মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, লকডাউন বর্তমানে অকার্যকর নিষ্ঠুর রসিকতায় পরিণত হয়েছে। চলমান লকডাউন যেন বেকার হয়ে পড়া কোটি কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে খাবারের অভাবে মারার অমানবিক হাতিয়ার। মহামারী ব্যবস্থাপনায় সরকারের উদাসীনতা ও বিজ্ঞানমনস্ক নীতি প্রণয়নে চরম ব্যর্থতার ফলে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
একদিকে অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগীর অকাল মৃত্যু, আইসিউ সুবিধার অভাব। হাসপাতালের চিকিৎসার জন্য ন্যূনতম বেড পাচ্ছে না এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও ওষুধের অভাবে জনগণের মধ্যে রীতিমত আতংকের সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সাংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
ভয়াবহ করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে চলমান লকডাউন চলাকালে দরিদ্র, দুস্থ ও কর্মহীন জনগোষ্ঠী অর্থাৎ দিন আনে দিন খায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, হকার, প্রান্তিক কৃষক এবং যেসকল নিম্নবিত্ত ইতোমধ্যে দরিদ্রের কাতারে নেমে পড়েছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের ঘরে রাখার প্রয়োজনে প্রত্যেককে অবিলম্বে এককালীন নগদ ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
আমাদের জিডিপির ৬-৭% অর্থাৎ বর্তমান ৬ লাখ কোটি টাকার বিরাট বাজেটের একটি সামান্য অংশ এ খাতে বরাদ্দ করলেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব। যা দরকার সেটা হলো সরকারের স্বদিচ্ছা ও আন্তরিকতা।
সরকারের অপরিকল্পিত ও অমানবিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত এদেশের কোটি কোটি ‘দিন আনে দিনে খায়’ মানুষের সকলের জীবনই স্থবির করে ফেলেছে। আমরা সকলেই জানি, যে কোনো দেশেই যদি প্রকৃত অর্থে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে এর ফলে যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথা পেটের জ্বালায় মানুষকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা অসম্ভব এবং তাতে লকডাউনের উদ্দেশ্যই ব্যহত হতে বাধ্য।
পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই লকডাউনে দরিদ্র শ্রেণীর জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার জন্যে কয়েক মাস ধরে লাগাতারভাবে সাপোর্ট দিয়ে গেছে। ইংল্যান্ডে লকডাউনের কারণে যারা বেতন পায়নি তাদের জন্য সরকার আইন করে সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও নাগরিকদের একাউন্টে আগে নগদ অর্থ জমা দিয়ে অর্থাৎ খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কার্যকর অর্থেই একটা অমানবিক সরকার, তা এবার কঠোর লকডাউনে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত সহায়তার অর্থের অংকেই বোঝা গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৭ জুন লকডাউনে দরিদ্র, দুস্থ, অসচ্ছল ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দিতে ৬৪ জেলার অনুকূলে মাত্র ২৩ কোটি ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও পরবর্তীতে আরো ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বলা হয়েছে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে মানবিক সহায়তা পাওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তিদের এই বরাদ্দ থেকে খাদ্য-সহায়তা দেওয়া হবে। যার মধ্যে থাকবে ১০ কেজি চাল, এক কেজি তেল, এক কেজি ডাল, পাঁচ কেজি আলু ও এক কেজি লবণ। মূল্য নির্ধারণ হিসেবে টাকার অংকে যা ১ হাজার টাকার মতো দাঁড়াবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।