপাত্ত ঘরোয়া পরিবেশে বা যথাসম্ভব জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে, সভা-সমাবেশ ও বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পালন করা। তাতে সরকার যদি কর্ণপাত না করে স্বেচ্ছাচারিতার পথে চলতে থাকে, তাহলে বিরোধী দল সভা-সমাবেশ ও বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করে পরবর্তী নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে তাদের পক্ষে জনমত গঠনের প্রয়াস চালাতে থাকবে এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু তার পরিবর্তে যদি জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে জ্বালাও-পোড়াওসহ প্রকাশ্য রাজপথে সহিংস আন্দোলনের ভূমিকা গ্রহণ করে, সেটা হবে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী অনাকাঙ্ক্ষিত অপরাজনৈতিক তৎপরতা।

অপরাজনীতি। কোনো দেশে যখন অপরাজনীতি খুব বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, আর দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং দেশ অস্ত্বিত্ব সঙ্কটের মুখোমুখী হয়, তখন অনিবার্য কারণে দেশ দেশের সেনাশাসনের অধীনে চলে যায়। যেটা পাকিস্তান আমলে, স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীসময়গুলোতে, সর্বশেষ গত ২০০৭ সালে দেশে উদ্ভূত রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত হতে দেখা গেছে। এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি না কোনো দলের জন্য, না দেশের জন্য, না জনগণের জন্য, কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। সেনাশাসন ব্যবস্থায় দেশের সংবিধান রহিত হওয়াসহ দেশে সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়ে যায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কবর রচিত হয়। এরপর অপরাজনীতি চর্চাকারীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হলেও দেশে আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাটা কতটুকু দুঃসাধ্যজনক হয়ে যায়, সে অভিজ্ঞতাও আছে এ দেশের মানুষদের ও রাজনৈতিক দলগুলোর। তাই দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে, দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে, জাতির ভষ্যিৎ প্রজন্মের স্বার্থে অপরাজনীতি চর্চা থেকে বিরত হওয়া যেমন মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব, তেমনি জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বও বটে। তাই দেশের সরকারি দল ও সকল বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের উচিত নিজেদের স্বার্থে, নিজ নিজ দলের স্বার্থে দলীয় কোন্দল, দলীয় মনোমালিন্য হেতু দল ভাঙন প্রবণতা, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাহীনতার পরিবর্তে বিশুদ্ধ মননশীল, সহনশীল ও গঠনমূলক রাজনীতি চর্চাকে প্রাধান্য দেয়া। ভোটারবিহীন বলা হোক বা যা-ই বলা হোক না কেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার হটানোর সকল চেষ্টা তো ব্যর্থ হয়ে মাত্র একটি বছরের মাথাতেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সময় এসে গেলো বলে, এ মুহূর্তে দেশের বিরোধী দলগুলোর উচিত সরকারবিরোধী সহিংস কোনো কর্মসূচির দিকে না গিয়ে সর্বান্তকরণে মরণপণ সাহস ও শক্তি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা। গোঁয়ার্তুমি বা অভিমানের কারণে বা একটি দলের পেশিশক্তি না হোক কৌশলের কাছে হার মানার ভয়ে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে যারা ওই নির্বাচনকে ভোটারবিহীন নির্বাচন বলে আসছে, তারা সেটা ঠিক করেছিল না বেঠিক করেছিল সেটা এখন বলাই বাহুল্য। তাদের এখনকার কর্তব্য হলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সর্বোচ্চ ও সর্বতো প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কথায় বলে ‘কেউ দেখে শেখে আবার কেউ ঠেকে শেখে’। এতদিনের কঠিন বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে কে কতটুকু শিখলো এবং সে শিক্ষাটা কতটুকু কাজে লাগাতে পারে— এখন সেটাই দেখার পালা। দেশের নিরীহ সরল মানুষদের রাজনীতি চক্রের গিনিপিগ না বানিয়ে সত্যিকার দেশপ্রেমী ও জনহিতকর রাজনীতি চর্চার পরিচয় দেয়ার এ সুযোগকে কোনোভাবে হাতছাড়া হতে দিয়ে আর যেন কেউ পরবর্তী সময়ে পস্তানোর মতো অবস্থায় না পড়ে এটাই হবে বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ সঠিক রাজনীতির কাজ। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা এ ব্যাপারটা সঠিকভাবে অনুধাবন করলে দেশ ও দেশের মানুষ অপরাজনীতির কবল ও প্রভাব থেকে মুক্তি লাভ করে রাজনীতিতে প্রবাহিতব্য সুবাতাসে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে এবং নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুস্থ রাজনীতি চর্চায় উৎসাহিত হবে।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...